The Terminal Man

BMV-49 MEHRAN KARIMI NASSERI (The Terminal Man)

                  !!  মেহরান করিমি নাসেরি। !!

জীবনে এমনও বহু মানুষ আছেন যাঁদের কেউ নেই,একা একা কখনো রেলওয়ে প্লাটফর্মে, বাসস্ট্যান্ডে, ফুটপাথে সারাটাজীবন কাটিয়ে দেন এমন মানুষ আমাদের সকলের অজানা নয়।কিন্তু এক নজির সৃষ্টি করা কাহিনী পৃথিবীর বুকে, আর একটাও হয়তো খুঁজলে পাওয়া সম্ভব নয়।যাঁর দেশ বলে কোনো কিছুই নেই, কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই, আজও বেঁচে আছেন প্যারিসের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল নম্বর একে, এক নজরবন্দি হয়ে যার নাম মেহরান করেমি নসেরি।

জন্ম ইরানে, ইরানের “মসজিদে সুলেমান” নামক এক জায়গায়।বাবা পেশায় ডাক্তার, মা নার্স,বাবা জন্মসূত্রে ইরানের বংশোদ্ভূত, মা স্কটল্যান্ডের অধিবাসী।জীবন চলছিল আর পাঁচটা মানুষের মতন স্বাভাবিক ছন্দে,স্নাতক করতে উনি অর্থাৎ নাসেরি চলে যান লন্ডনে সালটা ১৯৭৩ সেখানে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ ব্র্যাডফোর্ট।তিন বছর স্নাতক ডিগ্রি পাশ করে ফিরে আসেন আবারও দেশে অর্থাৎ ইরানে।

ইতিমধ্যেই যখন দেশে ফেরেন এক সাংঘাতিক অরাজকতার মধ্যে পড়েন নাসেরি।মুসলিম সম্প্রদায় ও অমুসলিম পরিবার যাঁদের তারা শাহী পরিবার বলে আখ্যা দেন তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়।শাহী পরিবারের বেশ কিছু যুবক সম্প্রদায় আন্দোলন শুরু করেন ও তাঁদের মধ্যে এই আন্দোলনে নাসেরি নিজেও যোগ দেন।আন্দোলন এতটাই তীব্রতা পায় যেটা সে দেশের সরকারের আইন বহির্ভূত।

ইরানি সরকার আন্দোলন রত বেশ কিছু শাহী পরিবারের ছেলেদের প্রথমে গ্রেফতার করেন ও পরে শমন জারি করে তাঁদের সেই দেশের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়, ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দেন।তাদের মধ্যে নাসেরির নামও উঠে আসে।যেহেতু নাগরিকত্ব নেই তাই যে কোনধরনের সুযোগ সুবিধে থেকে সম্পূর্ণ বহিষ্কৃত ও বিতাড়িত। একপ্রকার প্রশাসনের নজরবন্দি হয়ে থাকতে হয় সারাটাক্ষণ যে কটা দিন সেই দেশে থাকার অনুমতি পান। দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তবে যাবেন টা কোথায়?

ইতিমধ্যেই দ্বিধায় পড়েন কোথায় যাবেন কোন দেশ তাঁকে আশ্রয় দেবে।বহু দেশে আবেদনও করেন নাগরিকত্ব পাওয়ার, কিন্তু সবেতেই অসফল হন।অবশেষে বেলজিয়াম সরকার থেকে নাসেরি সাড়া পান রিফিউজি হয়ে সেই দেশে থাকার ও নাগরিকত্ব পাওয়ার।যেহেতু বেলজিয়াম ইউরোপীয় দেশের অন্তর্ভুক্ত এবং আগেও উনি লন্ডনে থেকেছেন তাই ঠিক করেন পরবর্তী জীবন লন্ডনেই কাটাবেন।

এখানে থাকতে কোনো অসুবিধে নেই যেহেতু লন্ডন ইউরোপীয় দেশেরই অন্তর্ভুক্ত, আর সেখানে ছাত্রজীবনে থেকেছেন তাই বিশেষভাবে শহরটিকেও চেনা। ১৯৮৮ সাল,২৬ শে আগস্ট নাসেরি রওনা দেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে প্যারিস থেকে। ইরান থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর বেলজিয়াম সরকার থেকে যে নাগরিকত্ব পান তা নিয়ে কিছুদিন উনি এই প্যারিস সহরে বসবাস করেন।

এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল বিপত্তি হলো প্যারিস থেকে লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে নামার পরই,কাহিনীর আসল সূত্রপাত ঠিক এখান থেকেই।বিমানবন্দরে নামার পরে পরেই উনার বেশ কিছু ব্যাগের মধ্যে একটি অতি মূল্যবান ব্যাগ চুরি যায় সেটা খুব সম্ভবত উনার কাছেই ছিল। ঐ মূল্যবান ব্যাগের ভিতরেই ছিল উনার পাসপোর্ট,ভিসা, ও বেলজিয়াম থেকে দেওয়া নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট।

বহু খোঁজাখুঁজির পরও যখন সেই ব্যাগ পেলেন না, বিমান কর্তৃপক্ষ তাঁকে সন্দেহের তালিকায় রাখেন, কর্তৃপক্ষ প্যারিসের সাথে যোগাযোগ করার পরেও কোনরকম তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ব অভিযোগও পেলেন না। যেহেতু কোনো সাজাপ্রাপ্ত পূর্ব আসামী নন তাই সেক্ষেত্রে লন্ডন বিমানবন্দরের প্রশাসন সিদ্বান্ত নেন পরের দিনই উনাকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হবে যেখান থেকে তিনি এসেছিলেন অর্থাৎ প্যারিসে।

লোকটির প্রথম থেকেই একটা অনুরোধ যেহেতু বেলজিয়াম সহ লন্ডন ইউরোপীয়ান দেশের মধ্যেই পড়ে তাই বেলজিয়াম সরকারকে অনুরোধ করলে উনারা নিশ্চয় বিকল্প আরেকটা নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট চাইলে ইস্যু করতে পারেন।সমস্ত ব্যাপারটার পুঙ্খানুপুঙ্খ জানানো হলো বেলজিয়াম সরকারকে উনারা রাজিও হলেন তবে একটাই শর্ত যাঁর সার্টিফিকেট খোয়া গেছে তাঁকে সশরীরে হাজির হতে হবে সেই দেশে।যেটা লন্ডন সরকারের নিয়ম বহির্ভূত।

পরের দিন নাসেরি আবারও ফিরে এলেন প্যারিসে। এখানে এসে আরেক বিপত্তি নতুন করে শুরু হলো।যেহেতু কোনোধরেনের নথিপত্র নেই তাই বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই অর্থাৎ প্যারিস শহরে।নাসেরির একটাই বারবার অনুরোধ যেদিন ঢুকেছিলেন এই প্যারিস বিমানবন্দরে সেদিন উনার সবই নথিপত্র ছিল সেটা প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ তাঁদের রেকর্ড অনুযায়ী দেখেও নিতে পারেন। কিন্ত সে সমস্ত সবই ঠিক ছিল যেহেতু কিছুই নেই এইমুহুর্তে তাই তাঁর বাইরে যাওয়ার কোনোরূপ অনুমতি নেই।

অগত্যা নাসেরির বিনা দোষে,একটা সামান্য ভুলে ঠাই হলো প্যারিসের টার্মিনাল গেট নম্বর একে।প্যারিসের গেট নম্বর এক ধীরে ধীরে হয়ে উঠলো তাঁর পাকাপাকি ভাবে থাকার অলিখিত ঘর। এদিকে বিমানবন্দরে যাঁরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন তাঁরা তাঁকে দিনে দুপুরে রাতে নিয়মিত খাওয়ার দাওয়ার সরবরাহ করার দায়িত্ব নিয়ে ফেলেন।এটা চলতে থাকে দীর্ঘদিন দেখতে দেখতে নাসেরির চারটা বছর কেটে যায় সেই একই জায়গায়। এই খবর এয়ারপোর্ট অথরিটি থেকে ফ্রেঞ্চ মিডিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

সেখান থেকে ফ্রেঞ্চ হিউম্যান রাইটস পর্যন্ত পৌঁছে যায়।এই খবর পাওয়ামাত্র সরকারি আদালত উকিল সকলে এলেন একে একে যদি কোনো ভাবে ঘটনার নিষ্পত্তি করা সম্ভব।ঘটনা কোর্ট অব্দি গেলেও কোর্ট একটা জায়গায় এসে আটকে যায় সেটা হলো উনার প্রথম দিন অর্থাৎ যেদিন প্যারিস এয়ারপোর্টে প্রবেশ করেন সমস্ত নথিপত্র লিগাল ছিল তাই এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই তাঁকে এয়ারপোর্ট থেকে বার করতে পারেন না অন্ততপক্ষে আইন তাই বলে। আবার যেহেতু সবকিছুই খোয়া গেছে তাই প্যারিস শহরে ঢোকার কোনধরনের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।অর্থাৎ পরিণতি এটাই, ঘটনা যা ছিল ঠিক সেখানে এসেই দাঁড়ালো।

এমন ঘটনা সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতেই রাতারাতি নসেরি হয়ে ওঠেন একপ্রকার সেলিব্রিটি।কেউ তাঁকে দোষী ভেবে দেখতে আসেন আবার কেউ দয়া ও করুণার চোখে দেখেন । সাধারণ মানুষ যাঁরাই প্যারিস যান তাঁরা গেট নম্বর এক দিয়ে একবার অন্তত ঘুরে যান।এমনকি বহু সাংবাদিক প্যারিস যান একমাত্র কারণে উনাকে দেখবেন বলে ও সাক্ষাৎকার নেবেন বলে।

বছরের পর বছর ঘুরতে থাকে সালটা এসে দাঁড়ায় ২০০৩ সালে। বছর পনেরো কেটে যায় অমীমাংসিত হয়ে ঐ একই জায়গায় নসেরির। ঘটনার খবর পৌঁছয় হলিউডেও ,এরপর সুবিখ্যাত ফিল্ম ডাইরেক্টর স্টিভেন স্পিলবার্গ নিজে সরাসরি আসেন নসেরির সাথে দেখা করতে। উনি সমস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সিদ্ধান্ত নেন নসেরির জীবন কাহিনী নিয়ে সিনেমা করবেন তাতে যদি কোনধরনের তাঁর আপত্তি না থাকে।

সেক্ষেত্রে স্পিলবার্গ তাঁকে আড়াই লক্ষ ডলারের একটা চেক ও দেন, টাকার অঙ্কটা নেহাতই কম নয় যথেষ্ট একজনের পক্ষে।পরবর্তী কালে সিনেমাও করেন ২০০৪ সালে সিনেমার নাম ” The Terminal Man” ।কিন্তু এই চেক নিয়ে ঠিক উনি অর্থাৎ নসেরি কি করবেন ?তাঁর কাছে এটা নেহাৎই একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়।যেহেতু কোনো নাগরিকত্ব নেই তাই সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাংকে গিয়েও একাউন্ট খুলতে পারবেন না তাই সেটা অর্থ হলেও অর্থহীন।

দেখতে দেখতে সালটা এসে পৌঁছল ২০০৬, অর্থাৎ আঠারো টা বছর কেটে গেলো সেই একই জায়গায়। একদিন উনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবারে খুবই মুশকিলে পড়লেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ,কি করা যায় ?এবারে তো তাঁকে প্যারিস শহরে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে কিন্তু নেবেন কিভাবে সেটা যে আইন বহির্ভূত।ফ্রেঞ্চ রেড ক্রস সোসাইটি হাসপাতালের সমস্ত খরচপাতির দায়ভার নেন।

অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে প্রায় তিনমাস সময় লাগে।এরপর সুস্থ হয়ে যখন ফেরেন তখন আবারও তাঁকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয় থাকবেন কোথায় আবারও এয়ারপর্টে একই জায়গায়।ফ্রেঞ্চ রেড ক্রস সোসাইটি এবারে এগিয়ে আসেন নসেরির জন্যে এয়ারপর্টের কাছেই একটা হোটেলে রাখা হয় আর তদারকির জন্য দায়িত্বভার নেন যে উনি সারাটা জীবন হোটেলের বাইরে কোনোদিন বের হতে পারবেন না।

আনুমানিক তিনমাস এই হোটেলে থাকেন। এরপর ৬ই মার্চ,২০০৭ সাল প্যারিসের এক চ্যারিটি রিসেপশন সেন্টার তাঁরা নসেরিকে হোটেল থেকে বার করার দায়িত্ব নেন ও প্যারিসের এক আবাসিক বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেন। সেখানে বসেই উনি বই লেখেন,পড়াশুনো করেন আজও বেচেঁ আছেন তবে গৃহবন্দি হয়ে।

এমন বিরল ঘটনা সত্যিই হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।তবে এটাই অবাক লাগে দেশে বিদেশে সমস্ত জায়গায় আইন আছে, শুনেছি আইনের ফাঁক ও আছে সেক্ষেত্রে কোনো কি ফাঁক খুঁজে পাওয়া গেলো না অন্ততপক্ষে মানবিকতার খাতিরে। সে নিজে তো দোষী নয়, খুনি কিংবা দাগী আসামি নন তবে কি ঈশ্বর এমন নজির গড়বেন বলেই কি এমন শাস্তি দিলেন যা একটা উপমা হয়েই রয়ে গেলো।

 

 

Comments

April 14, 2022 at 6:09 am

I must thank you for the efforts youve put in penning this site. I am hoping to check out the same high-grade blog posts by you in the future as well. In fact, your creative writing abilities has motivated me to get my very own blog now 😉



Comments are closed.

BMV-48 CAFE COFFEE DAY

February 5, 2022