BMV-21 The man with the only hand – “KAROLY TAKACS”
Goal is a point, where Volition works as acute pointer
লক্ষ্য যেখানে সুনিশ্চিত ও স্থির, স্বপ্ন যেখানে বাস্তবের চেয়েও কঠোর সংকল্পে ভরা, সময় ও পরিস্থিতির কাছে প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন যেখানে প্রতিবন্ধক নয় , আর উদ্দেশ্য যেটা বারে বারে নতুন সৃষ্টি কে ঘিরে ঐতিহ্য গড়ে, রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় মত্ত, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া এই মহান নিশানাবাজ ব্যক্তিত্বের নাম ক্যারোলি তাকাস।পদবীর সাথে এক অদ্ভুত মিল “তাক লাগিয়ে দেওয়া”।
21শে জানুয়ারি, 1910 সালে হাঙেরীর রাজধানী বুদাপেস্টে জন্ম ক্যারলির। জীবন একটাই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলো সেদিন ক্যারোলির, বন্দুকের গুলির নিশানা এতটাই accuracy থাকবে যে আজীবন যেকোনো প্রতিযোগিতায় এমনকি আমৃত্যু পর্যন্ত স্থির থাকবে এই নিশানা।
দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাফল্য হয়তো বারবার এসে ধরা দেয় না বড়জোর একবার বা দুই তিনবার। কিন্তু এহেন ব্যক্তিত্ব তাঁর নিশানা ও মনের একাগ্রতা কে যেন এক সূত্রে বেঁধে দিয়েছিলেন আজন্ম কাল অব্দি। স্বয়ং অর্জুনের লক্ষ্যভেদ কেও হয়তো বা ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর সংকল্পের চিত্রটা।
“Hope lies in dreams, in imagination, and in the courage of those who dare to make dreams into reality”-Jonas Salk
ক্যারোলি ছিল হাঙেরীতে সেনাবাহিনীর একজন জওয়ান।1938 সালে জীবনের দুটো কাহিনী,মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো তাঁকে পুরোদস্তুর। এক, সে নিজেকে প্রমান করে দিয়েছিলো সেই বছর ন্যাশনাল গেমস এ, যে সে আগামী পৃথিবীর কাছে নিশানায় একজন ত্রাস সৃষ্টিকর্তা হতে চলেছে।
দুই, স্বপ্ন যেখানে হাতছানি দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে দেয়, সেখানে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য হয়তো ঈশ্বরও প্রমান খোঁজেন, সে কতটা অবিচল তাঁর এই লক্ষ্যে। তাই সেনাবাহিনী তে হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়ার সময় সেই বিধ্বংশী বোমা ফেটে যায় তাঁর হাতেই আর ডান হাত পুরোটাই বাদ পরে যায় সারাজীবনের জন্য।
যেই হাতে নিশানার অনুশীলন চলে ছিল এতকাল ধরে,সেই সংকল্প চুরমার হয়নি, দ্বিতীয় সংকল্প আরো বলিষ্ঠ হয়ে স্থির লক্ষ্যের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো তাঁর নিজেরই -বাম হাত।
অবচেতন মনকে তো বহু আগেই বলে দিয়েছিলো “আমি ক্যারোলি তাকাস পৃথিবীর একজন সেরা নিশানাবাজ, যা একদিন ইতিহাস হয়ে পৃথিবী আমাকে মনে রাখবে, একজন সেরা suiter হিসেবে”।
Action speaks million times truth, than words
একজন অসামান্য লোক যা চলে গেছে সেটা নিয়ে হয়তো ভাবেন সাময়িক, কিন্ত ছন্দে ফেরেন আবারও এটাই তাঁদের এক বৈশিষ্ট,তাই তাঁরা ইতিহাস রচনা করে যান।
1938 সালের ঘটনার ঠিক এক মাস পরে নিজেকে ছন্দে ফিরিয়ে আনেন তাঁর বাঁ হাত দিয়ে লক্ষ্য স্থির করার অবিরাম প্রয়াস, অনুশীলন চলে টানা একটা বছর।কারণ পরের বছরই 1939 এর ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার জন্য যা হাঙ্গেরী তে অনুষ্ঠিত হবে।
1939 সালে সেই ঐতিহাসিক দিনে তাঁর কাছে অনুতাপ ও অনুশোচনার ঝুড়ি নিয়ে আসেন ক্যারোলির সাথীরা অর্থাৎ নিশানাবিদেরা সমব্যথি হতে যে সে এরপর তাঁদের সাথে আর কোনোদিন এই নিশানায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এই ভেবে।
সামান্য হেসে উনি উনার ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ ঘটান, এরপর থেকে উনি সমস্ত খেলায় অংশ নেবেন তাও আবার তাঁর বাম হাত দিয়ে। আর এই ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও তিনি প্রথম স্থানাধিকারী হন। ও সকলের কাছে অসামান্য নজির সৃষ্টি করেন।
“It is during our darkest moments that we must focus to see the light”
1940 সালে অলিম্পিকে অংশ নেবেন, তাই মন দিয়ে অনুশীলন, ও রাতদিন অবিরাম প্রয়াসে লেগে পড়েন। কিন্ত বাঁধা এসে দাঁড়াল বিশ্বযুদ্ধ, আর সেই বছর অলিম্পিক আর হোলো না, ঠিক একই কারণে পরের বছর অর্থাৎ 1944 সালে আবারও অলিম্পিক সম্ভব হোলো না।
টানা এই চারটে বছর একদিকে যেমন ক্যারোলি মনের হতাশায় যুজছিলেন, আবার সেই হতাশায় তাঁকে আরো মজবুত করে দিয়েছিলো আরো আরো অনুশীলনের প্রয়োজন আছে হয়তো। তাই বারে বারে নিজের লক্ষ্যের প্রয়াসে এগিয়ে গেলেও বাঁধা।
ঈশ্বর হয়তো ক্যারোলির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন। যেখানেই সাময়িক বাঁধা সেখানেই হয়তো বা বিরাট সাফল্য লুকিয়ে আছে অপেক্ষা শুধু সময় ও ধৈর্য্যের।
Journey of achievement is much more sweeter, when Achiever recalls
বিশ্বযুদ্ধ থেমে গেছে, মনের ঐকান্তিক আগ্নেয়গিরির যুদ্ধ, আরো যেন টগবগে হয়ে ইচ্ছেশক্তিকে মাতাল করেছে মনের গভীরে। টানা দশটা বছর অপেক্ষা একজন মানুষের মনের গভীরের অপেক্ষা সেই 1938 সাল থেকে যখন তাঁর বয়স মাত্র আঠাশ বছর।
যেকোনো খেলোয়ারের একটা চরম সময় সীমা থাকে তাঁরই মধ্যে তাঁকে প্রমান করে নিতে হয় তাঁর সাফল্যের উর্ধসীমা।1948 সালের এই অলিম্পিক যখন তাঁর বয়স আটত্রিশ বছর ক্যারোলিকে আবার করে পৌঁছে দেই সেই প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে। উনি প্রমান করে দেন বয়সটা মনের, তাই সেই আঠাশ বছরের শিশুটাকে মনে প্রাণে লালন করতে থাকেন।
থেমে থাকেননি এখানেও পরের অলিম্পিক 1952 সালে আবারও চরম শিখরে। কেনই বা হবে না, অবচেতন মনে তো ক্যারোলি লিখে দিয়েছিলেন সেই 1938 সালে সংকল্পের কথা, যেদিন তাঁর হাত চলে গিয়েছিলো। তাই এতকাল নিজে পরিশ্রম করেছেন,আর এর পর থেকে অবচেতন মন তাঁর হয়ে তাঁকে নেপথ্যে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
Pinpoint target is the ultimate derivative of goal
উপরের বইটি অবচেতন মনের ক্ষমতার এক বহিঃপ্রকাশ। যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা তাদের জীবন শুরু করছে একটা ইতিবাচক স্বপ্ন নিয়ে তাদের অতিঅবশ্যই এই বইটা পড়া উচিৎ।
subconscious mind এতটাই ক্ষমতার অধিকারী যার কেবলমাত্র এক শতাংশ ব্যবহার করলেই আমরা অনেকেই আমাদের ইচ্ছেশক্তি হাসিল করতে পারি অতি সহজেই। এর প্রমান স্বয়ং Einstein, তাঁর এই ব্যবহার উনি করতে পেরেছিলেন মাত্র 4.8% শতাংশ।
এক্ষেত্রে খুব সহজেই একটা পদ্ধতির কথা বলেন অবচেতন মনকে জাগানোর Nikola Tesla তাঁর বই এ 369। জীবনে যা হতে চান লিখে ফেলুন অকপটে খাতায় যথাক্রমে তিন, ছয় ও নয় বার প্রতিদিন। হয়তো power of attraction কিছুটা হলেও কাজ করে এক্ষেত্রে আপনি যা হতে চান।
“The past is never dead and -buried”-Faulkner
একটা ইতিহাস রচনা করেছিলেন ক্যারোলি, যা নেই তাই নিয়ে সারাক্ষন মনের কাছে আফসোস একজন সাধারণ মানুষের আর এটা ভাবতে ভাবতেই জীবনের বেশির ভাগটা হারিয়ে ফেলেন।
ক্যারোলি নিজেও অজুহাত দেখাতে পারতেন তাঁর ডান হাতের খুইয়ে দেওয়া কাহিনী দিয়ে, তাই হয়তো উনি অসামান্য একজন নিশানাবিদ হয়ে আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে গেলেন। অনেকটা চেষ্টাতেই আসে আরো বেশি সাফল্য। এটাই বাস্তব।