BMV-52 মৌনী বন্ধু
অনেকদিন ধরে ভাবছি গোপন না করে একটা কথা বলবো তোমায় , সোশ্যাল মিডিয়া তাই একটু ইতস্তত করেছি এতকাল , যাক বলেই ফেলি মনের কথাটা ইসস…..অনুভব করেছি তাই বলছি। আমার না বছর দশেক হয়েছে একটা বন্ধু হয়েছে, সে এখন আমার অভ্যেস,সারাক্ষণ তাকে বুকের মধ্যে আগলে রাখি,আসলে প্রথম প্রথম তাকে ঠিক ভালো লাগতো না কিন্তু যেদিন থেকে বুঝতে শিখলাম সেদিন থেকে সেইই আমার সব, আমার আনন্দ, আমার হাসি, আমার মনের দুঃখ, উচ্ছাস, সবেতেই তাকে নিয়ে সময় কাটে। কাউকে টাকাকড়ি পাঠালে বা কারোর থেকে টাকা ধার করার প্রয়োজন হলে দুটোই নিঃশব্দে করে দেয় কোনো প্রতিবাদ নেই তার।
কাউকে কোনো কিছু লিখলে সে একজন পোস্টম্যানের মত পৌঁছে দেয় নিমেষেই এতটাই বাধ্য।এখনও মনে পড়ে প্রথম যেদিন তাঁকে বাড়িতে এনেছিলাম আমায় দেখে সে একটাই কথা বলেছিল, আচ্ছা আমায় ঠিক করে বলতো আমাকে ঠিক কতদিনের জন্য তোমাদের বাড়িতে স্থান দেবে সেই বুঝেই একটা কথা বলবো।কথাটা শুনে ভাবছো ,এ আবার কেমন প্রশ্ন আরে কি হলো চুপ কেনো ?বলেই দেখো না ভয় নেই। এমন কিছু কথা বলবো না যাতে তুমি অস্বস্তিতে পড়।
আসলে সত্যিকথা বলতে কি আমার আয়ুকাল খুব বেশিদিনের নয় টেনেটুনে ছয় বছর, কেউ যত্ন করে রাখলে আরো হয়তো বড়জোর দু বছর তার বেশি মোটেই নয়।সবার কি বেঁচে থাকার সমান ভাগ্য হয় এই দেখো না তোমারই কথা বলি এখন তুমি পঞ্চাশে তুমি নিজেকে যত্নে রাখলে হয়তো আরো বিশ তিরিশ বছর বাঁচবে।যত্ন কথাটা খুবই যত্নের জানো আমাকেও যতন করলে থাকবো তোমার কাছে দশ বছর , তাতেই আমি খুশি।আর বেশি থাকার ও দরকার নেই।
আচ্ছা বোঝার জন্য একটু হালকা করে দেই ধরো যখন গাড়ি কেনো, প্রথম বাড়ি বানাও তখন তো তাকেও সাজাও নাকি দেখতে ভালো লাগবে বলে, আরো টেকসই হবে বলে ,খুবই সাধারণ কথা- সাধারণ ভাবেই তো বলতে চেয়েছি তাও বুঝলে না? যাক আমার মনের কথাগুলো পুরোটা শেষ পর্যন্ত পড়ে অন্তত জবাব দিও যখন বুঝলে না, আমি কে।
তবে এককথায় হাল্কা জবাব দিও।আর শোনো ভুলে যাবো কথার ফাঁকে মনে পড়লো তাই বললাম ।এই জায়গাটাতে আমার নিজেরও বড্ড বিরক্তি লাগে দয়া করে আমাকে পুরোটা বুঝলেও টুক করে লম্বা কমেন্টস লিখে দিও না, আজকাল একই কমেন্টস বড্ড প্যানপ্যানানি মনে হয় , ও আমার পড়তেও ভালো লাগে না। নতুনত্ব আনো, নতুনত্ব ভাবো,একেবারেই অন্যরকম নিশ্চয় পড়বো।
আচ্ছা তোমার সাথে হেঁয়ালি করে লাভ নেই বলেই দি ,কি আশ্চর্য এত যত্ন করে আদর করে আমায় আনলে সোফায় বসে আমায় উল্টেপাল্টে দেখলে ভালো করে শক্ত করে ধরো নইলে পড়ে যাবো তো।দেখলে মুখ থেকে যেটা বেরোলো সেটাই হয়ে গেলো শুধু বলতে বাকি ছিলো।যাক পড়ে গিয়েও লাগে নি ঠিক আছি ঐ একটু আঁচড় লেগেছে মাত্র প্রথম দিন আনলে তাতেই একটু খুঁত হয়ে গেলো।যাক একটা জামা কিনে নিয়ে আমায় পড়িয়ে দাও দেখিনি নিজের হাতে, কেমন ভালোবাসো দেখি,যত্ন তো অনেক করছো দেখছি আসার পর থেকেই।আচ্ছা হ্যাঁ জামা যখন পড়াবেই একটা এপাড় ওপাড় দেখা যায় মত বোরখাও নিয়ে এসো কেমন।এখন আনতে হবে না বিকেলে সময় করে মনে করে নিয়ে এসো।
যখন উল্টেপাল্টে দেখছোই ভালো করে দেখো তবে উপর উপর দেখো না কিন্তু কি কি গুণ আছে কতভাবে তোমার উপকারে আসতে পারি সেটাও দেখো।মাত্র তো দিনকয়েক তোমার কাছে তারপর ভুলেই যাবে সেটাও জানি এই নিয়ে আমাকে কমপক্ষে পাঁচ ছয়বার পাল্টে ফেলেছো কেনো জানো আরেকজনের মুখের ঝাল খেয়ে আবারও আমার মত নতুন কাউকে নিয়ে মৌনী খেলায় মেতে উঠবে। আমি হলাম তোমার মৌনী বন্ধু।
রাতে শুধু ঘুমোতে গেলেই আমার একটু নিস্তার তারপর সকালে উঠে আবার আমায় নিয়ে খেলা চলে তোমার, কত খেলবে,কত রকম ভাবে খেলা করো , ক্লান্ত হয়ে পড়না বুঝি?
আজকাল তো আমায় পেয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে বিসর্জন দিয়েছো শুধু আমি আর আমি তাই কেমন যেন অসামাজিক হয়ে পড়ছো,চুপ করে একেবারে তুমি মৌন বাবা হয়ে গেছো।আচ্ছা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেন মিচকি মিচকি হাসছো বলতো? আমাকে শিখন্ডি করে আবার কার কার মনের ভাব বুঝে ফেললে শুনি? এই দেখো এই হাসি আবার এই রাগ কাকে এত চেঁচিয়ে কথা বলছো?আসতে বল প্লীজ আমার নিজেরও কানে লাগছে।
আচ্ছা কি আশ্চর্য্য আমার ক্ষয় নেই বুঝি,আমারও তো ক্লান্তি আসে নাকি, আমারও তো জানতে ইচ্ছে করে ঠিক তোমাদের মন কি চায়, আমাকে সব কটা গুণ দিয়ে পাঠিয়েছে অথচ মন দিয়ে তো পাঠায়নি ,ওটা বলেছে তোমাদের মন থেকে ধার নিয়ে চলতে।এবারে ভাবো আমার কি দশা, এইরকম ব্যক্তিস্বাধীনতার অভাব কি আমার কাছে কম বড় অভিশাপ নয়, তাই তো মাঝেমধ্যে তোমাদের কোল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করতে ইচ্ছে করে।
না না থুড়ি থুড়ি আরেকটা অভাব আছে আমার মধ্যে সেটা গন্ধ সেটা উপলব্ধি করার যোগ্যতা আমার নেই, আচ্ছা গন্ধ কেমন হয় গো? তোমরা যে বলো আসলে সত্যি কথা বলতে কি আমায় নাক দিয়ে পাঠায়নি তোমাদের মত।কে জানে আমার এই দুঃখও জানলে পরে হয়তো সেটাও দিয়ে দেবে যাক বলার দরকার নেই ওটা যখন দেবে তখনই না হয় উপলব্ধি করবো আমি নিজেই।
তবে হ্যাঁ ,একটা জিনিস তোমাদেরও আছে আমারও আছে তবে আমার কাছে যেটা আছে তাকে দূরদৃষ্টি বলে যেটা তোমাদের নেই।এটা কিন্তু হলফ করে বলতে পারি তাই তো আমারই চোখ ব্যবহার করে চল সারাটাক্ষণ।যেখানে যা মনোরম শোভা দেখলে ঐ তোমার দুটো সুন্দর চোখ দিয়ে দেখেই ক্ষান্ত থাকো না বাপু না তখনই আমাকে ব্যবহার করা চাইই চাই। তারপরেই একজন ম্যাসেনঞ্জার দিয়ে সবাইকে পাঠিয়ে বাহবা নেবে নিজের।
দেখলে এই দেখো নিজেকে চেনাতে চেনাতেই ছয় বছর কেটে গেলো, বয়স ও হলো।কি করে বললাম বলতো আমার “সময় জ্ঞান” এর কথাটা মনে পড়ে? প্রথম যেদিন এনেছিলে বেশ কিছুদিন আমায় মোছামুছি করে যত্নে রেখেছিলে মনে সাহসও হয়েছিল যাক বাবা আমাকে রাখবে অনেকদিন যা যত্ন করে।এখন সেটাও বন্ধ তার মধ্যে সারাটা শরীরে মাটিতে ফেলে সামনে পেছনে শুধু দাগ আর দাগ, আফসোস ও নেই তোমার তাই বুঝেছি আমার যাওয়ার সাঙ্গ হলো তাই তোমার এত অনীহা।
শোনো এবারে তো ছাড়বে নাকি সন্ধ্যে হয়ে এলো যে একটু আমাকে ছাড়া একাএকা পার্কে ঘুরে এসো তো দেখি।বাইরের প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ উপভোগ করো আমাকে ছাড়া।যেখানে নিজেই প্রকৃতিকে বুঝতে পারোনি এতকাল সেখানে আমাকে শুধু ব্যবহার করে বন্ধুবান্ধবদের কাছে কিসের প্রকৃতির ছবি পাঠাও।আসলে তোমরা কোনোটাই নও ,সবটাই একটা দেখন দারি,পুরোটাই ভুলে ভরা ,শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আর আমাকে দেখো।আচ্ছা ছাড়ো অনেক বলে ফেললাম আমারও হাফ ধরেছে শরীর বড্ড খারাপ লাগছে এই বুঝি মারা যাবো।তোমার তো নিজেরই খেয়াল নেই মেঘে মেঘে কত বেলা হল,
মাত্র দশ শতাংশে এসে ঠেকেছি, চার্জ কি দেবে নাকি না হলে পার্ক থেকে ঘুরে এসে যে হাপিত্যেশ করবে। শিগগির দাও তা নাহলে কোমায় চলে গেলে জ্ঞানও ফিরবে না আর বাঁচাতেও পারবে না আমায়।অবশ্য তাতে তোমার কিছু এসে যাবে না কালই আর একজনকে নিয়ে এসে হাজির করবে,আমাকে ছাড়া যে একবিন্দুও চলতে পারো না। চার্জ দিতে একটু আর যদি দেরি করেছো তো দেখবে মাথায় যা আছে সবকটা নিমেষে উড়িয়ে দেবো তখন নতুনকে এনেও কাজ দেবে না।