BMV-46 মিছকানি
২৫/০১/২০২২
বন্ধুবরেষু মিছকানি,
তোমায় আবারও করে পেতে সময়টা লেগে গেলো প্রায় আটচল্লিশটা বছর। ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে জানিয়েছি আগেই তুমি আসছো, শুধু অপেক্ষায় ছিলাম পথে আসতে যেটুকু দেরি। মিছকানি তুমি জানো এই কয়দিন বাড়ির সামনে যখনই বাইকে করে কোন ডেলিভারি বয় এসেছে, ছুট্টে গেছি,বাড়ির সামনে এসে থমকে দাঁড়াতেই ছোটোবেলার মত জিজ্ঞাসা করেছি নির্দ্বিধায় আচ্ছা আমার কি কিছু এসেছে নাকি,একটা জিনিষ আসার ছিল জানেন,কাউকে কি খুঁজছেন? সে কি বললো জানো? সে বললো হ্যাঁ ঠিক তাই আচ্ছা ১১৭/৩ নস্কর পাড়া রোড,কলকাতা ৭৫ ঠিক কোন বাড়িটা বলতে পারেন।আমি নিজেকে ইচ্ছের খুশিটাকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললাম ঠিক এখন থেকে তিনটে গলির পর আপনার ঠিকানাটা। পরক্ষণেই মনের দুঃখে ঘরে ঢুকে পড়লাম। বিকেল বেলায় একটু বাড়ির বাইরে বেড়িয়েছিলাম কাজে জানি সেই সময় কোনো ডেলিভারি বয় আসবে না, কোনোদিনও তো আসেনি আজই বা আসবে কেনো। বাড়িতে ঢুকতেই মেয়ে একগাল হাসি দিয়ে দরোজা খুললো,কিছু বুঝলাম না উপরে আসতেই দেখি আমার টেবিলের উপর রাখা একটা প্যাকেট। সেই ঘরে ঢুকতেই বুঝতে এতটুকু দেরি হলো না পরিচিত সেই তোমার থেকে পাওয়া বাল্যকালের চেনা সেই ঘ্রাণে।এমন ঘ্রাণ, এমন গন্ধ এতটা বছর কোনোদিনও পায়নি তবে ক্রমশই খুঁজেছি। চোখ দিয়ে যেন আনন্দাশ্রু বেড়িয়ে আসতে লাগলো মাটিতে পা দুটো ভাঁজ করে কিছুটা টেবিলের দিকে ঝুঁকে পরিচিত ঘ্রাণের আরো সান্নিধ্য হলাম চোখ দুটো বুজে গেলো নিমেষেই।ফিরে গেলাম আমার হারানো শিশুকালে কেউ বুঝবে না,কাউকে বোঝাতে পারবো না মিছকানী কতখানি সখ্যতা ছিল তোমার ও আমার।দিদিদের অঙ্কের খাতা, নিজের প্রায় সমস্ত খাতা বিক্রি করেছি,গরুর গাড়ির থেকে ধান চুরি করেছি কতবার একাধারে, শুধুই তোমায় পাবো বলে। বিক্রেতা খবরের কাগজে সযত্নে ভাঁজ করে দিত তোমায় আমার ছোটো ছোটো হাতে।অল্প একটু গুড়ো মুখে দিয়ে বাকিটা ঢুকিয়ে ফেলতাম গেঞ্জির ভেতরে বাবার ভয়ে,যদি জানতে পারে খোকা টাকা কোথায় পেলি।তারপর খুশির ছুট, দামাম এক বালকের ছুট,উদ্দেশ্যবিহীন ছুট, মাতোয়ারা হয়ে তোমাকে পেয়ে আনন্দের ছুট মাটির রাস্তা দিয়ে বাঁ হাতে আমার মেলায় কেনা তালপাতার সেপাই সেটা এখনো আছে, দেখাবো তোমায়, আর ডানহাতে হাওয়ার সজোরে ঘুরতে থাকা কাগজের চরখি, গাল ভর্তি মুখে খুশিতে,আনন্দে মাতোয়ারা তুমি মিচকাণী।একদিন মনে আছে সেলুকাসদের বাড়ির সামনে ছুটছি একটা বাছুর আমায় দেখে সে ও ছুটছে। ছুটতে ছুটতে ভয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম আর গেঞ্জির ভেতর থেকে তুমি বেরিয়ে এসে রাস্তার ধুলোতে মিশে গেলে মুহূর্তে। বাছুরটা সে নিজেও দাঁড়িয়ে পড়লো আর মাটিতে পড়ে যাওয়া তোমাকে খেতে শুরু করলো আমার সামনেই।পায়ে চোট লেগেছিলো তার থেকেও বেশি চোট পেয়েছিলাম তোমায় মুহূর্তে হারিয়ে। হাত পা মাটিতে ছড়িয়ে কেঁদেছি কত শুধু তোমায় পাবো বলে,এতটুকুই তো চাওয়া ছিল আমার শিশুকালে। সেদিন বড়দি আর ছোড়দি আমার অমন কান্না দেখে ছুটে এসেছিল বলেছিল ভালোই হয়েছে পড়ে গেছে রোজ রোজ খাস না ভাই পেছন চুলকোবে। জানো আজ তারা কেউই নেই বলার মত আছি শুধু আমি আর তুমি এক স্মৃতি আগলে একে অপরকে আগলে।কোনোদিন আর এজন্মে দেখা হবে না এটাই শেষ বারের মত দেখা আবারও হয়তো হবে সেটা যদি না হয় পরজন্মে।ইসস ছি ছি টেবিলের সামনে বসে তোমার ঘ্রাণ নিতে নিতে ঘুমিয়ে পড়েছি কখন এতক্ষণ শিশুকালের দিবাস্বপ্ন দেখছিলাম।
ভালো থেকো মিস কানি তোমায় মিস করবো বাকি জীবনটা অনেকখানি,
ইতি তোমারই ছেলেবেলার সাথী,
অপেক্ষা।