DESTINATION

BMV-32/9 পৌঁছ সংবাদ (শুভ সুমেধার নবম ভাগ)

পৌঁছ সংবাদ

কি গো কি হোলো ঘুম আসছে না বুঝি, আমারও, কি জানি মেয়েটা কতদূর পৌঁছলো,অস্থির তো একটা লাগছেই। জানিনা ঠিক করলাম না ভুল করলাম।স্বদেশে থাকলে কথায় কথায় দুজনের মধ্যে একজন হয়তো দেখে আসতে পারতাম, এখানে তো সেটাও সম্ভব নয়।

যখনই যাবো একসঙ্গে দুজনকেই যেতে হবে,এতে বিশাল পরিমান টাকার ও তো একটা ব্যাপার আছে তাই না, আর সব থেকে বড় কথা হোলো যাবো বললেই তো যেতে পারবো না। একটা পারমিশন লাগে মানে ভিসা লাগে,সেও প্রায় মাস দুয়েক তো বটেই তাও আবার বরাত ভালো থাকলে, কোনো রকমের রাজনৈতিক টানাপোড়েন হলে তো কথাই নেই সব বন্ধ।

শুভ, তোমায় স্কাইপে কি ভাবে কানেক্ট করতে হয় মেয়ে শিখিয়ে দিয়েছে তো,পারবে তো নাকি। আমাকেও অবশ্য শিখিয়েছিলো কিন্ত ওতো সব বুঝিনে বাপু। যাক এই শোনোনা মেয়ে বলেছিলো না আমাদের এখানকার সময় প্রায় ভোর পাঁচটাই নাকি পৌঁছে যাবে,

বলেছিলো নাকি বেরোতে বেরোতে প্রায় এক ঘন্টা লাগবে মানে সকাল ছটা, টরেন্টো এয়ারপোর্টে নাকি হোস্টেল থেকে গাড়ি পাঠাবে,সেটা বেশিক্ষন লাগার কথা না, যা বলেছিলো মোটামুটি আধঘন্টা লাগবে পৌঁছতে। যাক সাতটা ধরলাম খুব বেশি হলে, যা সব লাগেজ আছে ,এমনিতেই মেয়ে কোনোদিন একটা লাগেজ সঙ্গে বইতে হিমশিম খায়।

 মনে নেই সেইবার হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্টে তো সামান্য ট্রলি টানতে গিয়ে পা মচকে পরে  কি অবস্থা।কি গো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? আমি কার সাথে কথা বলে চলেছি, ও বাবা,এতো দেখি রীতিমতো ঘুমে কাদা।


ভোর বেলায়:-


সুমি ওঠো,কি গো মেয়ে পৌঁছতে চললো আর তুমি এখনো ঘুমোচ্ছ।আচ্ছা দাঁড়াও আমি ল্যাপটপ টা না হয় রেডি করি,স্কাইপে অ্যাড করি,আর ততক্ষনে চা বানিয়ে নিয়ে আসি।কি হোলো ওঠো?শুভ আমি তো প্রায় সারাটা রাত জাগা তুমি তো কথা বলতে বলতে ঘুমিয়েই পড়েছিলে,

সেই যে জেগে আছি, এই এখুনি একটু চোখটা লেগে এসেছে। ঠিক আছে তুমি চা বসাও আমি উঠছি।    যাক প্রায় চলে এসেছি মা বাবা নিশ্চয় উঠে পড়েছে, দেখি তো পার্সে যে ঘড়িটা আছে তাতে ঠিক ইন্ডিয়ান সময় টা কত এ বাবা 5.30 ভোর, বাবা তো অস্থির হয়ে উঠবে।ঠিক আছে দেখি একটু air hostess কে জিজ্ঞাসা করি।

Excuse me, will you please tell me what time we will be landing at torrento .Madam another half an hour hopefully its depend on weather.উফফ সত্যিই খুব ভালো লাগছে প্লেন টা একেবারে বিশাল বিশাল বাড়ির পাশ দিয়ে সমানে এঁকেবেঁকে এগিয়েই চলেছে।

আকাশ টা অল্প বিস্তর পরিষ্কার,কিন্তু একটাও পাখি নজরে এল না,আমাদের দেশে সন্ধ্যে হলেই পাখির দল একসাথে এগিয়ে চলে নিজের বাড়ির দিকে, কি জানি এদেশে ওরা হয়তো আগেই চলে গেছে।ঐ তো বাড়ি ঘর গুলো একেবারেই কাছে চলে এসেছে, আর সত্যি সত্যি দেরি নেই, আর বড়জোর পাঁচ মিনিট তারপরেই torrento র জমিতে পা দেবো, ঐ তো announcement করছে সিট বেল্ট বাধার জন্য।

কি গো সুমি,উঠলে চা তো ঠান্ডা জল হয়ে গেলো। এদিকে তো মেয়ের পৌঁছনোর সময় ও হয়ে গেলো হোস্টেলে,এই ফোন এল বলে।কি জানি এয়ারপোর্টে হোস্টেল থেকে তো গাড়ি পাঠানোর কথা,পাঠাবে কি না জানি না,তবে এতটা বেয়াক্কলি হবেনা ওরা তাই না সুমি কি বল ।   

উফফ এতো প্রশ্ন করো ঘুমোই কি করে, নিজেই বলছো আর নিজেই উত্তর দিচ্ছ , শোনো এতো তাড়াতাড়ি ও তোমার স্কাইপে বা ফোনে আসবে না,আমায় বলেছে ওখানে পৌঁছলে ওদের থেকে সিম নিয়ে তারপর ফোন করবে,ওদের হোস্টেল সবার জন্য আগের থেকেই arrange করে রেখেছে।

দেখো অস্থির হোয়ো না,ধরে রাখো আটটার আগে তোমার মেয়ের ফোন কিছুতেই আসবে না, পারলে তুমিও শুয়ে পরো।ঠিক আছে তাহলে আমি স্নানটা সেরে নি,দেখো ফোন আসলে কিন্তু উঠি ও আমি তাহলে বাথরুম সেরে স্নান করে আসছি।

বাবাঃ সময়ও তো কম হোলো না দেখছি প্রায় সোয়া সাতটা বাজে।দেখি দেখি দাঁড়াও unknown no হ্যাঁ বল। ঠিক বুঝেছি তোর ফোন মা তো বলেই চলেছে আটটার আগে কোনো মতেই তোর ফোন আসবে না। কেমন রে মলি দেশটা? তোদের হোস্টেলটার ছবিটা যেমন দেখেছিলাম ঠিক তেমনই কি ? 

দেখ তোর মা সমানেই ফোন টা টানছে। বাবাঃ সব টাই বল পুরোটাই শুনবো। পুরো journey টা প্রথম থেকেই বল, কি কি দেখলি,আশেপাশের লোকজনেরা কেমন ছিল , ওখানের পরিবেশ কেমন সব বল।সব বলছি স্পিকার টা অন কর তাহলে মাও শুনতে পারবে ,

শোনো দিল্লী আসার আগেই পাশের সেই গুজরাটি মেয়েটা MIT তে পরে ফাইনাল ইয়ার, আর সামনের দুটো বিদেশী ছেলে ওরা আমাদের উনিভার্সিটির অনেক পুরোনো ছাত্র ছিল ইন্ডিয়া এসেছিলোএকটা প্রজেক্টের কাজে মেকানিকাল ব্যাক গ্রাউন্ডের ছেলে বাবা,এবার বোঝো বাইরে না বেরোলে কিছুই বোঝা যায় না,শোনো যেই gmt পেরোলো announce করলো ঘড়ির টাইম টা ঠিক করে নিতে বললো।

যাক তখন গায়ে বেশ কাঁটা দিচ্ছিলো জানো,মনটা খুশিতে এতো ভালো হয়ে গিয়েছিলো মুহূর্তে,যাক কথা শুরু হোলো নানান ব্যাপার নিয়ে,তারপর খাবার এলো,বাবা খাই নি কিছুই,মা যা জোর করে মাছ খাইয়েছিল ঢেকুর উঠছিলো,এমনকি পাশের মেয়েটা ধোকলা এনেছিল কত জোর করেছিলো,তুমি না করেছিলে তাই খেলাম ই না।

তবে হ্যাঁ পার্সোনাল লাগেজে মুড়ি আর চিনি দিয়েছিলে তাই বার করে জল দিয়ে খেয়েছি,তোমার সেই কথাটা মনে পড়ছিলো আর মনে মনে হাসছিলাম।খাবার নিয়েছিলাম তবে সেটা সঙ্গে নিয়ে এসেছি, ভাবছি সকালের ব্রেকফাস্টটা তা দিয়েই হয়ে যাবে। জানো, মা প্রায় ভোর হয়ে এসেছে দুবাই এসে প্লেনটা নামলো,কত কথা পড়েছি এই দুবাই সম্বন্ধে তা চাক্ষুস দর্শন হোলো।

ওখানে হল্ট ছিল প্রায় দুঘন্টা। ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম নানান ভাষার লোকজন,তাদের আদবকায়দা,পোশাক পরিচ্ছেদ কত কিছু।এযেন “ বিবিধের মাঝে শুধু মিলন ও মহান”।যেই প্লেনটা ছাড়লো বুর্জ খলিফা সেই বিশাল বাড়িটা না দেখলে বোঝাই যাবে না কত বড়,যাক প্লেন থেকে ছবি তুলেছিলাম।

তোমাদের পরে পাঠাবো। আচ্ছা হ্যাঁ বলাই হয় নি প্লেনে ঘুমোনোর কি ভালো ব্যবস্থা জানো,একদম আলাদা আলাদা কূপ,আমার সিটটা সাইড এ ছিল মেয়েটার সাথে এক্সচেঞ্জ করে নিয়েছিলাম।ও নিজেই বললো প্রথমবার যাচ্ছ তো নতুন অভিজ্ঞতা হবে তাই জানালা দিলাম আমারও হয়েছিল। জানো মা জানলার পাশে শুয়ে তাও আবার মাঝ আকাশে এ আরেক অনুভূতি,দেখতে দেখতেই রাত কাটালাম। 

বাবা তোমার সেই গল্পটা আজও মনে পরে কত বলেছো, একেবারে মুখস্থ হয়ে গেছে। রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ওটাই ভাবছিলাম।রাঁচি হাটিয়া এক্সপ্রেস যেই মুড়ি স্টেশনে ঠিক ভোর চারটে তে এসে ট্রেনটা থামলো , অমনি জানালা দিয়ে সে কি চিৎকার দাঁতমন দাঁতমন, নিমের ছোটছোট লাঠি জানালা দিয়ে কেনার জন্য সমানেই বলে চলেছে,

তুমি তখন লাফ মেরে একেবারে উপরের বার্থ থেকে নেমে,সোজা প্লাটফর্মে নেমে দাঁত মেজে, সেই মুড়ি স্টেশনের প্রকৃতির আনন্দ নিয়েছিলে । 

পাহাড় ঘেরা এক যেন বিশাল উপত্যকা ট্রেনটা নিচ থেকে উপরে উঠবে তাই পিছন থেকে একটা ইঞ্জিন যোগ হোলো ট্রেন টাকে ঠেলে তোলার জন্য। আর হ্যাঁ বাবা চা ওয়ালার ভোরের সেই গুরুগম্ভীর ডাক চা এ  চা  তুমি নকল করে বলতে সেটা যেন কাল রাতের মাঝ আকাশে মুড়ি স্টেশনের সেই চা ওয়ালাকে মনে পড়ছিলো, কেবলই মনে হচ্ছিলো কাঁচের বাইরে কান পাতলে তাদের আওয়াজ ও শোনা যায় কিনা । 

এদেশের সাথে আমাদের দেশে পার্থক্য কি জানো শুধু একটা দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলি ওদেশে হৈচৈ হয় যে কোনো কাজে,তাই ধরা পরে বা স্মৃতিতে থাকে সবসময়, আর এদেশে সবই আছে কিন্তু নিশ্চুপে তোমায় শুধু খুঁজে নিতে হবে, কোনটা তোমায় মনে ধরেছে।

তবে হ্যাঁ ভারতবর্ষের মত হকার এ দেশে মেলা ভার।মনে পরে এই সেদিনের কথা আমাদের বাড়ির সামনে একজন হকার সমানেই চীৎকার করে বলছিলো “  সারা জীবন বসে খাবে, একবার নিলে আমায়  মনে রাখবে” দৌড়ে গিয়ে দেখি ছোটো ছোটো টেবিল আর চেয়ার বিক্রি করছে ।

এরা কত প্রাণবন্ত, কি প্রচন্ড দারিদ্রতা তাও মনে কত স্বপ্ন আর জিনিস বিক্রির একেবারে সঠিক স্লোগান, এদেশে তার সিকি ভাগ ও নেই, সবাই নিশ্চুপ নিলে নাও না হলে যাও।ভিখারিরা এদেশেও আছে কটোৱা বা পাত্র নিয়ে নয়, ভায়োলিন বা কোনো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গান শোনায়,

তা শুনেই মানুষ টাকা দেয়। বাবা কলেজের ক্যাম্পাসটা বিশাল বড় ঘুরে শেষ করা সম্ভব নয়, এতটাই বড়।তবে হ্যাঁ ক্লাসের ছেলেমেয়েদের কোনো হৈ হট্টগোল নেই, ক্লাস শেষ মানেই সব চুপ,যে যার পড়াশুনো নিয়েই ব্যস্ত,এমনকি ক্যান্টিনেও শুধু আলোচনা পড়াশুনো নিয়ে,সবাই বেশ ক্যরিয়ার ওরিয়েন্টেড।

মানুষের পয়সা আছে দেখে যা বুঝলাম, কিন্তু যেটা নেই সেটা হোলো প্রাণশক্তি, সবেতেই সবাই আছে,কিন্তু চুপিসারে বোঝার উপায় নেই অনুষ্ঠান টা আনন্দের নাকি দুঃখের।

যাক রাখি বিকেলে ফোন করছি,মানে আমাদের এখানে ভোর তখন,আসতে আসতে তোমরাও বুঝতে পারবে সময়টা পরে দেখবে আর ভুল হবে না।শোনো তোমাদের দুজনকেই বলছি আর ঝগড়াঝাটি কর না,কথায় কথায় নো নালিশ আমাকে, চিন্তা কোরোনা আমাকে নিয়ে,তোমাদের নিজেদের কে নিয়ে ভালো থেকো দুজনেই।

বাবা এই তো গেলি দুদিন হোলো,তারমধ্যেই কত বড় হয়ে গেলি বল।আসলে সত্যিই আমরাও বুঝিনি যে তুই এতটাও বুঝতে পারিস বা শিখেছিস,তোলা তোলা করে রেখেছিলাম এতকাল,এখন তুই মা আমাদের দুজনকে তোলা তোলা করে রাখছিস।

শোনো মাস তিনেক পর থেকে যা বুঝলাম তোমাদের টাকাপয়সা পাঠাতে হবে না,আমি আমারটা যোগাড় করে নিতে পারবো আশা করি,এতকিছু শিখলাম ঐ গুজরাটি মেয়েটির থেকে ও তো বললো এদেশে শুধু আসতে দেরি, দু মাস পর থেকে তুমিও পার্ট টাইম job শুরু করে দিও,সবাই তাইই করে।

ঠিকমতো চললে তো কথাই নেই মা বাবাকেও পাঠাতে পারবে, মাত্র তো চারটে বছর তারপর সব তোমার হাতের মুঠোয়। আর নম্বর টা রেখেছি বাবা, বলেছে আমায় ও কাজের জন্য সাহায্য তো করবেই উপরন্তু পড়াশুনাতেও। মেয়েটি google এ চাকরি পেয়ে গেছে, মাইনে টাও বলেছে, তবে সে কথা তোমায় বলবো না এখুনি।

আর হ্যাঁ মেয়েটি বলেছিলো এদেশে তো এসেছি শিখতে, সবটাই শিখবো জানবো, রোজগারও করবো, কিন্ত সারাটা জীবনের জন্য তো নয়, জীবনের বেশির ভাগটাই কাটাবো ইন্ডিয়াতে,দেশের হয়ে কাজ করবো, প্রয়োজনে এদেশে আসবো,তবে ওদের প্রয়োজনে যদি আমাকে কখনো দরকার হয়।বাবা এই ইচ্ছে বা সংকল্প আমার নিজেরও,Dr. Abul kalam Azad কে খুব মনে পড়ছে আজ,যাক রাখি,ভালো থেকো, আনন্দে থেকো দুজনেই।

Click below the link for next episode

satta king tw