BMV- 60 জীবনে সাফল্যের জন্য প্রয়োজন প্রতিক্ষণেই অবিচল লক্ষ্য, সঙ্গে প্রত্যেকেরই ঐকান্তিক প্রয়াস।
যেকোন ধরনের জয় বা সাফল্যতে যেমন আনন্দ আছে,তেমনই এই জয়ের নেপথ্যে বহুদিন ধরে সংকল্প হয়ে বয়ে চলে ত্রিবেণী ধারা। সরস্বতী যেখানে অন্তঃসলিলা তাই ত্রিবেণীর ত্রিধারার সবটাই আমরা দেখতে পারিনা,যা অদেখা সেটাই সংকল্প। আর যেটা বয়ে চলে সেটাই সময় ও পাশাপাশি জীবন থেকে লব্ধ জ্ঞান বা শিক্ষা।আজ বলবো ছেলেমেয়েদের সাফল্যের পাশাপাশি নিজস্ব ত্যাগ ও সাথে মা বাবাদের সেই ত্যাগে নিজেদেরকেও সামিল করা তবেই আসে যৌথভাবে পরিবারের ক্ষেত্রে সাফল্য, ঠিক যেমনটা রাজ্যের তথা দেশের সাফল্য।
কি হতে চাও, কেন হতে চাও, এমন সুস্পষ্ট ধারণায় নিজের কাছে নিজের প্রশ্নেরও প্রয়োজন আছে
গত সাড়ে তিনবছর নিজের সন্তানের কাছে যেমন ছিল এক সুস্পষ্ট ধারণা সে কি হতে চায়, কিন্তু কেন হতে চায় সেটা হয়তো ছিল তবে সেটা কখনোই বলেনি নিজের কাছেই রেখেছিল অতি সন্তর্পনে,যেটা জানাবো আপনাদেরকে একেবারেই এই লেখার শেষে। একটাই ছিল যেটা হতে চায় সেটা হতে পারলে সে নিজে পরবর্তী জীবন খুবই আনন্দে থাকবে শুধু তাই নয়, আরো পড়াশুনোর মাধ্যমে পৌছে যেতে পারে ঠিক কি কি সে হতে চায় একেকটা সঙ্কল্পকে ধরতে।সেখান থেকেই পরিপূর্ণতা পাবে জীবনের সমস্ত ইচ্ছেগুলো।
ঠিক এইখানেই মা বাবাদের প্রয়োজন হাতটা বাড়িয়ে দেওয়ার ও বেশিরভাগ সময়ে একটা সংকল্পের “why” খোঁজার পথ চলা।WHY খুবই সামান্য একটা কথা কিন্তু তাৎপর্য আছে বিপুল পরিমাণে।অনেক অভিভাবক এখানেই থেমে যান যুক্তি একটাই তারা বড় হয়েছে নিজেদের ভালো মন্দ নিজেরাই বুঝতে পারবে, তাই হয়তো why কে খোঁজেন না।সেটা অনেকাংশেই ঠিক কথা কিন্তু একটা দায়িত্ব নিজেদের উপরেও বর্তায় সেটা হলো নিয়মের ঘেরাটোপে গোটা পরিবারকে বেঁধে রাখা,তবেই আশাতীত সাফল্য।কারণ একটাই দিনের শেষে সবাই সফলতা খোঁজেন, কেউই বিফলতা খোঁজেন না।যেকোনো বড় সাফল্যের মূল চাবিকাঠি যৌথ উদ্যোগের প্রয়াসেই সম্ভব এতটা ভাবতে পারলেই আপনি পরের ধাপে এগোতে পারবেন।
অন্তত সন্তান নিজে যা হতে চায় সেটা নিয়ে অভিভাবকদের শুধু ভাবনা চিন্তা নয় বরং সেই বিষয়ে নিজেরাও আরো মনোযোগী হয়ে ওঠা। নিজেদেরও একটা প্রয়াস থাকা জরুরী কারণ একজন সন্তান সে যেমন কি হতে চায় সেটা ঠিক করে মনে মনে পাশাপাশি সে নিজেও কিন্তু সংকল্পের পথে একা তাই সেটা বোঝা বিশেষ প্রয়োজন একজন অভিভাবকের।গুরত্ব দিন ঠিক সেখানেই।পয়সা দিয়েই কেবলমাত্র খান্ত হবেন না এই ভেবে আপনার দায়িত্ব শেষ।ভেবে দেখুন আপনার সন্তান আপনার দেওয়া পয়সা ছাড়াও আশা রাখে আপনি নিজে কত সক্ষম তাকে সঠিক দিক দেখানোর ক্ষেত্রে। যেই পথে সবাই হাটে সেই পথে না হেঁটে অন্য পথে হাঁটুন দেখবেন আপনার পথেই একদিন লোকে হাঁটছেন।
সালটা ২০১৯ এর মাঝামাঝি মেয়ে তখন সবেমাত্র এগারো ক্লাসে ভর্তি হয়েছে, একদিন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বসে পড়লাম এখন থেকে ঠিক আমাদের প্রাত্যহিক ও দৈনন্দিন জীবন কেমন হতে হবে সেই বিষয়ে ভাবনা, ও সঠিক দিশা ঠিক করা। প্রত্যেকের যেটা এতকাল নিজেদের কাছে ভুল ছিল সেটারই খোঁজা ও সংশোধন করা।দীর্ঘ আলোচনায় এমন এক সিদ্ধান্তে এলাম যেটার প্রয়োজন ছিল প্রত্যহ ” এক প্ল্যাটফর্ম এক চিন্তাধারা” যেটা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটা হলো বই। বইই হলো এমন এক মেলবন্ধন যেটা সে শিখবে জীবনের পথে এগিয়ে চলার সঠিক দিশা সঙ্গে নিজেরাও।আর এই বই পড়ে নিজেরা ঠিক কে কি শিখলাম সেই নিয়েই এক আলোচনা।তবেই হয়তো দিনটার শুরু ভালো হতে পারে।
ভুল চিন্তা ভাবনা কখনোই সাফল্যের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী হতে পারে না, তাই প্রথমেই আলোচনা করবো জীবন থেকে নেওয়া ভুলের কিছু মাশুল
যদিও মেয়ের নিজের পুঁথিগত বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার একটা অভ্যেস ছিল সেটা ছিল ছোটবেলা থেকেই তার মায়ের থেকে পাওয়া শিক্ষা।প্রতিদিন সকালে উঠে প্রথম সংকল্প এক -টিভি বা যেকোনো বিনোদনের জিনিষ ওটা পরিহার করতেই হবে,প্রয়োজনে বাড়িতে এই সংযোগ পর্যন্ত কেটে ফেলতে হবে, যেটাই মনকে আনন্দ দেয় সেটাই মস্তিষ্কের সু চিন্তাধারার ক্ষেত্রে একটা বড় বাঁধা।
দুই– মোবাইল জাতীয় যেকোন গ্যাজেট সন্তানের হাতে তুলে না দেওয়া এমনকি সকাল সকাল সেই সব জিনিষ নিয়ে নিজেরাও ব্যস্ত হয়ে না ওঠা, ওটা সন্তানের নিজেরও অপ্রত্যক্ষ ভাবে মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হবে। যেটাই একজন অভিভাবকের নিজের কাছে নিজের প্রথম সংকল্প। তিন – সারাদিনে যেকোন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজন যাঁদেরই ফোন আসুক না কেন সেটার আলোচনা, প্রয়োজনে বাড়ীর বারান্দায় বা ব্যালকনিতে করা। এতে সন্তানের উৎকণ্ঠার অবসান ঘটবে কারণ অধিকাংশ ফোনেরই সারমর্ম থাকে অমূলক।এমনকি সেই ফোন সংক্রান্ত আলোচনা ও বন্ধ করতে হবে পরিবারের মধ্যে।
চার– খবর ও দেশের হালহকিকত জানার প্রয়োজন আছে তবে খবরের কাগজ পড়ার থেকে হয়তো দূরে থাকার প্রয়োজনও আছে কারণ ইদানিং কালে খবরের কাগজে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাতা জুড়ে থাকে সমস্ত নেতিবাচক খবর ও বিজ্ঞাপনের চাটুকতা যেটা নিষ্প্রয়োজন, মনকে ভার ও লোভী করে তোলে সেটাই পাওয়ার আশাই।গুগল নিউজ দেখলেই কিন্তু এর একটা সঠিক সুরাহা পাওয়া সম্ভব।ঠিক নিজের ক্ষেত্রে কতটুকু প্রয়োজন।পাঁচ – জানিনা অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন সেটা হলো ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে বিরত রাখা নিজেকে সেটা প্রয়োজন হলে দিনের শেষে।কিছুই পাওয়ার নেই এখান থেকে কারণ প্রত্যেকেই আপনাকে চেনেন যাঁরা আপনার বন্ধু। ওখানে সারাক্ষণ চলে ” শুধু আমাকে দেখো”, তাই কমেন্টস ও দেন আপনারই সমতুল্য মানসিকতার লোকজন।
যেখানেই বন্ধুত্ব বা চেনা সম্পর্কের মাঝে কথা না হয়ে শুধুই লেখালিখির স্থান পায় সেখানেই হয়তো জন্ম হয় একে অন্যকে তোয়াচ করে চলার এক সম্পর্ক মাত্র।মাঝেমধ্যে তো মনে হয় এই সকল সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের যোগ শেখাচ্ছেন না নেপথ্যে শেখাচ্ছেন বিয়োগের পদ্ধতি,যা আমি আপনি বধির হয়ে মেনে চলেছি।একবার তো আমার নিজের ক্ষেত্রে শুধু একজন শিক্ষককে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ভালো কথা লিখতেই এমন অবিবেচক মতামত অনেকেই শুরু করলেন সেটা থেকেই পরবর্তীকালে দানা বাঁধে মনোমালিন্য। আর শেষমেশ সম্পর্ক ছেদ।
সময়ের কাছে অতটাও সময় থাকে না যা আপনাকে দ্বিতীয়বার ভাবারও সময় দেবে।
ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের বলতে পারি কিছু শেখার ও নিত্যনতুন কিছু জানার ইচ্ছে যদি থাকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে LinkedIn এ আসতে পারেন।যেখানে আপনাকে কেউই চেনেন না কিন্তু নেপথ্যে আপনাকে সাহায্য করে চলবে আপনারই এগিয়ে যাওয়ার নানান পথ। আপনি নিজে না জানলে আপনার সন্তানের চিন্তাধারা কিভাবে পরিবর্তন করবেন।আজ পর্যন্ত ফেসবুকে একটাও চোখে পড়লো না এমনকি সিকি ভাগও না কেউ LinkedIn এ ব্যবহৃত কোনো পোস্ট সেখানে উল্লেখ বা আলোচনা করেছেন।
মানসিকতা পাল্টান, পাল্টে যেতে পারে আপনার গোটা পরিবার। ফেসবুক হলো এমনই এক মিডিয়া যেখানে স্রষ্ঠা নিজেই নিজের পণ্য, আর LinkedIn এ বিপুল পরিমাণ পণ্য আছে -আগে সবাইকে দেখুন,শিখুন, প্রয়োজনে অপরিচিত সেই স্রষ্ঠার সাথে কথাও বলুন আর নিজেও কিছু শিখে এগিয়ে যান।
সব থেকে মজার ব্যাপার হলো যাঁরা ফেসবুকেও আছেন আবার LinkedIn এও আছেন তাঁরা অন্তত এইটুকু বুঝে ফেলেছেন নিজের হাঁড়ির খবর অন্ততপক্ষে LinkedIn এ দেওয়া যায় না, দিলেই আপনাকে হয়তো তাচ্ছিল্য করে বার করে দেবে অনেকেই বা আপনি নিজেই বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবেন।
কিছুদিন আগে এক বিশিষ্ট লোক একটা কথা বলছিলেন শুনে ভালো লাগলো তাই শেয়ার করলাম, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে। যেসমস্ত ছেলেমেয়েরা ছাত্র রাজনীতি করেন কলেজের দেওয়ালে পোস্টার লেখেন সেটা জানিনা কতটা ভালো বা খারাপ কিন্তু এরাই যখন Harvard, বা Cambridge এ যান সেখানে কি পারেন এমনটা করতে।বাস্তবে করেন ও না কারণ যিনি বলছিলেন উনি স্বয়ং নিজেই দেখেছেন Harvard এ থাকাকালীন সেই সমস্ত ছেলেমেয়েদের। ঠিক তেমনটাই হলো facebook বা Linkedin এর মধ্যে পার্থক্য ।
ছয় – আজকাল জানিনা এমন কে আছেন এই আবিষ্কারের মূল পান্ডা বা সৃষ্টিকর্তা যা মানুষের মাথাকে এমন ভাবে সাফাই করে দিয়েছেন সকাল হলেই গুড মর্নিং, রাতের শেষে গুড নাইট।মানুষ মেতে উঠেছেন তাতেই আর যিনি লিখলেন তিনিও আশা করেন তাঁকেও একই বার্তা যেন পৌঁছানো হয়, না লিখলেই গোঁসা, এ যেন এক দায়ভার একে অপরের প্রতি সকাল সকাল। এর সঠিক কারণ জানতে একদিন যখন তাঁকেই ফোন করলাম এমন যুক্তি দিলেন জানি সেটাই দেবেন একটু সেন্টিমেন্ট মেশানো, বহুদিন গুড মর্নিং লেখেন না বাড়ীর সকলে কুশল তো?
পরের সত্যি কথাগুলো লিখলে হয়তো অবাক হবেন এনারাই বেশিরভাগজন পরোক্ষ ভাবে আপনার সম্পর্কে কুৎসা রটান যেটা প্রমাণিত ও বাস্তব, পরখ করে দেখুন ধরে ফেলবেন তাঁদের চাটুকারিতা। যেখানেই মাত্রাতিরিক্ত খোঁজ খবর নেওয়া সেখানেই লুকিয়ে আছে ভয় “কে জানি আমার থেকে এগিয়ে গেলো না তো,চুপিসারে নিশ্চয় এগিয়ে যাচ্ছে?”,তাই আপনার সাফল্য লুকিয়ে রাখুন অতি সন্তর্পনে মানুষ ঠিক এখানেই ভুল করে বসেন আপনি কি করতে চলেছেন সকলকে জানিয়ে।
হাহুতাশ কোনো পার্থিব জিনিষ নিয়ে নয়, অনুশোচনায়- হোক পরিমিত জানার ও উপযুক্ত জ্ঞানের অভাব, তাই প্রয়োজন শুধুই সংকল্পের
সাত– রাজনীতি বিষয়ে আমরা প্রত্যেকে খুবই ভালো বুঝি তাই এই বিষয়ে সমালোচনা করি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অমুকে ঘুষ খেয়ে ধরা পড়েছে, ঐ মন্ত্রী দেশের জনগণকে নিয়ে ভাবে না, দেশের GDP একবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে, গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে, শেষমেশ না পারতে ঐ চাষীভাইদের নিয়ে আলোচনা আলুর দাম পঞ্চাশ টাকা ছুঁইছুঁই কি বলবেন?আলোচনার বিষয়বস্তু শুধু অন্যকে নিয়ে, তাই নিজের জন্য কখন ভাবতে বসবেন? দিনের শেষে ঘুমোতে গেলে ?
আট– সময়ের অভাব, প্রত্যেকের একই কথা ” আজকাল সময়ই পাই না” এতই সময়ের অভাব। সেটা সত্যিই হাসায়, সময় সকলের কাছেই আছে যেটা নেই সেটা আলোচনার বিষয়বস্তু কি নিয়ে আলোচনা করবেন, আজকাল অধিকাংশ মানুষই বিভ্রান্ত নিজের কাছে নিজে তাই এই বিভ্রান্তিতে সময়কে শিখণ্ডী করেন কারণ ওটা বলাই শ্রেয়, আমি খুবই ব্যস্ত।
এত সমস্ত চিন্তাধারা নিয়ে নিজেও যে এতকাল মেতে ছিলাম না ঠিক তা নয় নিজেও ছিলাম তাই সেই যুগান্তর পত্রিকার স্লোগানে নিজেকে ভাবলাম ” উল্টে দেখো পাল্টে গেছি” ।দেখলাম নিজের মূল্যবোধ নিজের জীবন সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা জন্মাতে শুরু করলো ঠিক কি হতে চাই নিজে ও পরিবারে সেটাতে মনঃসংযোগ করতে পারলে পাল্টে যাবে এতসব ভ্রান্ত ধারণা।
উপরোক্ত সবকটা কথা যেখানে একটাও নিজের প্রয়োজনে আসবেই না বা নিজে পাল্টাতেই পারবো না।যা আমার সীমাবদ্ধতা তাই নিয়েই বকবক, জিজ্ঞেস করুন সেই সকল মানুষগুলোকে আচ্ছা দাদা GDP টাকে তোলা যায় কিভাবে বলুন তো? GDP উঠলে কার কত উপকার হবে চুপ হয়ে প্রয়োজনে প্রসঙ্গই পাল্টে ফেলবেন নিমেষে।
নয় -জীবনকে নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট ভাবে বেঁধে ফেলা হলো একটা রুটিনে যেই রুটিনের ঘেরাটোপে থাকবে গোটা একটা পরিবার।বাড়িতে নিজের বন্ধুবান্ধব সমাগম যেমন কমাতে শুরু করলাম, স্ত্রী ও মেয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই ।যদিও আগে বিশেষ কেউই ছিল না সেটা হাতে গুনে দুই থেকে তিনজন।এটা শুধুমাত্র আমার নিজের ক্ষেত্রে , আমার সন্তানের ক্ষেত্রে এযাবৎ কোনো বন্ধুবান্ধব বাড়িতে এসেছে কিনা মনে পড়ে না, বা সন্তানও কোনোদিন গেছে সেটাও মনে পরে না।
আসলে তাদেরকে উপেক্ষা করার উদ্দেশ্যে কখনোই নয় বরং সেটা বাড়লেই দুপক্ষের আসা যাওয়ার একটা বাড়তি ঝুঁকি থেকে জন্ম নেবে অন্য পথ যেটা ধীরে ধীরে সংকল্পের থেকে দূরে ঠেলে দেবে বেশিরভাগ সময়েই বিপথে।আমার জ্যাঠামশাই ছিলেন অতি শিক্ষিত একজন মানুষ ছোটবেলায় একটা কথা বারবার বলতেন বাড়িটাকে ” বন্ধুরও বাড়িতে ফুলের বাগিচা” করে দিও না।সেটা তখন বুঝতাম না আজ বুঝি।
সংকল্প থেকে সৃষ্টির পথ , ঠিক কি হতে চাও, কিভাবে দেখতে চান নিজের পরিবারকে আগামী দিনে
আমরা অনেকেই হয়তো জানি ভারতবর্ষের প্রথম তিনটি স্থানানাধিকারী যে সমস্ত কঠিন পরীক্ষা আছে, গুগল সেই সমস্ত পরীক্ষার rank অনুসারে সাজিয়েও দিয়েছে প্রতিটা দেশের ক্ষেত্রে।ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে সেগুলো হলো এক- UPSC CIVIL SERVICE অর্থাৎ IAS, IPS, IFS… দুই -IIT JEE, আর তৃতীয়ত -CHARTERED ACCOUNTANT (CA)।
কিন্তু বিশ্ব কঠিন পরীক্ষার ranking অনুযায়ী প্রথম স্থান পেয়েছে china । তাঁদের দেশে সাফল্যের জন্য কঠিন পরীক্ষার নাম GAOKAO, দ্বিতীয় স্থান ভারতের IIT JEE, আর তৃতীয় স্থান সেটাও ভারতের CA। তাই শুধুই এই সমস্ত পরীক্ষায় নয় বরং ছেলেমেয়েদের উত্তীর্ণ হতে গেলে প্রয়োজন কঠিন লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের প্রতি বিশ্বাস ও সংযম এবং রুটিনে বেঁধে ফেলা গোটা পরিবারকে সেটা একমাত্র সম্ভব বাড়ির সকলের যৌথ প্রয়াসে।
প্রথমেই বলি UPSC পরীক্ষায় যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা IAS বা IPS হতে চায় তাঁরা তাঁদের মানসিকতা তৈরি করে ফেলে বহু আগের থেকেই প্রায় তিন চার বছর আগে। ঠিক কি কি যোগ্যতা লাগে নিজের পড়াশুনোর পাশাপাশি সেটা ভাবা সেগুলি হলো নানান সঠিক বইয়ের চয়ন, মিতব্যয়ী কথা,সঠিক ও সীমিত বন্ধু চয়ন, হাঁটাচলার মধ্যে নিজেকে একজন অফিসার হওয়ার সমতুল্য ভেবে যেকোনো সমস্যার সমাধান কি করে অনায়াসে সম্ভব সেই নিয়েই চলতে থাকা- এভাবেই নিজের কাছে অনুশীলন।
তাঁরা সারাটা সময় নিজেকে নিয়েই এত ব্যস্ত যে বাকি সব চিন্তা ধারা নিয়ে ভাবারই সময় নেই।এমনটা দেখা গেছে বিহার বা ঝাড়খণ্ডের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের মধ্যেই।মনগড়া কথা লিখছি না এক বা একাধিক অত্যন্ত গরীব বিহারী ছেলেমেয়েদের IAS হওয়ার ইন্টারভিউ দেখে বলছি।একজন তো বলেই দিলেন আমরা আর্থিক ভাবে গরীব হয়তো তবে এই অর্থাভাবই আমাদের শিখিয়েছে কি করে অফিসার হওয়ার সবকটা গুণ থাকা উচিত তাই হয়তো তাঁরা সফল।
যেমন ধরুন প্রতিদিন দেশ কি কি সমস্যার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে নিজে হলে ঠিক কি ভাবে সেই সমস্যার সমাধান সম্ভব সেটা খোঁজার, এটার উত্তর পেলেই তো ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব,ঠিক এটাই ভাবেন ও করেনও তাঁরা।আমরা সাধারণ মানুষ মেতে থাকি যেকোনো সমস্যার সমাধান না খুঁজে আঙ্গুল তুলে সমালোচনায় ব্যস্ত থাকতে শুধুমাত্র এইটুকুই ফারাক।কথাগুলো নিজের থেকে মনগড়া নয় এগুলো তাঁদেরই জীবনের সাফল্যের থেকে বলা কথা।
কাউকে দেখে সংকল্প নয়, বিশ্বাসের পথেই হোক সংকল্পের শুভসূচনা
আচ্ছা ভাবুন তো দেশের নানান রাজনৈতিক নেতা নিয়ে আমরা সারাক্ষণ সমালোচনায় ব্যস্ত কিন্তু কখনোই কি আমরা আলোচনা করেছি বা করি আমাদের ছেলেমেয়েদের সাথে ভারতবর্ষের সংবিধান পাল্টে ফেলতে হবে নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে তবেই দেশের উন্নতি সম্ভব,আপনি তো নিজেই একজন দেশের সক্রিয় নাগরিক আজকাল এটাও তারা ভাবতে শিখেছে।মাথায় আসে না নিশ্চয়, আসে কিন্তু আসলেও ভাবেন এগুলো ভাবা অবান্তর, ঐ পথ তো আমার লক্ষ্যের পথ নয়,কি করে হবে ?নিজেকেই পাল্টাতে পারলেন না আজও, দেশ পাল্টানো তো অনেকটাই বড় কথা।একই বৃত্তের মধ্যে ঘুরেই চলেছেন হয় পাড়া প্রতিবেশী, না হয় বন্ধুবান্ধব নিয়ে।
সফল ব্যক্তিত্বের সফলতার চাবিকাঠি
কিছুদিন আগে Warren Buffet কে এক প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনার সাফল্যের আসল চাবিকাঠি কি? উত্তরে উনি বলেছিলেন এই প্রশ্নের উত্তর বহুবার আমি নিজে দিয়েছি জানি আপনারা কেউই রাখবেন না বা করবেন না কারণ সেখানে কষ্ট ও পরিশ্রম আছে, জীবনকে বেঁধে ফেলতে হবে এক কঠিন নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে যেটা কেউই পারবেন না বা করবেন না।
উনি আরো বললেন আমার কাহিনী প্রত্যেকে শোনেন দর্শকাসনে বসে, আমার কথায় তালিও দেন তাতে আমি আজকাল বিন্দুমাত্র খুশি হই না। বুঝি এগুলো সাময়িক ও অমূলক তালি তখনই দেবেন যেদিন নিজে সেই পথে হাঁটতে পারবেন, নিজেকে নিজের প্রতি তালি দিন, আপনি আমার ভালো বলা কথাগুলো শুধুই শুনবেন,আর শেষমেশ নিজেকে দোষারোপ করবেন এই বলে হয় নিজের কাছে সময় নেই বা আমার পোড়া কপাল। কপাল তো আপনি এমনিতেই পুড়িয়ে ফেলেছেন সারাক্ষণ জাঙ্ক ফুডের মত নিজেরই মস্তিষ্ককে ভুল সব ভাবনা নিয়ে চলতে থাকায়।
এরপরই বললেন প্রতিদিন নিয়ম করে আমি এই বয়সেও তিনশো থেকে পাঁচশো পাতার বই পড়ি এটাই আমার সাফল্যের আসল চাবিকাঠি,যেটা শুনবেন কিন্তু পারবেন না প্রয়োগ করতে নিজের ক্ষেত্রে।এটাই হলো যেকোনো সাফল্যের পেছনে ” why” খোঁজার এক সঠিক দিশা এই নিয়মের মধ্যে দিয়েই যেকোনো সফল ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।এমন কথা সুধা মূর্তি, অমর্ত্য সেন, শশী থারুর,বিল গেটস, মার্ক জুকরবার্গ, ইন্দিরা নুই, এমনকি এখনও পর্যন্ত সেরা পৃথিবীর সফল ব্যক্তি এলন মাস্ক একই কথা বলেন, উনি তো শুধু বই পড়ে এতবড় এক সাফল্যের সাম্রাজ্য দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন।
ছেলেমেয়েদের সাফল্যের জন্য ঠিক কি কি করা উচিত প্রত্যেক অভিভাবককে, যেটা তাকেও উদ্বুদ্ধ করবে নিজেকে এগোতে
এক-যাঁদের বই পড়ার বিন্দুমাত্র অভ্যেস নেই তাঁদেরকে বলতে পারি বিশেষত অভিভাবকদের প্রতিদিন সকালে উঠে জোর করে হলেও নিজে অন্তত পক্ষে দুই পাতা বই পড়ার অভ্যেস শুরু করুন।উপকার হবে আপনারই সন্তানের কারন সে যেটা দেখে সেটাই শেখে।যতটুকুই পড়লেন সেটা নিয়েই আলোচনা করুন দেখবেন একদিন আপনার সন্তানও মনোযোগী হয়ে উঠবে বই পড়ার ক্ষেত্রে শুধু আপনাকে দেখে। দুই – অযৌক্তিক আলোচনা ছেলেমেয়েদের সামনে বন্ধ করুন হতে পারে সেটা পাড়া প্রতিবেশী নিয়ে, বা আত্মীয় স্বজন নিয়ে। সেটা খুবই প্রয়োজন পড়লে স্বামী স্ত্রী একান্তে করুন। এই ধরনের আলোচনা করে আপনি শুধুই সময় অতিবাহিত করছেন।আমরা বেশিভাগ মানুষ সারাক্ষণ quantity time দিয়ে থাকি পরিবারে, quality time দিন ।এবারে প্রশ্ন হলো আমরা কি এতটুকুও চেষ্টা করতে পারিনা শুধুমাত্র নিজের ভালো করার ক্ষেত্রে।
তিন – যে কোনো কারোর follower হওয়া বন্ধ করুন, কোন এক বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিয়েই বলছি কারন একজন follower বরাবরই পেছনেই থাকেন যাঁকে সে follow করছে কোনোদিনই তাঁর সমতুল্য হতে পারেন না।সেই সমতুল্যের জায়গাতে তিনি যখন পৌঁছন ততদিনে তিনি আরো এগিয়ে যান।তাই আপনি বা আপনার সন্তান পিছিয়েই থাকেন বরাবরের মত, তাই follower হন ভালো কথা কিন্তু সংকল্প রাখুন কিভাবে টপকে যাবেন তাঁকে তবেই তাঁর সমতুল্য হতে পারবেন বা তার থেকে এগিয়ে যাবেন।
ছাত্রছাত্রীদের বলবো পড়াশুনো এমন ভাবেই হোক যাতে মন ও প্রাপ্ত শিক্ষা বলুক -“যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে একবার ভুলেও দেখাও নিজেকে”
চার– নিজের সন্তানের বলা যেকোনো কথাকে মূল্য দিতে শিখুন, তবেই আপনি নিজেও মূল্য পাবেন,কারণ আপনার সন্তান আপনার বলা যেকোনো কথাকেই অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে মনে মনে তাই সে নিজেও সেই একই প্রাধান্য খোঁজে সর্বক্ষণ আপনার থেকে। পাঁচ – অপ্রয়োজনীয় পার্থিব জিনিস থেকে দূরে থাকুন নিজেও ,পরিবারের ক্ষেত্রেও একই, এতে অনেকাংশেই মনের চাহিদা ও আকাঙ্খা কমবে,মন বিব্রত হবে না।একটা সুস্পষ্ট লক্ষ্যের পথের দিশারী হয়ে উঠবেন এগুলোর থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে পারলে।সেই সঙ্গে নিজের কমফোর্ট জোন থেকে নিজে চেষ্টা করুন দূরে থাকার, যেখানেই কমফোর্ট সেখানেই আপনার ও সন্তানের চলার পথে বাঁধা।
ছয় – মেডিটেশনের অভ্যাস করা শুরু করুন প্রতিনিয়ত কমপক্ষে সাতাশ মিনিট, দেখবেন আপনার সন্তান নিজেও আপনারই পথ ধরে একদিন হাঁটবে। যত বেশি মন একাগ্রতা পাবে ততই মস্তিষ্কের নিউরন একে অপরের সাথে সংযোগ বাড়াতে সক্ষম হবে এতে বুদ্ধির যেমন বিকাশ ঘটবে,তেমনই জীবনের ঠিক decision making এর ক্ষেত্রে সঠিক দিশা নিজেও খুঁজে পাবেন।একটা বয়সের পর আমরা অভিভাবকেরা অনেকেই অনুশোচনায় ভুগি জীবনে হয়ে যাওয়া ভুলগুলোর ক্ষেত্রে।চিত্ত পরিশুদ্ধির আরেক নাম যোগনিদ্রা।চিত্ত পরিশুদ্ধি করুন চল্লিশ ঊর্ধ্ব বয়সের পর যোগ সাধনার মাধ্যমে, লাভ কতটা পাবেন সেটা হয়তো সময় বলবে। আপনার সন্তান যদি একবার এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারে আপনি বেঁচে থাকতেই হয়তো দেখে যেতে পারেন আপনার সন্তানের সীমাহীন সাফল্য।
বহু মানুষ বলেন আমাদের বয়স হয়েছে এসবের কি আর প্রয়োজন আসলে সেটা অলসতা।দুষবেন নিজেকে বারেবারে একটা বয়সের পর অথচ যেটা সহজলভ্য উপায় সেই পথে কখনোই হাঁটবেন না।ভারতের প্রাচীন বেদ গ্রন্থে এরও উপকার ও প্রতিকার বিশদভাবে বলা আছে । পাশ্চাত্য দেশ তাঁরা ভারতবর্ষের এই যোগনিদ্রাকে শুধু সম্মতিই জানান নি বরং প্রতিদিন এই পথে হাঁটেন আর আমরা হাঁটি তাঁদের ভুল পথগুলো বেছে নিয়ে আর নিজেকে তকমা দেই মডার্ন ভেবে।
আপনি যা চান ব্রহ্মাণ্ড আপনাকে দেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন ঠিক একই কথা ডঃ আব্দুল কালাম নিজেও হাতেনাতে প্রমাণ দিয়েছেন সেটা বহুবার লিখেছেন নিজের বইয়ে। এই সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে দেওয়া আমারই ব্লগে যা উপরে আপনাদের ক্লিক করে বলা আছে পড়তে।
বিপুল অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা নয়,শিক্ষার সৃষ্টি হোক কেবলমাত্র নিরন্তন ও উপযুক্ত প্রয়াসে
সাত– প্রতিদিন নিয়ম করে বেঁধে ফেলুন আপনার দৈনন্দিন রুটিন এটা অবশ্য আমার স্ত্রী থেকে পাওয়া শিক্ষা, সে নিজেও গৃহবধূ তাই লিখে রাখতো বা এখনও লিখে রাখে ঠিক সংসারের কি কি কাজ করবে।এইটার প্রভাব আমার সন্তানের উপর পড়েছে পুরোদস্তুর সে নিজেই মাধ্যমিকের সময় থেকেই লিখে রাখতো কি কি পড়তে হবে, কোনটা আগে করতে হবে এমনই প্রায় দশ থেকে পনেরো নম্বর পর্যন্ত সারাদিনের কর্মসূচী এরই মধ্যে থাকে অবসর সময়ে শিক্ষামূলক গল্পের কিছু বই পড়ার একটা লিষ্ট।কখনোই ভাববেন না নিজের ঢাক নিজেই পিটিয়ে চলেছি। অবাস্তব কাহিনী কখনোই লিখি না যেটা লিখি সেটা শুধু আপনাকে উৎসাহিত করার জন্য যাতে আপনার ও জীবন সুন্দর হোক।আর এই উৎসাহ বা প্রেরণা পেয়েছি বই পড়ে ও নিজের পরিবারে সেটা পরখ করে ।কারণ আমার সন্তান বিশাল কোনো মেধাবী ছাত্রী নয়, শুধু আমি ও স্ত্রী তাকে দিশা দেখিয়েছি এই পর্যন্তই।
আট- খরচপাতির হিসেব রাখা ও সেটা পাই টু পাই লিখে রাখা একটা ডায়রিতে এটা অবশ্য স্ত্রী নিজেই শিখেছে সুধা মূর্তির থেকে, তাঁর নানান লেখা পড়ে ও ভিডিও দেখে ।উনিও প্রভাবিত ছিলেন বিল গেটস থেকে, কারণ বিল গেটস নিজেও লিখে রাখতেন প্রতিদিনের প্রতিটা খরচ। পরোক্ষ ভাবে আপনার সন্তানও উপকারী হবে নিয়মিত লেখার অভ্যাস করতে, সেটাই এখানে বলার।সে লিখে রাখবে আপনাকে দেখে ও শিখে আজ ঠিক কি কি কাজ,পড়াশুনো, ও নানান রুটিন লিখে সেটা দিনের শেষে পূরণ করবো।নয়– উপরোক্ত ঠিক যা যা লেখা হলো সেগুলোই কমপক্ষে একুশ দিন অভ্যেস করুন হয়তো পাল্টে যেতে পারে ধ্যানধারণা। দশ– সারাদিনে যা শিখলেন সেটা পরিবারের মধ্যে আলোচনায় মূল পর্ব হিসেবে ভাবুন ও আলোচনা করুন সকলের মধ্যে, দেখবেন আপনি বাইরের যেকোন অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ভাবার আর সময়ই পাবেন না,কেমন করে যেন পাল্টে গেছেন নিজেও।
এগারো– নিজের পরিবারের উন্নতির জন্য ভাবুন, কিভাবে সার্বিক বিকাশ করা সম্ভব সেটা অবশ্যই বই থেকে পাওয়া শিক্ষা ও পরিবারের মধ্যে একে অন্যের সাথে আলোচনায়।কথাটা খুবই স্বার্থপরের মত শুনতে লাগবে এটা অভ্যেস করতে পারলে ও বাস্তবে রূপায়িত করতে পারলে তবেই আপনি আপনার সমাজের ও দেশের উন্নতির কথা ভাবতে পারবেন। আগে তো নিজে প্রয়োগ করুন তাই লেখার শুরুতেই বললাম স্বার্থপর হোন।
সাফল্যের পেছনে হাঁটুন, অর্থ আসবে আপনারই যোগ্যতার হাত ধরে একটা শিশুর মত হামা দিয়ে
আমরা অনেকেই দেখেছি নানান ছবিতে একসাথে মা সরস্বতী ও লক্ষ্মী দেবীকে।লক্ষ্মী চঞ্চলা তাই উনি ছবিতেও দাঁড়িয়ে থাকেন, আর সরস্বতী থাকেন বসে।শাস্ত্রে শোনা যায় দুজনে পাশাপাশি থাকেন না তাই থাকেন দূরে।যেসমস্ত বাড়িতে এই দুইজনই অধিষ্ঠান করেন খেয়াল করে দেখুন তাঁদের বাড়িতে আগে আসেন সরস্বতী অর্থাৎ জ্ঞান বা শিক্ষা, তারই পেছনে আসেন লক্ষ্মীদেবী।এমন উপমা আমরা আমাদের আশেপাশে সারাক্ষণ দেখি ও এটা একটা প্রচলিত কথাও আছে আমাদের মধ্যে ” অমুকের বাড়িতে লক্ষ্মী সরস্বতী একসাথে বিরাজ করে”।এখানে লক্ষ্মীর নাম আগে নেওয়া হয় কারণ গোঁসা হবে তাঁর যেহেতু উনি চঞ্চলা।
বারো– ইংরাজিতে একটা কথা আছে Win win situation অন্যের জয়ে খুশি হলে বা সম পরিমাণ উৎসাহিত হয়ে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করলে তবেই আপনারও জয় আসবে এটাই বাস্তব।আপনি জিতলে আমারও জয় হবে এই সামান্য জিনিষ ভাবতে পারলেই পাল্টে যাবেন আপনি নিজেও।আপনার হার হলে আমারও যে হার সেটা নিজে কখন বুঝবেন, ঠিক এই কারণেই একটা পরিবার, রাজ্য বা রাষ্ট্র দিন কে দিন পিছিয়ে পরে অনেকক্ষেত্রেই।
জাপান ধ্বংস হওয়ার মাত্র চল্লিশ বছরে এই একই চিন্তাধারা মাথায় নিয়ে টেকনোলজি ও প্রযুক্তিতে আজ পৃথিবীতে সেরা, আর সেখানকার মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে আশি বছর।IKIGHAI এক বই সেখানে সবিস্তারে বলা আছে দীর্ঘায়ু হবেন কি ভাবে।জানি এই বই কেনার সাহস যেমন অনেকে রাখবেন না আর পাশাপাশি অজুহাত দেবেন ইংরেজিতে লেখা তাই পড়তে অসুবিধে হবে। তারও উপায় আছে শুধু AUDIO BOOK শুনে। আমি বা আপনি সেটাও পারিনা বা করিনা। নিজেদের সামান্য একটু সফল হতেও যেখানে ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছেই নেই বরং অন্যের কীর্তিকলাপ নিয়ে ব্যস্ত সারাক্ষণ সেখানে ভালো কি করে আশা রাখি আমি বা আপনি।তবে হ্যাঁ ঘটা করে ঈশ্বরকে ডেকে আত্ম প্রসাদ লাভ করতে বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করেন ও সময়ও দেন।
তেরো– হৃত্বিক ঘটকের অসামান্য এক স্লোগান “ভাবুন আর ভাবা প্রাকটিস করুন” , আপনার ভাবনা চিন্তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আপনার সাফল্যের সঠিক পথ।বিল গেটস বলেন যেখানেই আপনাকে আপনার সমস্যা এসে ঠেকিয়ে দেয় রোজ আপনি এগোতে পারেন না থমকে যান সেখানে এসেই।এই সমস্যাই হলো আপনার সাফল্যের আসল চাবিকাঠি তাই আপনাকে থমকে দিয়ে ভাবতে শেখায়।আমি বা আপনি ভাবি ঠিক এরই উল্টো। থমকে দাঁড়িয়ে সেখান থেকেই ভাবনার জট খোলার চেষ্টা করুন, খুলে দিতে পারলেই বিপুল সাফল্য আছে লুকিয়ে।
ঝুঁকির পথে কোন ঝুঁকিই নেই, ওটাই বোঝার ভুল, কেবলমাত্র একজন সাহসীকেই উঁকি দেয় সাফল্য
আপনার নানাবিধ ভাবনার বিকাশ কিন্তু আসবে একমাত্র বই পড়ে কারণ আপনি যখন মন দিয়ে কোনো বই পড়েন সেটাও আপনাকে ভাবতে শেখায়। ঠিক যেমনটা পত্রিকার কোনো নেতিবাচক কাহিনী আপনাকে উৎসাহিত করে, আপনাকে ভাবায়। মনে রাখবেন আপনি বা আমি পড়ার সময় মনঃসংযোগ না করেও জোরে জোরে পড়তে পারি, কিন্তু লেখার সময় কোনকিছুতেই মনসংযোগ না করে একটা লাইনও লিখতে পারি না।তাই যা শিখলেন তাই লিখুন এটাই ছেলেমেয়ে শিখবে আপনার থেকে।
চোদ্দো– বিশেষত অভিভাবকদের জন্য বলছি কি করতে চান জীবনে আগামী পাঁচ বছরে নিজে ও পরিবারকে ঠিক কোথায় দেখতে চান লিখে ফেলুন আপনার গোপন ডাইরিতে।এর সহজ উদাহরণ হলো ভারতে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে এক “পঞ্চবার্ষিকী – পরিকল্পনা” হয় যেটা করা হয় শুধুমাত্র সেই লক্ষ্যের দিকে পৌঁছানোর জন্য।তাই দেশের যেকোনো বড় বড় পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। একটা দেশ যদি এই সংকল্পের কথা ভাবতে পারে আমি আপনি কেনো ভাবতে পারি না এতে তো আমরাই লাভদায়ী হব।সংকল্প লিখে রাখার আরেকটা গভীর কারণ হলো আপনাকে সেই লেখা প্রতিনিয়তই তাড়া করবে আর আপনি সবার অলক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন আপনারই লক্ষ্যে।
পনেরো– আপনার সন্তানকে একটা ডাইরিতে লিখে ফেলতে বলুন ঠিক তার নিজের কি কি জীবনের ইচ্ছে আছে সেটা প্রতিদিন দিনে তিনবার, ছয়বার ও নয়বার।যদিও এই বিষয়ে একটা বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া আছে আমার আরেক ব্লগে তাই নিচে দেওয়া লিংকটিতে ক্লিক করুন ও জানুন Nicola Tesla – The power of subconscious mind & 369।
BLOG MASTERS VOICE
এই ব্লগ লিখতে লিখতে সম্প্রতি দেখা একটা ভিডিও আমাকে নিজের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে, তাই নিজের পরিবারের জন্য সেই বইও কিনি ” Eat that Frog”।ঠিক কি বলা ছিল সেই ভিডিওটিতে সেটাই সকলকে জানানোর ইচ্ছে রাখলাম। লেখক যখন নিজে খুবই ছোট ছিলেন বয়সটা আনুমানিক দশ, বাড়িতে কোনো এক অতিথি এসেছিলেন উনি বলেছিলেন তোমায় সাতদিন সময় দিলাম জীবনে ঠিক কি হতে চাও সেটাই লিখে ফেল একটা ডাইরিতে।
একজন মানুষই পারেন অবচেতন মনের ইচ্ছেকে গোপনে লেখায় জানিয়ে দিতে সে কি হতে চায়,কারণ এই অবচেতন মনই আপনার ইচ্ছেকে শেষমেশ পূর্ণতা দেবে
ছেলেটি ও তার পরিবার কথাটা এতটাই বিশ্বাস করেছিল দিন তিনেকের মধ্যে সে অকাতরে লিখে ফেলে একশো দশ খানা মনের ইচ্ছে। ভদ্রলোক তখন তাকে বলেন এতগুলো তোমার জীবনের ইচ্ছে ? তাই তার বাবাকে বলেন এই লেখা ডাইরি রেখে দিন সন্তর্পনে আর ভাবুন কতদিনে আপনার সন্তান তার এই ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে ঠিক আপনি এর সময়সীমা কতদিন নিজে ভাবেন আপনি তো বাবা।তবে শর্ত একটাই কোনোদিনও আপনারা খুলেও দেখবেন না সে কি লিখেছে এমনকি ছেলেও না সময়ের আগে। বাবা নিজেও মত দিলেন আর জানালেন ছেলের যখন নিজের তিরিশ বছর হবে তখনই সে নিজেই খুলে দেখবে ঠিক কি কি ছিল তার মনের ইচ্ছে আর কতটা পূর্ণতা পেয়েছে সেই ইচ্ছে।
ইতিমধ্যে ছেলে বড় হয়ে গেছে দেশে বিদেশে নানান জায়গায় সে কর্মব্যস্ত যেমন নাম তেমনই তার খ্যাতি চারদিকে।এই সময়ের মধ্যেই বাবাও মারা গেছেন, মা আছেন জর্জিয়ার গ্রামের বাড়িতে একা।ছেলে ফিরে এলো ঠিক তার গ্রামের বাড়িতে যখন তার নিজের বয়স তিরিশ।বাড়িতে এসে প্রথমেই মায়ের সাথে বসে তাঁর অনুমতি নিয়ে সেই লেখা ডাইরি খুলে পড়তে থাকেন ঠিক কি কি লিখেছিলেন নিজের শিশুকালে।পড়তে পড়তে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন মাকে জড়িয়ে।
আর অবারিত চোখের জল পড়তেই মা জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁর কান্নার আসল কারণ ?কি তিনি লিখেছিকেন ?ছেলেটি বলেছিল আমার লেখা একশো দশটা ইচ্ছে সবটাই হুবহু মিলে গেছে মা প্রায় চার বছর আগেই আফসোস একটাই রয়ে গেলো আরো কিছু কেন লিখলাম না তখন? প্রসঙ্গত বলি উনি মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই আশি খানা দেশ সঙ্গে পাঁচটি উপমহাদেশ ঘুরে ফেলেছিলেন। এটাই ছিল তাঁর নিজের কাছে সেই শিশুকালের সবথেকে বড় ইচ্ছে যেটা মনের অজান্তে নিজেই লিখে রাখেন শিশুকালে।
“Eat that frog” এই বইয়ে বিস্তৃত বিবরণ আছে তাঁরই কথা।বর্তমানে স্থায়ী ভাবে থাকেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া শহরে আজও বেঁচে আছেন। অবচেতন মনকে লিখে জানান দেওয়া ও সেটার সফল পরিণতির হয়তো এর থেকে বড় কিছু উদাহরণ হতে পারে না। যদিও আমি নিজে আজও লিখি সত্যি কথা বলতে কি মেয়ের IIT পাওয়াটা ছিল আমার নিজের কাছে লিখে রাখা ও পরখ করে দেখে পাওয়া লেখার মাহাত্ম্য।
ষোলো– অবসাদ জীবনের অঙ্গ, তবে কখনোই বলবো না অবসাদগ্রস্ত হবেন না, ওটা বলা বা ভাবা মানেই হলো আপনি নিজেকে আরো সেই দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন। একবার ভেবে দেখুন তো এই অবসাদ থেকে আপনার মানসিকতা যদি হারের দিকে নিয়ে যায় ঠিক সেখানেই আপনি কতটা নিচে নামতে পারেন। তাই উল্টোটাই ভাবুন,আমার বা আপনার খারাপ কিছু হলে কতটা খারাপ হতে পারে, কতটা তলিয়ে যেতে পারেন সেই শেষ বিন্দুটা পর্যন্ত ভাবুন ।দেখবেন পাল্টে গেছে আপনার মনের অবসাদের পরিধিটাও, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন আপনি নিজেও বিপুল সাফল্যের সাথে।একটা বই থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকে বলি এক ঘটনা,কারণ মানুষ তাঁর জীবনে যা প্রত্যক্ষ করে বেরিয়ে আসেন সেটাই বলেন ও লেখেন,হয়তো তাই তাঁরা নিজের জীবনে সফল।
একবার এক ভদ্রলোক ডাক্তারের কাছে গেছেন, নিজের অসুস্থতা নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার বলেন আর কিছুই করার নেই আপনাকে ফেরানোর জন্য, কারণ আপনার লিভার ও কিডনি ভীষণই খারাপ অবস্থা আর সেটা এতটাই খারাপ যে কোনধরনের চিকিৎসায় আপনাকে আর ফেরানো সম্ভব নয়, বড্ড দেরি করে ফেলেছেন।ভদ্রলোক তাঁর আয়ুকাল জানতে চাওয়ায় ডাক্তার বলেন খুব বেশি হলে মাস খানেক তাও না।ভদ্রলোক খুবই বই পড়ুয়া মানুষ অনেক আগেই এই অবসাদ নিয়ে একটা বইও পড়েছিলেন তাই নিজের ক্ষেত্রে সেই উপলব্ধি কাজে লাগালেন।
অবচেতন মনই হলো আপনার সব ইচ্ছেশক্তির একমাত্র -“আঁতুড় ঘর”
বেরিয়ে পড়লেন দিন দশেকের এক সমুদ্রযাত্রায় সঙ্গে এক মৃতের কফিন নিয়ে। জাহাজে উঠতেই ক্যাপ্টেনকে বললেন আমার আয়ুকাল খুবই সীমিত তাই মারা গেলে ঐ কফিনের ভিতর আমার বাড়ির ঠিকানা রাখা আছে আমার মৃতদেহ যথা স্থানে পৌঁছে দেবেন।ক্যাপ্টেন ভদ্রলোকের কথাই বেশ অবাক ও হলেন এমন যাত্রী কখনোই কেউ শোনেননি বা দেখেননি। জাহাজের ডেকে বসে উনি প্রকৃতির শুধু আনন্দই নিলেন না বরং উনার পছন্দের সিগার ও খেতে শুরু করলেন যেটা তাঁর ক্ষেত্রে বারণ ছিলো।
যথেষ্ট আমোদ প্রমোদ করে নিজের কফিন নিজেই সঙ্গে নিয়ে নেমে এলেন দিন দশেক জাহাজে থাকার পর।প্রায় দুই মাস কেটে গেল, বিপুল আনন্দের সাথে দিনও কাটাতে লাগলন ,এবারে ঠিক করলেন ঐ একই ডাক্তারের কাছে আবারও যাবেন পরীক্ষা করাতে।ডাক্তার নিজেও অবাক উনার লিভার ও কিডনি প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ভালোর দিকে হয়তো বেঁচেও যাবেন।উনাকে জিজ্ঞাসা করতেই বলেন আসলে আমি নিজের কতটা খারাপ হতে পারে সেটা ভেবেই এগিয়ে চলছিলাম শেষবিন্দুর পরিণতি বুঝে ,এটাই যদি শেষ হয় তাহলে এখনের সময়গুলো কেনো নষ্ট করব ?হয়তো তাই ফিরছি নিজেরই ছন্দে। এর থেকেও আরেক বাস্তব সম্মত বই বলতে পারি জীবন থেকে শেখা – Victor Franklyn এর” Man search for meaning”। বইটি প্রতিটি মানুষের পড়া বা audio book শোনা উচিত, জীবনে একবার অন্তত।
আমি বা আপনি অবসর সময়ে অতিরিক্ত দিকশুণ্য হয়ে ভাবি বলেই খেই হারিয়ে ফেলি সেই ভাবনা থেকে যা আমাদের নামিয়ে আনে একেবারে তলানিতে।একবার ভাবুন কোন মানুষেরই কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না। যাঁদের এমনটা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাঁদের ভুল ভাবনার পথ তাঁরাই ঠিক করে চলেছেন,তাই বেঠিক হয়ে পড়েন। এবারে আপনি ভাবুন যেকোনো কিছু নিয়ে আপনি আকাশ কুসুম ভাববেন নাকি অবসর সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন বই পড়ার ক্ষেত্রে বা সারাক্ষণ কোনো না কোনো সৃষ্টি মূলক কাজে যা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সতেরো– জীবনে ঝুঁকি নিতে শিখুন, যে কোনো ঝুঁকি নিতে গেলে দেখবেন হয়তো অনেক কিছুই পার্থিব জিনিষ আপনাকে হারাতে হচ্ছে যার প্রতি আপনার এত মায়া।একদিন এই ঝুঁকিই আপনাকে সবই ফিরিয়ে দেবে শতগুণ হয়ে আপনার কাছে।ঝুঁকি হলো এমন এক পথ যা আপনার প্রতিনিয়তই পারফরমেন্স পরীক্ষা করে চলে।জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবেন প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন একটা সময় এই ঝুঁকি নিতেও আপনি পিছপা হবেন না,সেটা পরিণত হবে অভ্যেসে।
যেদিন সংকল্প ও লক্ষ্য আপনার শেষ সেটা যেকোনো বয়সেই হতে পারে, সেইদিন বুঝে নিন আপনি নিজে একজন দিকশুণ্য সাধারণ মানুষ ছাড়া আর কিছুই নন।ঝুঁকির একটা ভয়াবহ দিক আছে যা আপনাকে ভুলটা ভাবাবে প্রতিক্ষণে, কি জানি ঠিক করছি তো?কিন্তু আসল সত্য হলো ঝুঁকির দিকে এগিয়ে গেলে আছে শুধুই সাফল্য, বিফলতার কোনো পথই নেই সেই দিকে।জীবনে যাঁরাই সফল হয়েছেন প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন অভিজ্ঞতা,তাই হয়তো সেইসব কথা ভেবেই লিখে রেখেছেন আমার আপনার জন্য নানান বই।
আগেই বলেছি লেখার শেষে “why” নিয়ে বলবো,সন্তানের ক্ষেত্রে তার নিজের জীবনে ঠিক কি কি ঝুঁকি নিয়েছিল।এই লেখা যখন লিখছি তখনও মেয়ের ঝুঁকির শেষ ফলাফল জানিনা তবে শুধু বিশ্বাস থেকে নয়,তার প্রতিদিনের একটু একটু এগিয়ে যাওয়ার পথটা দেখতে পাই তার ক্ষেত্রে উঁকি দিচ্ছে এক সাফল্য যেটার জন্যই সে ঝুঁকি নিয়েছে,সেটাই হবে ভবিতব্য। তাই প্রথমেই বলবো ঠিক কি কি পেয়েছিল সে নিজের চেষ্টায়,নিজের বিশ্বাসের ভিত্তিতে,যেটা তাকে ভাবতে ও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল নানান বই থেকে।কেন এতকিছু পেয়েও সে এগিয়ে যায়নি কারণ বই থেকে পাওয়া এক সূত্র থেকে জানা,অনেক বড় কিছু পেতে হলে আগে যা পেয়েছ সেগুলো ছাড়তে শেখো।
সংকল্প আসে শিক্ষা থেকে, তাই লক্ষ্যের কোনো বয়স হয়না
আমার এক অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাম মোহাম্মদ হাবিব বয়স এই মুহূর্তে ৫৫, থাকেন পার্ক সার্কাসে,বছর দুয়েক আগে সে কলকাতা ম্যারাথন এ দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাঁর স্বপ্ন ছিল একটাই এই ম্যারাথনে আমি শুধু দৌড়বই না ,আমায় জয়ী হতে হবে।তাই সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে নানান বই কেনে ও সেটাই অক্ষরে অক্ষরে পড়ে এগিয়ে নিয়ে চলে নিজেকে সেই দিকে। সত্যিই সেই পথে এগিয়ে সে জয়ী হয় এটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন ও বই পড়ে বাস্তবকে ছুঁয়ে দেখা আর অবশ্যই বই পড়ার মাহাত্ম্য।জানতে চাওয়ায় সে বলে বই হলো এমনই এক মাধ্যম যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় অনায়াসে।
সত্যি বলতে কি এমন ম্যারাথন দৌড়ে বহু তিরিশ ঊর্ধ্ব যুবককে সেদিন ভাবতে শিখিয়েছে কি করে আপনি পারলেন।উত্তর ছিল তাঁর কাছে একটাই সেদিন ও আজও সেটা বই। আরো একটা অভিজ্ঞতার কথা সে বারবার বলে সেটা যোগ সাধনা। মুসলিম নামাজ পড়ে, হিন্দুরা যাঁরা যোগ সাধনা করেন তাঁরাও সফল হতে পারেন এটার কোনো বয়স লাগে না একেকটা বয়সে একেকটা উদ্দেশ্য থাকে।ছাত্রজীবনে যোগ হলো নিজের লক্ষ্যের দিকে সাফল্য, মধ্যবয়সে যোগ হলো সংসারের শ্রীবৃদ্ধি, আর বার্ধক্যে যোগ হোলো পুরো পরিবারকে একটা দিশা দেখানোর সঠিক মার্গ দর্শন।এটা যে যত তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলতে পারবেন ততই সে সফল।
আঠারো -আচ্ছা এবারে ভাবুন তো উপরের যে যে কথাগুলো লিখলাম এটা পড়ার পর আপনার কি একটুও মনে হবে না নিজের ক্ষেত্রে দেখাই যাক না আরেকবার ঝালিয়ে, যদি ভুলেও যান প্রতিদিন এই ব্লগ খুলে প্রতিটা পয়েন্ট ধরে ধরে নিজেও ভাবুন, প্রয়োগ করুন নিজের ক্ষেত্রে দেখবেন ধীরে ধীরে পথও খুঁজে পাবেন। এত সমস্ত পড়ার পর খুবই ভার ভার লাগছে তাই তো?
অনেকের আবার অনেকটাই হাল্কা লাগছে এতসব পড়ে।কেউ মনে মনে সংকল্প করছেন এমন ভাবেই এগিয়ে যাওয়ার। আবার কেউ ভাবছেন পড়তে হয়তো ভালো লাগছে তবে নিজের ক্ষেত্রে আমরা অতটাও স্বপ্ন দেখিনা বড্ড সাধারণ মানুষ আমরা, সবই ঈশ্বরের উপরে ছেড়ে দিয়েছি।
তাই বারেবারে বলেছি হয়তো স্বার্থপরের মত শোনাবে শুধুই নিজেকে নিয়ে এখন থেকে ভাবুন।আপনি যদি বই পড়ে কিছু হলেও ভাবতে পারেন, জ্ঞানের শ্রীবৃদ্ধি হয়, দেখবেন আপনাকে বা আপনারই সন্তানকে একদিন লোকে এসে জিজ্ঞাসা করবে সফলতার ঠিক আসল চাবিকাঠি সেটাই তো লিখেছি। যেখানেই কষ্ট সেখানেই মানুষ মুখ ঘুরিয়ে বিপথে হাঁটা দেন,আর দেখাবেন তৃতীয় হাতখানি যার নাম “অজুহাত”।
যাঁর যত বড় সংকল্প তাঁর ঝুঁকি যেমন বড়, সাফল্য ঠিক ততখানিই বড়, সেটা হয়তো অনেকখানি সময় লাগবে তবে পাবেন পুরোমাত্রায় শুধু নিজেকে বিশ্বাস করে।ঈশ্বরে বিশ্বাসী হন ভালো কথা সারাক্ষণ তাঁকে দাও দাও ও সন্তুষ্টির ভেট না দিয়ে আপনার জীবনে কি হতে চান আবারও বলছি লিখুন। কে বলতে পারে ঈশ্বর তাকিয়ে আছেন আপনারই ভরসায় আর আপনারাই অপেক্ষায়।
বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অন্যের পরিপূরক – বিশ্বাসটা নিজের উপর, এমন কথা যেমন স্বামী বিবেকানন্দ বলেন ঠিক তেমনটাই ডঃ কালাম বারবার বলেছেন তাঁরই বই “IGNITED MIND” এ
উনিশ– সর্বধর্ম সমন্বয় একথা যদি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন সেক্ষেত্রে নিজের বাড়িতে স্থান দিতে পারেন গীতা, কোরান, বাইবেল ও গ্রন্হ সাহেবের মতন বইগুলিকে,অনেকে ভাবছেন এটাও অবান্তর। এ এমন এক ধর্মীয় দিশা যা আপনাকে সাহায্য করবে অন্যের ধর্মকেও বিশ্বাস করার এবং নিজের চিন্তাধারারও আমূল পরিবর্তন ঘটাতে । পড়ুন ঠিক কি কি বলতে চেয়েছেন এনারা, বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হলে রোজ পূজো করুন পাল্টে যাবে হয়তো আপনার নিজের কাছে নিজের মানসিকতা। ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্য একেবারেই ঠুনকো নয়।এই চারটি ধর্মগ্রন্থ যেন এক মজবুত স্তম্ভ হয়ে আপনাকে নৈতিকতার দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে ভালো কিছু ভাবার ও সংকল্প করার।
এরপরও দেখবেন বেশিরভাগ মানুষ উপরোক্ত লেখাগুলো হয়তো মন দিয়ে পড়বেনও, কিন্তু ভুলে গিয়ে কিছুদিন পরে আবারও ফিরে আসবেন নিজস্ব প্রকৃত ছন্দে ।আপনি যত কিছুই তাঁর ভালোর জন্য শেখান না কেন মনের কালিমা ঘুচবে না তাঁর।কারণ এটা করতে করতেই সে জীবনের বহুটা সময় পেরিয়ে এসেছেন পাল্টাতে চাইলেও পাল্টাবে না। জীবনে সমালোচনায় যে আত্ম তৃপ্তি আসে,প্রতিক্ষণে অন্যকে নিয়ে ভাবার যে স্বাদ আছে সেখানে আমরা অনেকেই আজও ফাস্ট ক্লাসে বিচরণ করি।কিন্তু মনে রাখবেন সমালোচনা তাঁরই হয় যাঁকে আপনি ছুঁতে পারেন না বা আমার আপনার চিন্তাধারা থেকে তিনি অনেকই উর্ধ্বে থাকেন।তাই তাঁদের উদ্দ্যেশে একটাই কথা বলবো যাঁরা ছুঁতে ও ধরতে পারলেন না সমালোচকদের আরো একটু তলিয়ে রাখুন মানসিকতা আপনি হয়ে উঠতে পারেন সর্বশেষ কিন্তু প্রথম সারির এক নামকরা critics। নীচে একটা বিখ্যাত quote দেওয়া হলো হয়তো তাঁদেরই উদ্দেশ্যে।প্রথমে বাংলায় পরে সেটাই হিন্দিতে।
” জীবনে জিতের মাহাত্ম্য তখনই বোঝা সম্ভব, যখন আরেকজন মনে মনে উৎসব পালনের জন্য অপেক্ষায় আছেন আপনারই হারের”।
সন্তানের লক্ষ্য থেকে সাফল্যের পথে – ” why” খুঁজেও পেলাম
সালটা ২০২১, মেয়ের একের পর এক পরীক্ষা একেবারে তার সাথে নিজেদেরও নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে ছুটতে ছুটতে।প্রথমেই SAT পরীক্ষা দিয়ে শুরু। এই পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ ও টাকা দিতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে উঠেছিলাম। যেহেতু পাশ করলে বিদেশে পড়ার সুযোগ তাই টাকা পয়সা সাধারণ ভাবে দেওয়া সম্ভব নয়।তার জন্য হয় ক্রেডিট কার্ড থাকা বা paypal একাউন্ট থাকা , যদিও আমার paypal account আছে তবে ব্যবহার না করায় সেটাও expire হয়ে গেছে।তাই অনেক বন্ধুবান্ধব খুঁজে যার ক্রেডিট কার্ড আছে তাকে টাকা দিয়ে তার কার্ড ব্যবহার করে পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করি।
রেজাল্ট বেরোলো খুবই ভালো নম্বর পেলো যেটা অনেকে জানতে চাওয়াই তাদেরও পাঠালাম। বহু বিদেশের ইউনিভার্সিটি থেকে ডাকও এলো ,মেয়ে সেই সময় পড়ার জন্য যা স্কলারশিপ পেলো সেটা নেহাৎই মন্দ নয় প্রায় সত্তর শতাংশ।বাকি তিরিশ শতাংশের অর্থমূল্য আমায় দিতে হবে সেটাও ছিল বিপুল পরিমাণ তাও চল্লিশ লক্ষের কাছাকাছি।একটা সময়ে ব্যাংক লোনের কথাও ভাবি, জানি পেয়ে যাবো। মেয়ে বাধা দিলো, একশো শতাংশ স্কলারশিপ না পেলে সে কোনো অবস্থাতেই টাকা দিয়ে যাবে না।ইতিমধ্যেই সে linkedin মারফৎ সুধা মূর্তির পুত্র রোহণ মূর্তির সাথে যোগাযোগ করে যেটা আমি জানতে পারি বহু পরে মেয়ের থেকে।
উনি জানান Cornell University ভালো তবে ফল ভালো হলে পুরোটাই স্পন্সর পাওয়া সম্ভব টাটা গ্রুপ থেকে। উনি নিজেই পড়তে এসেছিলেন এই স্পন্সরের টাকা থেকে।মেয়ে বলল, বাবা দাঁড়াও না, সবে তো শুরু করলাম নিজেকে পরখ করতে আমি কতদূর নিজে জানি, কি কি শিখলাম, সেটারও তো প্রয়োজন আছে।স্থগিত হলো বিদেশে পড়ার ইচ্ছে।মেয়ে শুধু বললো নারায়ণ মূর্তির ছেলে যদি মা বাবার জন্য এতটা ভাবতে পারে নিজেদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক সঙ্গতি থেকেও, তাহলে আমার ভাবাটা অমূলক নয়।
এরপরের পরীক্ষা ছিল BITSAT সেটা মোটেই আশানুরূপ ফল ছিল না। এই পরীক্ষার আরেকটা সুবিধে হলো পরীক্ষা দিয়েই পরীক্ষার্থী নিজেই সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল জানতে পারে। মেয়ের যেমন বিশেষ একটা দুঃখ ছিল না তার সাথে সাথে আমার নিজেরও।তার কাছে দুঃখ একটাই সবকটা উত্তর সে দিতে পারেনি এমনকি নিজেরও জানা ছিল না, নম্বর পাওয়াটা তো পরের কথা। এর থেকে পাওয়া শিক্ষা একটাই যেখানে নিজের জ্ঞানের পরিধিতে কমতি আছে সেখানে উচিৎ নম্বর পাওয়া দুরস্ত।ঈশ্বর সেখানে বিমুখ থাকেন তাও আমরা অনেকেই উনাকে প্রতিক্ষণে ভেট দিতে থাকি। কিন্তু তিনি যেন কোথাও বুঝিয়ে দেন তুমি এখানের ঠিক যোগ্য নও তোমার জন্য অপেক্ষায় অন্য কিছু।
যাক পরের পরীক্ষা WEST BENGAL JOINT একটা আশানুরূপ ফল ও পেল, একেবারে সরকারী সংস্থায় পড়ার।মেয়েকে নিয়ে সেখানে গেলাম ও কিন্তু মেয়ের মনে চলতে থাকা ইচ্ছেগুলো ছিলো আমার সম্পূর্ণ অজানা।সে বেরিয়ে এসে বললো আমি কাউন্সেলিং এ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি বিশেষ ইচ্ছে নেই পড়ার, আরেকটু পরখ করি নিজেকে দেখাই যাক। বুঝলাম সে নিজেই “why” খুঁজে পেয়েছে এতদিনে হয়তো সেটা সময়ে বলবে।
এরপরের All india Joint যা আমার আপনার কাছে jee main নামে পরিচিত সেখানেও ভালো ফল পেল নিজের যোগ্যতার তুলনায় সেটা ছিল 94percentile, all india rank 52000, NIT DURGAPUR এ পড়ার সুযোগ এলো।আমি নিজেই আপ্লুত মেয়ের এমন নম্বরে কারণ একটাই ছিল সেটা মেয়ে যা হতে পেরেছে সম্পূর্ণটাই নিজের চেষ্টার ফল।কোনোদিনই কোথাও থেকে কোচিং নেই নি বা ভর্তি হয়নি।একটা পরিষ্কার ধারণা তার ছিল নিজে পড়ে,আর প্রয়োজনে যেখানেই আটকাবে সেখানেই পড়াশুনা সংক্রান্ত ধ্যানধারণা you tube থেকে নিতে পারলেই এগোনো সম্ভব।
স্বপ্ন যেদিন মেঘ হয়ে বাস্তবে ধরা দেবে, সেদিন পাহাড়ের শিখরে আরেকটু উঠুন, মেঘ বৃষ্টি হয়ে আশীর্বাদ দেবে আপনারই কষ্টার্জিত ফেলে আসা পথকে – যেটা ছিল আপনারই প্রাপ্য
পাশাপাশি নানান বই পড়া যেটা তার সংকল্পকে আরো মজবুত করল।এমনটা সে বুঝেছে বিল গেটস, warren Buffet থেকে শিখে। যাক একজন পরিচিত বন্ধুকেও পাঠালাম দুই একদিন পরে সে আমায় জানালো নম্বরটা ভালো তবে যথেষ্টই ভালো নয় যেহেতু rank 52000। মনে মনে বন্ধুকে দোষ নয় হয়তো তাঁর এই বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞানের অভাব তাই সে এইকথা বলেছে।সেদিন তাঁর কথায় বিন্দুমাত্র রাগ বা অভিমান না করে মনে মনে পাল্টে ফেললাম নিজের চিন্তাধারা একেবারে অন্যমাত্রায়।হয়তো সে এমনটা না বললে আমি ভুল থাকতাম।জীবনে কখনো কখনো কোনো নেতিবাচক কথাবার্তা হয়তো খারাপ লাগে কিন্তু তারই ভিতরে লুকিয়ে থাকে ইতিবাচক দিক, গভীরে ভাবলে সেটাও পাওয়া যায়।
আমরা ভাবি কম, তাই হয়তো মনে চলতে থাকে নানান সব ভুল দ্বন্দ্ব।বুঝলাম মেয়ের ভিতর চলতে থাকা ” why” এবারে আমারও মধ্যে উঁকি দিচ্ছে।মেয়ে গতবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে NIT DURGAPUR এ ভর্তি না হওয়ার জন্য অমত পোষণ করলো।তার মনের ইচ্ছে বুঝলাম ঠিক পরেরটা কিভাবে পাশ করা সম্ভব অর্থাৎ JEE ADVANCE। যাকে আমি বা আপনি চিনি ভারতবর্ষে দ্বিতীয় কঠিনতম পরীক্ষা হিসেবে যার নাম IIT । যদিও মেয়ে আমায় এই IIT নিয়ে কোনো কথাই জানায়নি।একজন বাবা হয়ে কিছুটা হলেও বুঝতে পারি ঠিক কি তার ইচ্ছে আর আমার সেখানে তাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ঠিক কি কি উপায় আছে সেটা নিয়ে ভাবার।এই নিয়ে চললো আমার ও স্ত্রীয়ের মধ্যে একান্তে মনে মনে ভাবা ও পথ খোঁজার একটা সঠিক দিশা যাতে তাকে দেখাতেও পারি।
একদিন এক ভিডিও ও একটা লেখা খুঁজেও পেলাম কি ভাবে IIT তে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।মন কোথাও বলে শুধু আমারই সন্তান নয় সবাই ঠিক এই জায়গায় বিভ্রান্ত, এমনটা আমার নিজেও হয়েছিল সেই ছেলেবেলায় ঠিক কি করবো। মা বাবা পয়সা দিয়েই খালাস থাকতেন কিন্তু সঠিক দিশা সেটা নিয়ে বলেননি কোনোদিনও কারণ তাঁদেরও জানার অভাব ছিল সেই জায়গায়, তবে দোষ দেই না তাঁদের কে। এখন যুগটা পাল্টেছে, সবই জানা সম্ভব একটু ঘাঁটাঘাটি করলেই। যাক স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে মেয়েকে নিয়ে বসলাম ও তাকে বললাম দেখ বাবা IIT পাওয়াটা খুবই সহজ কিছুই নেই শুধু সামান্য কিছু যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে উত্তর দিলেই সেখানেও পাওয়া সম্ভব।
আমার এমন কথায় সে আশ্চর্য্য হয়ে শুধুই নানান প্রশ্ন করেই চলেছে আমি নিজে এই পরীক্ষার সম্পর্কে কতটা জানি কতটা ভাবি আর ঠিক কি করলে সেখানে পাওয়া সম্ভব এই নিয়েই ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু।দেখলাম মেয়েরও ঠিক একই ইচ্ছে সে বলতে পারেনি এতকাল।কারণ সেটা ভাবা বা বলা তার কাছে ছিল সেই সময় আকাশ কুসুম ভাবনা, শুধু যেটা ছিল সেটা ইচ্ছে।আমি নিজে অবশ্য ক্লাস নাইনে তার টেবিলে একটা কাগজে লিখে আটকে দিয়েছিলাম তার লক্ষ্য, সেদিন ঠিক সে বোঝেনি বা আমল দেইনি কারণ সে তখনও জীবনের একটা গন্ডী ও পার হয়নি।
অধিকাংশই অভিভাবকেরা হয়তো এখানেই কিছুটা ভুল করেন কারণ কোথাও না কোথাও ছেলেমেয়েরা আশা করে তার মা ও বাবা এগিয়ে আসুক সেই একই কোনো বিষয় নিয়ে নানান দিক ও পথ দেখাতে তাদের কাছে।কারণটা খুবই স্পষ্ট তারা ভিতরে ভিতরে নিজেরাও কিন্তু একা, এটা একজন অভিভাবককে আগে বুঝে ফেলতে হবে। আমার এখানেই অভিভাবকদের বলার নিজেরাও ভাবুন, পড়ুন, কাউকে দেখে বা তার পথ ধরে চলা থেকে নয়, সেটাই ভুল হয়ে যাবে নিজের সন্তানের প্রতি।এমনটা লিখছি প্রত্যক্ষ করেছি জীবনের নানান দিক ছুঁয়ে ,ওই বয়সটা আমি নিজেও পেরিয়ে এসেছি।
এরপরেই শুরু হলো কিছু সংকল্প নেওয়ার পালা যেটা মেয়ের নিজের কাছে ও নিজে একজন অভিভাবক হয়ে।ঠিক কি কি করতে হবে বেঁধে ফেললাম কর্মসূচি ।এক -প্রতিদিন চোদ্দো থেকে পনেরো ঘণ্টা পড়াশুনো ও তার রুটিন করে দেওয়া ওটা করতে পারলে তবেই সম্ভব। দুই – বিগত দশ বছরের IIT র নানান পরীক্ষার QUESTION PAPER SOLVE শুধু করা নয় সেই পরীক্ষা নিজেও প্রতিদিন দেওয়া। তিন – ঠিক যেই যেই সময়ে IIT তাদের পরীক্ষা নেন সেই একই সময়ে বাড়িতে পরীক্ষা দিতে বসা ও সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা আমি এই মুহূর্তে IIT র ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি তাই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এই পরীক্ষা দেবো,বাকি ফলাফল সেটা সময় ।
চার– পড়াশুনোর পাশাপাশি প্রতি দুঘন্টা পরে একটা মিনিট পনেরো ব্রেক আর সেখানে পড়তে হবে নানান শিক্ষামূলক বই যেটা পড়ে সে নিজে উদ্বুদ্ধ হবে। পাঁচ-রাতে পড়তে বসে মেয়ের সাথে একই ঘরে আমি ও আমার স্ত্রী নিজেরাও ব্যস্ত থাকতাম কোনরকম সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থেকে কখনোই নয় তাতে মেয়ের পড়াশুনোর মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হবে। আমি আমার লেখালিখিতে আর স্ত্রীর ব্যস্ততা তার নিজস্ব you tube চ্যানেল নিয়ে কখনো এডিটিং নিয়ে বা নানান গল্পের বই পড়ে। ছয়– যদিও মেয়ের পরীক্ষার ধরন ধারণ আমাদের অবগত নয় কিন্তু একদিন সেটাও নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম আর পেয়েও গেলাম এক সঠিক পথের দিশা, সেটা শুধুই “ভাবুন আর ভাবুন ভাবা প্রাকটিস করুন” এই অসামান্য স্লোগানকে বিশ্বাস করে। ।
subject wise পরীক্ষার একটা মাসিক তালিকা বা চার্ট তৈরি করে ফেললাম দিন হিসেবে ।কোন কোন সালের কোন কোন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ও নিম্ন নম্বর মেয়ে পেলো, কতগুলো ভুল হলো সেই ভুলের সংশোধন করা আরেকটা খাতায় লিখে।এটা করতে গিয়ে দেখলাম ঠিক কোথায় তার ভুল ছিল বোঝার,সেটা সে নিজেও জানতে পারলো ও সেই subject নিয়ে আরো পুঙ্খানুুঙ্খভাবে বিশ্লেষণে তাকে জোর দিতে বলতেই পরবর্তী সময়ে ভুলের মাত্রা গুলোও ঠিক হয়ে গেলো। সাত– subject সম্বন্ধে খুঁটিনাটি আরো গভীরে যেতেই মনের প্রশস্তি দিন কে দিন বাড়তে থাকলো।
শুধুমাত্র এতটা করতে গিয়েই দেখলাম মেয়ে নিজেও যেমন সাহস পেলো আরো বড় কিছু ভাবার আর শেষমেশ পৌঁছে গেলো চূড়ান্ত সাফল্যে যেটা ছিল এই বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালে তার সর্বোচ্চ নম্বর jee main এ 98.97percentile।এই নম্বর পেয়ে সে নিজেও আপ্লুত জানে এতেই সে পেতে পারে ভারতবর্ষের সেরা NIT ENGINEERING COLLEGE, NIT SURATKAL সেটাও আবার COMPUTER SCIENCE নিয়ে। কিন্তু এতকালের স্বপ্ন যা তাকে হাতছানি দিয়েছে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সেটা ছিল IIT।ভারতবর্ষের প্রথম সারির তিনটি IIT সেগুলো হলো IIT MUMBAI, IIT DELHI, ও IIT CHENNAI। মেয়ে IIT MUMBAI যদি পায় ও কিন্তু স্বপ্ন এক ও একমাত্র সেটা IIT DELHI।
IIT DELHI নিয়ে এই স্বপ্ন সে নিজে দেখেছিল যখন সে এগারো ক্লাসে পড়ে।এই “WHY” জানার কারণ সে মনের গোপনে পুষে রেখেছিল এতদিন ধরে যেটা কোনোদিনই বলেনি ,তাই আমি বা আমার স্ত্রী জানতে বা বুঝতে পারেনি সেটা বুঝেছি অনেক পরে।ভারবর্ষে একমাত্র IIT DELHI যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা পাশ করে বেরোয় তাঁদের কে সরকার পক্ষ থেকে Entrepreneur তৈরী করতে সাহায্য করে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করে, মেয়ে ঠিক এটাই হতে চায়,এটাই ছিল তার WHY।পরবর্তী সময়ে স্যার আবুল কালামের বই ” IGNITED MIND” পড়ে এতটাই প্রভাবিত হয় যা আমি নিজে পড়ে সকলের কাছে আবেদন রেখেছি জীবনে একবার পড়ুন এই বই, যেমন নিজে তেমন সন্তানের জন্য।একটা জায়গায় এই বইয়ে বলা আছে যেটা মেয়ে নিজেও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।পড়াশুনো করুন ভারতবর্ষের THE BEST INSTITUTE থেকে আর সেখান থেকে বেরিয়ে বিদেশেও যান ভালো জায়গায় আরো শিক্ষাগত তালিম নিতে প্রয়োজনে সেখানে শেখার জন্য চাকরিও করুন কিন্তু শেষটা করুন দেশের জন্য।আজ দেশ আপনার দিকে তাকিয়ে তাই দেশের কথা ভাবুন।ঠিক এটাই ছিল মেয়ের বাস্তব স্বপ্ন আর খুঁজে পাওয়া ও পরিণতিতে WHY ফিরে পাওয়া জীবনে।
ভারতবর্ষের দ্বিতীয় কঠিনতম পরীক্ষা IIT, তাই সংকল্পের পথটাও ছিল দীর্ঘ।একটাই বুঝেছিলাম সংকল্প যত বড় সাফল্যের ও ত্যাগের পথটাতেও আছে দীর্ঘ লড়াই, এগোতে হবে প্রতিক্ষণে এক ধৈর্য্যে ও বিশ্বাসের সাথে
দীর্ঘ সাড়ে তিনবছরের যাত্রাটা নেহাৎই কম ছিল না।ত্যাগ দিতে হয়েছে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী,সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, আরামের জীবন, কোনোটাই নয় একটা দিনের জন্য ও নয়।হয়তো আমি এই তিন বছরে কোথাও না কোথাও গিয়েছি সেটা বাধ্য হয়ে বা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে তবে স্ত্রী নিজে কোথাও কোনোদিন একদিনের জন্যও যায়নি।তার জন্যে কথাও শুনতে হয়েছে আপনজনের বিয়েতে,অন্নপ্রাশন, বা নানান সামাজিক অনুষ্ঠানে।এমনকি নিজের অনেক আপনজনই ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে আমায় ও পরিবারকে। কিচ্ছু এসে যায়নি সেদিনও না আজও না বরং বুঝতে শিখিয়েছে আমার ভ্রান্ত ধারণা গুলো।
জীবন মানেই হলো কিছু পাওয়ার জন্য অসম্ভব sacrifice, সেটা উপলব্ধি করেই মেনে চলা সাফল্যের দিকে।আরো একটা কথা নিজের খুবই পছন্দের তালিকার কিছু জিনিষ প্রয়োজনে তাকেও ছাড়তে শেখা।আপনি যা হতে চান হয়তো সেটার কাছাকাছি আপনি পৌঁছেও যেতে পারেন ওটা আপনাকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার একটা উপায় আদৌ আপনি লক্ষ্যের দিকে কতটা অবিচল সেটা দেখার জন্য ঈশ্বর ঠিক এটাই প্রলোভন দেন।যেমন মেয়ের ক্ষেত্রে গতবছর ছিল সেই jee main এ 94percentile ও এই বছর সেটা বেড়ে দাঁড়ালো প্রায় 99র কাছাকাছি। কিন্তু বুঝেছি সে নিজে অবিচল, তার লক্ষ্য তো jee advance অর্থাৎ IIT। একটাই জিনিষ বুঝেছি সন্তুষ্টির কলস যতদিন না পূর্ণতা পায় ততদিন তারই লক্ষ্যে অবিচল থাকুন ছাড়তে শিখুন নিজের প্রলোভন তবেই আরো বেশি করে ফিরে পাবেন আপনার জীবনে।
Proper Prior Planning Prevents Poor Performance
বিপুল পরিমাণ সাফল্য আসলেও, সেটাই শেষ কথা নয়, ওটাই ভয়াবহের আরো একটা দিক। যেখানেই আত্মতৃপ্তি সেখানে লুকিয়েও থাকে এক “পরিসমাপ্তির অচেনা পথ”,বেশিরভাগ মানুষ ঠিক এখানেই ভুল করে বসেন,তাই ছেলেমেয়েদের বলবো এই ভুলটা তারা নিজেরাও যেন না করে। তাই একজন কৃতী ছাত্রছাত্রীকে বলবো নিমেষেই পরবর্তী সংকল্পের পথে সোচ্চার হতে, থেমে থাকলে চলবে না।এমন মনের একাগ্রতা বা সংকল্পের জোর একমাত্র আসতে পারে আবারও বলছি নিরন্তন যোগ সাধনা ও বই পড়ে।যিনি এই সারমর্ম যত তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলতে পারবেন তাঁর সাফল্যের ধারাবাহিকতা অটুট ও বজায় থাকবে ঠিক সমপরিমাণে, এটাই একজন মানুষকে আরেকজনের সাথে আলাদা করে সফলতার ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে।
” Shoot for the MOON & even if you miss you will reach the STARS”
একটা বাস্তব সম্মত কাহিনী বলি – Mr. Krishnamurty Subramaniam নামটা আমাদের কারোর অজানা নয়, ভারতবর্ষের ১৭তম, Chief Economic Advisor, বর্তমানে IMF এর ডিরেক্টর।
তাঁর শিশুকালটা মোটেই স্বচ্ছল ছিল না,কিন্তু মা বাবার ছেলেদের প্রতি সংকল্পটা ছিল গগনচুম্বী,সন্তানের নিজের স্বপ্ন ছিল সেটাও সীমাহীন। উপহাসিত হতে হয়েছে বারবার যেমন পাড়া প্রতিবেশী থেকে তেমনই আত্মীয়স্বজন থেকে। কারণটা ছিল একটাই তাঁর বাবার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না অথচ ছেলেদের পড়িয়েছেন বরাবর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে।নিজে কেরানীর চাকরি করতেন স্থানীয় এক দোকানে কোনোদিনই পায়ে চটি পর্যন্তও পড়েননি ওটা ছিল বিলাসিতা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন তাতেও সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যেতে হতো তাঁকে।
বহুবার সুদখোরদের থেকে টাকা ধার নিয়ে স্কুলের মাইনা পর্যন্ত দিতে হয়েছে , আর তাই পাড়াপ্রতিবেশী থেকে উপহাসিত হতে হয়েছে – তাঁদের একটাই কথা -সংসার চলে না অথচ ছেলেদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াচ্ছেন। এখানেও থেমে থাকেননি নানান বই কিনতেন ছেলেদের জন্য একমাত্র তাদের চিন্তাধারা যেন সঠিক দিশা খুঁজে পায়।জীবনের সফল হওয়ার আসল রহস্যটা বুঝে ফেলেছিলেন সেদিন এত অভাবের মধ্যেও ।মাঝেমধ্যে উপহাসিত হওয়ারও বিশেষ প্রয়োজন আছে ওটা সংকল্পের পথ আরো প্রশস্ত ও মজবুত করে।সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় ছেলে যেই সময় ভারতের খ্যাতনামা একজন সেরা ইকোনমিস্ট তখনও বাবাকে জুতো কিনে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবা নিমরাজি ছিলেন তখনও।
ঐ যে সংকল্প ওটাই মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ভাবে ঢুকে পরে , তাই তখনও তিনি ছেলেকে বলেন একই কথা ” ওটা বিলাসিতা,তাই নিষ্প্রয়োজন”।কে বলতে পারে তাঁর মনের সংকল্প হয়তো ওটাই ছিল নিজেকে নিংড়ে নিয়ে আজীবন রাখবো যেটা আমাদের সকলের হয়তো অজানা থাকবে কেউই জানতে পারবেন না আগামী দিনে তাঁর সংকল্পের আসল চাবিকাঠির রহস্য ।যাঁরা সেদিন উপহাস করেছিলেন তাঁরা আজ মুখে কুলুপ দিয়ে বসে আছেন হয়তো , আর উনি শিক্ষা দিয়ে গেলেন আমাদেরও একজন অভিভাবক হয়ে জীবনকে কি ভাবে দেখা উচিৎ, সন্তানের উন্নতির জন্য নিজেকেও বলিদান দিতে হয় তাঁর স্বপ্নের জন্য হাতটা বাড়িয়ে ও এগিয়ে যেতে হয় নিরন্তর, সেটা কখনোই টাকাপয়সা দিয়ে নয় বরং সন্তানের মতন করে প্রতিটা মুহূর্তে ভেবে।
ভাবতে ও লিখতে অবাক লাগছে কলম যেন আমায় বলছে পরবর্তী উপলব্ধির কথাগুলো আমাকে নিজেকে লিখতে দাও আজ আমি কলম হয়ে লিখবো দুটো মনের কথা আর পাঠক পড়বে। “হায়রে জীবন তুমি কি শিক্ষা দিয়ে গেলে, যে শিক্ষা পাওয়ার জন্য একদিন অর্থই ছিল পথের নিদারুণ কাঁটা, যে অভাব হয়ে ঠুকরে ঠুকরে অপমানিত করেছে প্রতিটা মুহূর্তে নিজের কাছে সংকল্প ও স্বপ্নকে হাতছানি দিতে, এতটুকুই তো চেয়েছিলেন তাঁর বাবা, আজ তাঁকেই সেই অর্থ নিজে পায়ে হেঁটে ভার দিয়ে গেল সেরা ইকোনমিস্ট হওয়ার খেতাব আর (IMF – INTERNATIONAL MONETARY FUND) আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার একজন কর্ণধার করে”। এরপরও কি আর কোনো শিক্ষার প্রয়োজন আছে আমাদের।যেখানেই অভাব সে নিজেই ফিরে আসবে জীবনে কয়েকগুণ হয়ে ধরা দিতে, এটাই বাস্তবে হয় আমরা বুঝি অনেক পরে।
পরের দ্বিতীয় কথা সেটা হলো লেখার শুরুতেই বলেছি ত্রিবেণীর ত্রিধারায় সরস্বতী বয়ে চলে অন্তঃসলিলা হয়ে যা আমরা দেখতে পাই না।”জীবনে যেটাই অদেখা তারই শক্তির ও ক্ষমতার প্রকট ও প্রভাব থাকে মানুষের জীবনে সবথেকে বেশি”।এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে এটাই বাস্তব ও চির সত্য। যেমন বিদ্যুতের মাত্রা ও প্রভাব চোখে দেখা যায় না সেটা ধরতে গেলেই জীবনের শেষ পরিণতি নেমে আসে মুহূর্তে। যেসমস্ত বাড়িতে সরস্বতী আগের থেকেই ঠিক করে রাখেন আসবেন বলে সেখানে লক্ষ্মীদেবী কখনোই আসেন না এটা যদিও সাময়িক ভাবে ঠিক। কোথাও যেন উনিও বোঝাতে চান আপনারা নিজেরাই ভুল ভাবেন আমরা বোনে বোনে খুবই মিল রাখি। তবে শর্ত একটাই শিক্ষা না থাকলে লক্ষ্মী কে ধরে রাখা বড়ই মুশকিল লক্ষ্মী ছোট থেকেই বড় চঞ্চলা, তাই আমার আগে আসাটা বিশেষ জরুরী বিদ্যে হয়ে।
জীবনে প্রতিটা সময় শিক্ষাকে প্রাথমিক মাহাত্ম্য ও প্রাধান্য দিতে পারলে তবেই অধিষ্ঠান করবেন এঁরা দুই বোন আপনার গৃহে সর্বক্ষণ। মনে রাখবেন একটাই জীবন,একটাই সংকল্প, একটাই সম্পর্ক (আপনার সন্তান ও পরিবার) যা আপনি পেলেন, ঈশ্বরও এক ও অদ্বিতীয়, তাই একা চলতে শিখুন শিক্ষাকে হাতিয়ার করে সারাটাক্ষণ, লক্ষ্মী আসবেন দুলকি চালে সারাজীবনই আপনার সাথে অধিষ্ঠান করতে, তবে আবারও বলবো আগে উপযুক্ত শিক্ষা।
সম্প্রতি মুম্বাই থেকে পাওয়া এক প্রতিবেদন পরিক্ষাথীদের উৎসাহিত করে করতালি অভিভাবকদের
সম্প্রতি আমার স্ত্রীর এক ফেইসবুকে IIT সংক্রান্ত মর্মস্পর্শী লেখা পড়ে সুদূর মুম্বাইয়ের প্রবাসী এক অপরিচিত বাঙ্গালী মহিলা নাম শ্রীমতী মহুয়া দে তিনি সেখানেও অনেক বড় একটা লেখা পোস্ট করেন।শেষমেশ আমার স্ত্রীও থাকতে না পেরে উনাকে ফোনও করেন ও বিস্তারিত এক আলোচনাও হয় তাঁদের। এখানে এতকিছু লেখার একটাই উদ্দেশ্য যেটা জানতে পারলাম পরীক্ষার দিন আপামর মুম্বাইবাসী যাঁদের সন্তানেরা সেদিন পরীক্ষা দিয়ে বেরোচ্ছে প্রত্যেককে করতালি দিয়ে সম্বর্ধনা জানাচ্ছেন।প্রত্যেকের মনের ভিতর একটাই কথা, একটাই গর্ব, একটাই সংকল্প যে তাঁদের সন্তানেরা ভারতের ও পৃথিবীর দ্বিতীয় কঠিনতম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে হার কিংবা জিত সেটা হয়তো সময় বলবে।
2022 সালে JEE MAIN পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে মোট 9,05,590 জন ছাত্রছাত্রী তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে JEE ADVANCE অর্থাৎ (IIT) র জন্য বসার ক্ষেত্রে সেটা 1,55,538 আর সেখান থেকে general candidate হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছে আনুমানিক মাত্র 20,000 জন ( কোনোধরনের সংরক্ষণের তালিকায় নয়)। যারা এই বছর উত্তীর্ণ হতে পারলেন না বা একেবারেই দোরগোড়ায় এসে ঠেকলেন তাদের জন্য বলবো আপনার সন্তান একেবারে সাফল্যের কাছে পৌঁছে গেছে একটা বছর তাকে সময় দিন।ঈশ্বর কোথাও না কোথাও এক ইঙ্গিত দিয়ে চলেছেন আপনি একেবারেই ছুঁতে চলেছেন সাফল্য ব্যস শুধু একটু ধৈর্য্য, একটু সময় দিন,।ঠিক এমনটাই হয়েছিলো আমার নিজের মেয়ের ক্ষেত্রেও গতবছর।শেষমেশ বলবো যদি তাও মন না মানে তাহলে ছাড়ার আগে অতি অবশ্যই এই দুটো বই পড়ুন ” Trillion Dollar Coach”, ও “Eat that Frog”। হয়তো পাল্টে যেতে পারে আপনার মতামত আর আগামী বছরে আমারই ব্লগে আপনি লিখবেন সামান্য এক “ধন্যবাদ” ওটাই আমার হবে সেদিনের জয় নিজের কাছে।কারণ আপনার সন্তানের সাফল্য আমাকেও যে উদ্বুদ্ধ করে তাই বলবো ” হাল ছেড়োনা বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে….”।
একজন বাবা হিসেবে তাদের জন্য আমারও দূর থেকে প্রাণখুলে করতালি দিতে ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে কারণ মানুষ এমন এক পরীক্ষায় হয়তো অনেকেই উৎসাহ দিতে ভুলে গেছেন যেটা মুম্বাই করে দেখলো এটারও বিশেষ প্রয়োজন আছে। একেবারে core of my heart থেকে বলছি win win situation তৈরী করুন কারণ আপনার সন্তানের জয় মানে আমার ও ভারতবর্ষের জয়।win loose situation ভুলে যান যেটা আজ বিপুল পরিমাণে সর্বক্ষেত্রে।মনে রাখবেন আপনার হার মানে আমার জয় কোনোদিনই হতে পারেনা ওটা অপ্রত্যক্ষ ভাবে আমাদের সকলেরই হার, তাই আজ দেশের আর্থিক পরিকাঠামো এতটাই পর্যুদস্ত।কে বলতে পারে একদিন আপনার কৃতী সন্তানই পাল্টে দিতে পারে গোটা ভারতবর্ষের চেহারা শুধুমাত্র আপনাদের একটু সুযোগ ও উৎসাহে, তবেই তো আপনি একজন দেশের সফল নাগরিক।