castle in the air

BMV-48 CAFE COFFEE DAY

এক শিহরণ জাগানো, আমার এজন্মের হয়তো সেরা ঘটনা বললেও কোনো অত্যুক্তি হবে না। বহু বই, বহু সংবাদ মাধ্যম,  ইউ টিউবের ঝাঁ চকচকে নানান সংবেদনশীল ও মোটিভেশনাল কথাবার্তা হয়তো আমরা সকলেই শুনেছি কিন্তু এই ঘটনাটা হয়তো শতাব্দীর সেরা সত্য কাহিনী বছরের শুরুতেই যা অন্য কাহিনীর থেকে একেবারেই ভিন্ন এযাবৎ কালে। পুরস্কার পাওয়ার মতো এমন ঘটনা,মনকে ছুঁয়ে যাওয়া কিছু শিক্ষা নেওয়া সকলের জন্য।

এমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম আমাদের কারোরই অজানা নয়।আমরা ছোটো করে বলতে শিখেছি সবেতেই তাই সি সি ডি নামটা বলতে আমরা যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আবার চিনতেও পারি সহজেই।এমন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার V G Siddhartha Hegde।

স্বপ্ন দেখেছিলেন একটাই মানুষজনকে কফি খাওয়াবো নানান প্রক্রিয়ায়,নানান স্বাদে তবেই তো জীবনের সাফল্য।লোকে আসবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাবেন তাঁর ঝাঁ চকচকে সুসজ্জিত রেস্তোরায় কফির চুমুকে প্রত্যেকের নানান স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।নিজের স্বপ্নের সাথে অন্যের স্বপ্নও বাস্তবায়িত হবে এটাই তো সি সি ডির মূল উদ্দেশ্য।

প্রেমিক প্রেমিকারা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে নিজেরা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, নতুন ব্যবসায়ীদের মনে সাড়া ফেলবে এক যৌথ ভাবে নতুন উদ্যমে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ার ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ  হবেন হয়তো তাঁরই এই সি সি ডি তে, হয়তো মাট্রিমনি থেকে ছেলে মেয়েদের প্রথম দেখার ও তাঁদেরই আত্মীয়স্বজনদের একটা প্রীতির সম্পর্কের আঁতুড় ঘর হয়ে থাকবে এই জায়গাটা। হেগরে সাহেব একটার পর একটা এমন কফি খাওয়ানোর পান্থশালা তৈরি করে চলেছেন দেশের বিভিন্ন নামিদামি জায়গায়,শুধুমাত্র স্বপ্ন নয় , বহু মানুষকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও প্রস্তুতি।

কে জানে হয়তো মান্না দের সেই বিখ্যাত গান উনাকেও মনের গভীরে সাড়া জাগিয়েছিল একটা সময়ে “ কত স্বপ্নের রোদ ওঠে এই কফি হাউসে, কত স্বপ্ন মেঘে ঢেকে যায় কতজন এলো গেলো কতজনই আসবে, কফি হাউসটা শুধু থেকে যায়”। প্রথম দিকে সাড়াও পেলেন,যুব সমাজ থেকে শুরু করে যত আবালবৃদ্ধবনিতা পর্যন্ত, কিন্তু মুনাফা যেটা পেলেন সেটা যৎসামান্য ।

সমস্ত ব্যবসায় বেশির ভাগ পুঁজি আসে ব্যাংক থেকে ঋণ করে কিন্তু একদিন এই ঋণের বোঝা এসে দাঁড়ায় পাহাড় প্রমাণ, সুদের অঙ্কটাও বাড়তে থাকে ততোধিক,২০১৯ সালে সেই ঋণের বোঝা সুদ ও আসল সমেত এসে পৌঁছায় প্রায় আনুমানিক ৭২০০ কোটি টাকা।দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা স্বপ্নের কফি হাউসগুলো নিমেষেই পরিণত হলো “ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে নিশুতি রাত গুমরে কাঁদে” মুখ থুবড়ে পড়লেন হেগরে বাবু নিজে।

আর্থিক ও মানসিক ভাবে একেবারে পর্যুদস্ত, পাওনাদার ব্যাংকের কাছে মুখ দেখানোর জায়গা থাকলো না তাঁর।পালিয়ে বেড়িয়েছেন সারাক্ষণ।স্ত্রী মালবিকা হেগরে ছায়ার মতন যদিও থেকেছেন প্রথম থেকেই এক ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার হয়ে তাঁরই পাশে কিন্তু উনি নিজেও নিরুপায়।হয়তো মনের গভীরে স্বামীর থেকেও অনেক বড় স্বপ্ন নিজেও দেখে ফেলেছেন সোনার কেল্লা গড়বেন বলে।কিন্তু স্বামীকে বুঝতেও দেননি মনে একটাই আশা শেষটা দেখবেন হার মানতে রাজি নন।

মন শুধু একটাই কথা বলে  “হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার আমার অন্য গানের ভোরে”।স্বামী শেষমেশ পারেননি মনের কাছে দ্বন্দ্বে তাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন স্ত্রীর হাতটাকে আগলে ধরতে,দুটো সন্তানকে আগামীতে স্বপ্ন দেখাতে, স্বপ্নের ফানুসের সুতো ছেড়ে দিয়েছেন দিগন্ত নীলাকাশে, একটা সময় জীবন থেকে পালিয়ে গেছেন।

২০১৯ সালের জুলাই মাস স্ত্রীর সাথে মাঙালোর শহরে গাড়ীতে আসতে আসতে পথে গাড়িকে দাঁড় করান ও বলেন তুমি এগিয়ে যাও পথে আমার কাজ আছে জরুরি কাজ।শহরের পথেই এক ব্রিজ সেখান থেকে ঝাঁপ দেন চিরদিনের মতো সবাইকে ছেড়ে, দেহ পাওয়া যায় তিন চারদিন পরে এক ভেসে থাকা পঁচা গলা ভাসমান লাশ হয়ে।

“Show must go on” জীবন চলুক ধন্ধে নয়, একটু আরও নতুন উদ্যমে মোড় নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছন্দে।ফিরে দেখা, ফিরে পাওয়ার লড়াই তাও আবার করোনা পরিস্থিতিতে। মালবিকা দেবী ফিরলেন নতুন উদ্যমে নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে।ঋণের বোঝা মাত্র দুই বছরে ৭২০০ কোটি অঙ্কের থেকে নামিয়ে আনলেন মাত্র আনুমানিক ১৭০০ /১৮০০কোটি টাকায়।

যদিও অঙ্কের মাত্রাটা কখনোই মাত্র নয়,তাও প্রায় ৫৪০০ কোটি টাকা দুই বছরে পরিশোধ করতে পারলেন এত বড় ঋণের বোঝা কমানো তাও আবার এমন করোনা কালে, এরজন্য চাই বিপুল মানসিক শক্তি, আরো বেশি ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগানো,নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, স্বামীর বিলিয়ে দেওয়া নীলাকাশে ফানুসের সুতোকে খুঁজে বার করে আবারও কেল্লা গড়ার স্বপ্ন।

মালবিকা  হেগরে ঠিক কি শিক্ষা দিলেন সকল প্রজন্মের কাছে  করোনাকাল এগুলো হয়তো সাময়িক আসবে যাবে কেউ মারা যাবেন কেউ যুঁঝবেন কিন্ত তারই মধ্যে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে সেটা কিছু হওয়ার ,কিছু করে দেখানোর লড়াই।আমরা এই দুই বছরে সবই করেছি কোনোটাই ছাড়িনি ধরে রেখেছি শুধুই অহেতুক অযাচিত মৃত্যু ভয়।

যে যেই পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন স্বপ্ন ও সংকল্পটাই যদি সত্যি অর্থে অতি বৃহৎ হয় সেখানে আর যায় হোক মৃত্যু নিজেও এসে থমকে দাঁড়ায় অনেক ক্ষেত্রেই।জীবনে যাঁর যেটুকু স্বপ্ন আছে সেটা দেখতে হবে আরো বেশি দুই বা তিন গুণ বেশি, জীবন একটাই তাই স্বপ্ন বেঁচে থাকুক স্বমহিমায় টগবগিয়ে ,অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা, জীবনের ওলটপালট পরিস্থতিতে নিজের কাছে নিজের পরীক্ষার,কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকলেও প্রতিজ্ঞা থেকে স্বপ্ন থেকে একচুলও আমরা সরে না পড়ি।

কথায় বলে “ যো জিতা ওহি সিকন্দর” আর আমি বলি “ জো হারা ওহ -ছুছুন্দর” সবটাই ভাবের খেলা ।কোন ভাবে আপনি ডুব দেবেন, মনের সাথে ভাবের নাকি বাইরের ভাবের সাথে তাল মেলাতে।সেটাতে পিচ্ছিলতা যে বেশি অদম্য ইচ্ছে, প্রাণ শক্তিকে নিংড়ে ছিবড়ে করে দেখারই হয়তো আরেক নাম সি সি ডি।ঈশ্বরের কাছে কামনা একটাই মালবিকা দেবী জীবন যুদ্ধে শুধুই জয়ী হোক তা নয় ,একটা নজির হোক সকল প্রজন্মের কাছে শুধুই উপমা হয়ে নয়, প্রতিদিনের একটা ভোরের শপথ ও জ্বলন্ত সংকল্প হয়ে।

ডক্টর আবুল কালাম বলেছিলেন “জীবনে সফল মানুষের কাহিনী জানতে যেও না,জীবনে অসফল মানুষ কি করে সফলতার চরম শীর্ষে পৌঁছান তাদের কাহিনী জানার চেষ্টা কোরো”, বিশ্বাস করুন বহু খুঁজেছি,একজনকেও পায়নি ঠিক মনের মত।এতটা দিন সময় লাগলো, মনকে ছুঁয়ে গেলো বছরের শুরুতেই যেটা সারাজীবনের এক আদর্শ ও পাথেয় হয়ে থাকবে।মন আগামীতে কখনো বিষণ্ণতায় ভরে গেলে এটাই ভাববো জয়ী হতে হবে আর শপথ নিলাম নিজেও “never ever give up”।

Comments

April 14, 2022 at 6:09 am

I must thank you for the efforts youve put in penning this site. I am hoping to check out the same high-grade blog posts by you in the future as well. In fact, your creative writing abilities has motivated me to get my very own blog now 😉



Comments are closed.