BMV -25 Conscious & Subconscious Mind (The treasure house within you)
চেতন ও অবচেতন মন একই মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা দুটো সমাকৃতির অবয়ব,কিন্তু তাদের চিন্তাধারা ও কাজের পরিধি একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, অন্ততপক্ষে বিজ্ঞানীদের তাই মতামত। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা যা করে থাকি তারই একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটে আমাদের কর্মের বা চিন্তাধারার মাধ্যমে আর এই যুক্তিই হোলো চেতন মন।
অবচেতন মন হোলো কোনোধরনের যুক্তি ছাড়াই মনের গভীরের ইচ্ছের একটা অন্তর্নিহিত স্বপ্ন দেখা ও যতক্ষণ সেটা আয়ত্তাধীন না হয়ে ওঠে সেটাকে মনের গভীরে পোষণ করা।এই ইচ্ছে বা স্বপ্ন সেটা যদি প্রবল হয় অবচেতন মন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিক্ষনেই কি করলে সেটা পাওয়া সম্ভব।
হতে পারে সেটা অবিরাম চেষ্টা বা কর্মের মাধ্যমে হাসিল করা।অনেকটা শিশুর মত, যখন কোনো শিশু কিছু আবদার করে সেটা না পেলে প্রয়োজনে তার সমস্ত শক্তির একটা বহিঃপ্রকাশ করে মা বাবার উপর,ঠিক তেমনটাই।
চেতন মন সারাদিন কাজের পর যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে ও বিশ্রামের প্রয়োজন বোধ করে,তখনও নেপথ্যে যে মন কাজ করে চলে সে হোলো অবচেতন মন।সে একাধারে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদকম্পন, রক্তসঞ্চালন, বিশ্রাম, শরীরকে সতেজ ও জীবিত করে রাখা, রক্তচাপ সন্তুলান করা, সমস্ত কাজই করে থাকে। চেতন মন আমাদের মস্তিষ্কের শুধুই 10%ব্যবহার করে থাকে, যেখানে অবচেতন মন মস্তিষ্কের 90% ব্যবহার করে থাকে।
যাঁরা জীবনে সফল তাঁরা তাঁদের অবচেতন মনকে সারাটাক্ষন কোনো না কোনো ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন,দিনে প্রায় প্রতিটা মুহূর্তে সে কি হতে চায়, কতটা সফলতা পেলে সে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারে,সফলতার সিঁড়ি ছোটো ছোটো ভাবে কি করে পেরোতে হয়,আবার সেটা সম্পূর্ণ হলে পরের অধ্যায় টা কি হবে সেটা নিয়ে অবচেতন মনকে বলেন বা তাঁর সাথে বলা কথা এমনকি লিখেও রাখেন।
এটা অনেকটা মুনি ঋষিদের অবিরাম যোগের প্রয়াস,তাঁরা যেমন ইলা পিঙ্গলা কে জাগরণ করতে থাকেন তাঁদের আত্মার সাথে পরমাত্মার একটা মিলন ঘটাতে ও সিদ্ধিলাভের একটা ঐকান্তিক প্রয়াস থাকে মনে মনে, ঠিক তেমনটাই অবচেতন মনকে সুস্পষ্ট চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রতিটা মুহূর্তে জাগরণ করা সম্ভব,মানুষ যা হতে চায় তাঁর সম্পূর্ণ জীবনে।
কারণ অবচেতন মন এতটাই শক্তিশালী যা আমাদের কল্পনার ও ধারণার বাইরে, সনাতন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বেদ উপনিষদে এ সম্বন্ধে এক বিস্তৃত ভাবে বলাও হয়েছে।এমনকি বাইবেলে ও বিশেষ উল্লেখ আছে এ সম্বন্ধে।
“কেহতে হ্যা অগর সিদ্দত সে কিসি চিস কো দিল সে চাহো তো…..পুরি কায়ানাথ উসে তুমসে মিলানে কে কোসিস মে লগ জাতি হে” ওঁম শান্তি ওঁম এর এক বিখ্যাত ডায়লগ যা বাইবেল থেকে নেওয়া।
অবচেতন মনের আত্মার সাথেও একটা যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়, যদিও এ সম্বন্ধে কোনো কঠিন সত্যতা আছে কিনা জানা নেই ।এ যেন একটা শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা। যেমন অবচেতন মন যদি একজন ছাত্র হয়, আর মনের গতিবিধির একটা দিক নির্ধারণ করা সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষক হতে পারে। মনকে একাগ্রতার সাথে সুকল্পিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তাধারাই একজন শিক্ষকের ভূমিকায় কাজ করে চলে অবচেতন মন।
যাঁরা জীবনে অবসাদে, ব্যর্থতায় ভোগেন দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা চেতন মন নিয়ে সারাটাক্ষন নাড়াচাড়া করেন।যেখানে একটা ভীতি, একটা না পাওয়ার বা হওয়ার ভয় মাথায় চলতেই থাকে পুরোদমে আর অলক্ষ্যে সেটা গিয়ে পৌঁছয় অবচেতন মনে।
চেতন মন কম্পিউটারে সফটওয়্যারের ভাষায় অনেকটা প্রোগ্রামিং লিখে দেওয়ার মতো। যেখানে input যদি ইতিবাচক হয় সে ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব যা তৎক্ষণাৎ চলে যায় অবচেতন মনে আর আসে সাফল্য। আর যেখানে নির্বাচিত input ই ভুল সেখানে end result তো ভুল আসতে বাধ্য।
আমরা আমাদের সারাদিনে প্রচুর অমূলক চিন্তাধারা নিয়ে চেতন মনে নাড়াচাড়া করতে থাকি যা আমার বা আপনার চলার পথে কোনো ভালো যোগসূত্র হতে পারে না। হতে পারে সেটা মোবাইলে হোয়াটস্যাপ,ফেইসবুক, বা আপনার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এগুলোই হোলো আসলে আপনার সারাদিনের নির্বাচিত ভুল input।
তাই আমরা সাধারণ মানুষ হয়ে রয়ে যাই সারাটাজীবন, এগোতেই পারি না লক্ষ্যে যা আমাদের এগোতে তো সাহায্য করেই না উপরন্তু একটা ব্যর্থতার মায়াজালে আবদ্ধ রাখে সর্বক্ষণ।আর এখান থেকেই সৃষ্টি হয় কোথাও না কোথাও চেতন মনকে একটা সিগন্যাল দিয়ে দেওয়া, যেটা ভাবছে, বা করা হচ্ছে সেটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
চেতন মন সবসময় যুক্তি খোঁজে, যখন সে সেই যুক্তিটা পায় না, তখনই সে সেটা অবচেতন মনকে পৌঁছে দেয়।কিন্তু পৌঁছলো টা কি? হবে না বলে, একটা নেতিবাচক সিগন্যাল, আর সেখানেই আসে ব্যর্থতা। বেশিরভাগ মানুষের অসফলতার কারণ কিন্ত এটাই -তলিয়ে না ভাবা।
তাহলে কি করতে হবে প্রতিটা মুহূর্তে অবচেতন মনকে একটা পজিটিভ সংকেত পাঠাতে হবে, বারবার প্রয়োজনে হাতুড়ি পেটা করা বলা যেতে পারে। তাহলেই আমরা যে যা হতে চাই সেটা অনেকাংশেই সম্ভব।
এমনকি যখন আমরা কোনো কথা বলি একটা বাঁধা বা অন্তরায় এসে দাঁড়ায় আমাদের বলার মধ্যেও ও সেটা ধরাও পরে অনেক সময় সামনের লোকটির মাথায় ঠিক কি চলছে।
অনেকেই ঠিক এই flow chart এর ঠিক দ্বিতীয় ধাপ থেকেই শুরু করেন সেটা এতটাই প্রখর যে বলেই ফেলেন প্রকাশ্যে “আমি জানি আমার হবে না, কোনোভাবেই সম্ভব নয় , আর যেটা আমি নই, বা হতে পারবো না সেটা ভাববো কেন?- এই ভাবনা টাও তো অমূলক আমি বাস্তব কে নিয়ে ভাবি যা দেখছি,অবাস্তব নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। “
অথচ সেই আমি যখন অঙ্ক করতাম তখন খাতায় লিখে ফেলতাম অনায়াসে, suppose x=5 আর সেখান থেকেই অঙ্কের শেষ ও সঠিক সিদ্ধান্তে আসতাম।তখন সঠিক উত্তরের আশায় যদি এগোতে পারতাম, ঐ অবাস্তব কিছু ধরে যেমন x=5, তাহলে এখনও তো একই জীবনের সঠিক উত্তর খুঁজে চলেছি নিজের ভালো হবে বলে, সেক্ষত্রে কেন পারিনা?আসলে আমরা নেতিবাচক প্রোগ্রামিং করে অবচেতন মনকে সারাক্ষন পাঠাতে থেকেছি বহু আগেই আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা, তাই ভাবতেও কষ্ট হয়।
এই সীমাবদ্ধতার তালাও খোলা সম্ভব যা Nicola Tesla তাঁর বিখ্যাত বই 369 এ লিখে গেছেন, বারবার একই কথা বলেছেন । যা হতে চান, যা ভাবছেন লিখে ফেলুন খাতায় অনায়াসে, সফল হওয়ার এক সহজ চাবিকাটি ও হয়তো বা আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপ যা তাক লাগিয়ে দিতে পারে আপনার জীবনেও।
BMV-26 Nikola Tesla, A story behind the great scientist (Miracle numbers 3,6,9)
শুধুমাত্র একুশ দিনের অবচেতন মনকে বুঝিয়ে দেওয়ার একটা প্রয়াস।একটা প্রতিদিনের অভ্যাস করে তিন, ছয় ও নয় বার লিখে , সম্ভাবনা আছে পৌঁছে যাওয়ার আপনার লক্ষ্যে যদি বিশ্বাস করেন নিজের উপর এই লেখার মাধ্যমে।
Placebo Effect
একটা অনুমান ভিত্তিক গবেষণায় জানা গেছে একই বিশেষ ধরণের রোগ বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে আলাদা করে দুটো দলে বিভক্ত করা হয়।একদলকে ঠিক হওয়ার ভালো ওষুধ দিয়ে ও বাকি একদলকে একই রকম দেখতে চিনি মিশ্রিত ওষুধ দেওয়া হয়।
কিছুদিন পরে সেটা পরীক্ষায় ধরা পরে দুই দলেরই সুস্থ হওয়ার মাপকাঠি প্রায় একই রকমের।এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে ওষুধ দ্বিতীয় দলকে দেওয়া হয় সেটা কিছুই কাজ করেনি, কিন্তু তাঁদের অবচেতন মনে বিশ্বাসের জোর এতটাই প্রখর ছিল যে ঠিক ওষুধ পাওয়া গেছে ভেবে তাঁরা সুস্থ হয়েছেন।
When subconscious mind actually works….
যেমন আমাদের মন সব থেকে বেশি উৎফুল্ল ও প্রাণবন্ত থাকে সকালে। ঠিক তেমনই আমাদের অবচেতন মনকে প্রাণবন্ত রাখা সম্ভব ঘুমোনোর ঠিক পাঁচ মিনিট আগে।একটা ইতিবাচক মনকে আবারও মনে করিয়ে দিন আপনার অপূর্ণ ইচ্ছেকে আর ঘুমিয়ে পড়ুন নিশ্চিন্তে। পরের দিন ঘুম থেকে উঠলে আপনার চেতন মনকে অবচেতন মন ঠিক একই কথা মনে করিয়ে দেবে।
এ যেন কমার্স এর ঠিক closing balance ও opening balance এর মতো।মোট কথা শোয়ার আগে অবচেতন মনকে পজিটিভ চিন্তাভাবনা দিয়ে সেদিনের মত দিনটাকে ইতি করুন।
Magnetise your Subconscious mind by positive vibes
একটা লোহাকে যখন চুম্বকে পরিণত করা হয় সে তখন তার ওজনের বেশি দ্বিগুন কিংবা তিনগুন ভার বহন করতে পারে এটা আমাদের সকলের জানা।ঠিক তেমনটাই আমাদের অবচেতন মন কাজ করে শুধু প্রতিনিয়ত তাকে একটা সুস্পষ্ট দিক যদি দেখানো সম্ভব হয় তবেই সে অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে,আর আপনার ইচ্ছে শক্তিকে চুম্বকের মত আঁকড়ে ধরে রাখে যতক্ষণ না পর্যন্ত সঠিক দিশা পায়।
ঠিক যেমন একজন সফল ব্যক্তি নিজে তো পজিটিভ মাত্রায় ভরপুর থাকেনই, আর তাঁর সাথে যাঁরা থাকেন তাঁদের ও টেনে তোলেন সফলতার চুড়োই। যাকে বলে win win situation। Elon Mush, Bill gates, Sundor pichai,তাঁরা এই অবচেতন মনের সাথে প্রতিটা মুহূর্তেই একটা home work করে চলেন, আর এগিয়ে যান।
Let’s Nurture our Subconscious & Conscious mind
আমরা আমাদের মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ভেবেই চলেছি কখনোই বিরাম দেই না। এ এক বড্ড কঠিন কাজ, চেষ্টা করুন অন্ততপক্ষে দুই মিনিট কিছুই না ভেবে মাথার অপ্রাসঙ্গিক চিন্তাধারাকে স্থগিত রেখে চেতন মনকে বিশ্রাম দিতে।
দেখবেন পারবেন,কিন্তু বেশ কষ্ট হবে।আর ঠিক পাশেই অবচেতন মন হাঁফিয়ে উঠবে কারণ সে নিজেও অভ্যস্ত হয়ে গেছে আপনার আমার চেতন মনের বেশির ভাগ অপ্রাসঙ্গিক কথার ভাবনায়, তাই সেটাও যখন বন্ধ হয়ে যাবে একটা মস্তিষ্কের খালি খালি ভাব ও অনুভব আপনি করবেন।
একটা সময় অবচেতন মন অবাক হয়ে পড়বে কি হোলো আজ চেতন মন কোনো সিগন্যাল পাঠাচ্ছে না কেন?অবচেতন মন আপনার যুক্তিযুক্ত বা উদ্দেশ্য কে সফল করার জন্য রাতদিন চেষ্টা করে চলেছে ও প্রয়োজনে আপনাকে মনে করানো বা খাটানো তার কাজ,যাতে আপনি আপনার চাওয়া পাওয়া গুলোয় পূর্ণতা পান।
আপনি বা আমি তো সেখানে কোনোধরণের কম্যান্ডই দেই নি, পূর্ণতা পাবে কোথা থেকে? হ্যাঁ একজনকেই দিয়ে চলেছেন সে হোলো ইষ্টদেবতা। তাই উনি কখনো শোনেন আবার কখনো শোনেন না। আর চেতন মনে সারাক্ষন আজে বাজে জিনিসের পাহাড় করে দিনের শেষে হয় মাথা ভার ও অতি শীঘ্রই ক্লান্ত হয়ে উঠছি আমরা সকলেই।তাই আমরা প্রত্যেকে একটা সাধারণ মানুষের তকমা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই।
কখনো যদি সুযোগ হয়ে ওঠে কোনো অতিশিক্ষিত, বা জ্ঞানী ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসার দেখবেন তাঁরা প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ সময়েই অন্যমনস্ক থাকেন। দেখা গেছে তাঁদের এই অন্যমনস্কতার পেছনে তাঁরা অবচেতন মনের সাথে অবিরাম কথা বলে চলেছেন পাশাপাশি তাঁরা তাঁদের কাজেও একনিষ্ঠ।
তাই এখন থেকে চেষ্টা করুন প্রতিটা মুহূর্তে চেতন মনের ভুল চিন্তা গুলোকে যতটা সম্ভব সরিয়ে ফেলার যেমন ধরুন সাংসারিক কথাবার্তা ও অশান্তি, রাজনৈতিক মতভেদ, আড্ডার চুলচেরা বিশ্লেষণের এক ব্যাখ্যা, হোয়াটস্যাপ, ফেইসবুক প্রয়োজনে অতিরিক্ত বন্ধুবান্ধব।
ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে তো কখনোই নয়। মোটের উপর যা থেকে নিজের কোনো উপকার আসবে না শুধুই মগজের বোঝা বাড়বে তা থেকে দূরে থাকায় ভালো যতটা সম্ভব।
এর এক ও একমাত্র উপায় হোলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা, প্রয়োজনে একটার পর একটা কাজে ব্যস্ত থাকা, মনকে বলুন what next। এটা সুধা মূর্তি করে থাকেন বরাবর উনার থেকেই শেখা- “যিনি যত কর্ম ব্যস্ত,একটা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনের ক্ষেত্রে, তিনি ততই সফল”।