gift

BMV- 59 “MOTHER DAIRY – GHEE” – MIGHT BE FIRST TIME IN AMAZON HISTORY

সকালে ঘুমটা ভেঙেছে বেশ দেরিতে লেখালেখির কারণে রাতে ঘুমোতে ইদানিং দেরি হয়।গতকাল রাতে ঘুমোতে গিয়ে কিছুদিন আগে এমন এক ঘটনার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেলো তাই নিজেও হাসলাম আর স্ত্রী কন্যাকেও হাসালাম, কথাটা বলতে গিয়ে হাসি আর থামেই না। অদ্ভুত ব্যাপার সকালে ঘুম ও ভাঙলো সেই একই হাসির ছন্দ নিয়ে বেশ জোরে জোরে হাসতে হাসতে বিছানা ছাড়লাম, এমনটা কোনোদিনই হয়নি। স্ত্রী ও কন্যাও বুঝেছে আমার হাসির হেতুটা ঠিক কি? বুঝলাম হাসি দিয়েই যখন দিনটা শুরু হলো তাহলে দিনটা খুবই ভালো যাবে, গেল ও তাই, আসছি সেই প্রসঙ্গে । এবারে বলি ঠিক সেই হাসির আসল রহস্যটা।

আমার রহড়া মিশন কলেজের এক বন্ধু নাম মহিম চাকরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকে এখন থাকে ব্যাঙ্গালোর শহরে আগে থাকতো পাঞ্জাবের কার্নাল শহরে।গত পরশু অর্থাৎ রবিবার তাকে ফোন করি ফোন বাজলো কিন্তু এমন এক পাঞ্জাবী ভাষায় বলে গেলো ওপাশ থেকে কিছুই বুঝলাম না শুধু “মুন্ডা মুন্ডা” কথাটা বুঝলাম বাকিটা যেটা বুঝলাম সেটা সে নেটওয়ার্ক পরিষেবার বাইরে।বন্ধুটির এত ফোনের নম্বর আছে যে আমি নিজেই দিশেহারা থাকি মাঝেমধ্যে ঠিক কোন নম্বরে ফোন করলে তাকে পাবো।তাই আমারও মোবাইলে তার নাম সেভ করা আছে ” মহিম কার্ণাল, মহিম ব্যাঙ্গালোর” এই ভাবে।

যথারীতি ঘুরিয়ে আবারও তাকে ফোন করি এইবারে চেষ্টা শুরু হলো ব্যাঙ্গালোরের নম্বরে ।এই ভাষা বোঝা দুঃসাধ্য আমার কাছে কিছুই বুঝলাম না এটাই বুঝলাম মহিম এখানেও পরিষেবার বাইরে।ভাবলাম ব্যাটার ছেলে মহিম আছে টা কোথায় পাঞ্জাব ব্যাঙ্গালোর তোলপাড় করে দিলাম তাও বলে কিনা নেটওয়ার্কের বাইরে,একে তো খুঁজে বার করা দেখছি দুঃসাধ্য।

বহু আগে একটা নম্বর ছিল যদিও কোনোদিন সেই নম্বরে ফোন করিনি তাই ভাবলাম দেখা যাক সেটাতে শেষ বারের মত চেষ্টা করে,যদি পাওয়া যায়। ফোন করলাম সেই নম্বরে। হঠাৎ দেখি ফোনের ওপাশ থেকে একজন মহিলার গলা প্রথমটা একটু ঘাবড়ে গেলাম এ আবার কোথায় চলে গেলো নম্বরটা আমি তো একজন পুরুষকে ফোন করেছি মহিলা আবার কোথা থেকে এলেন?

উনি দেখি ওপাশ থেকে চিৎকার করে তারস্বরে বলে উঠলেন লমস্কার দাদা, লমস্কার ।কথাটা শোনা মাত্রই প্রথমটা ভ্যবাচ্যেকা খেলাম, একেবারে বিষম খাবার জোর দেখছি।কি বলছে রে বাবা ঠিক শুনছি তো? তাই আমি ঠিকমত শোনার জন্য আরো জোরের সাথে হ্যালো, হ্যালো বলে উঠলাম ।উনি বললেন হ্যাঁ দাদা আমি ঠিক শুনছি আর আপনি? আমি বললাম হ্যাঁ আমিও ঠিক শুনতে পাচ্ছি কিন্তু প্রথম বলা কথাটা কি ঠিক শুনলাম?( যদিও বলিনি সেটা ছিল মনে মনে),

পরখ করার জন্য আবারও হ্যালো বলাতে উনি সেই একই ছন্দে বলে গেলেন “লমস্কার, লমস্কার”। বুঝলাম বন্ধুটি বাড়িতে নেই বা আছে সেটা ঠিক জানা গেলো না ওর স্ত্রী ফোনটা ধরেছে। কিন্তু বন্ধুটির স্ত্রী “ন” কে “ল” বলেন, “ন” শব্দে হোঁচট খাওয়ার আধিক্য অনেকটাই বেশি উনার।মনে মনে ভাবলাম এই রে রবিবারের সকালটা তাহলে কি সব “ন” দিয়ে বলা আদ্দ্য অক্ষর “ল” দিয়ে শুরু হলো। একটু পরেই তো আমিও চুল কাটতে যাবো তাহলে ” লাপিতের” কাছে গিয়ে নিজেও কি এই একই বেঠিক কথাটা বলবো। যাক কিছু কুশল বিনিময় ও কথাবার্তা হওয়ার পর বন্ধু মহিম কোথায় জিজ্ঞেস করাতে ভদ্রমহিলা এমন লম্বা সুর টেনে বল্লেন ” উ তো লে…………. ই দাদা ,hair cutting এ গেছে”।

আমি নিজে এবারে হাসি আর চাপতে পারলাম না ঠিক উনার বলা দুটো কথায় ।প্রথমটা লে..ই এত জোরের সাথে বললেন বুঝলাম বাড়ির থেকে অনেকটাই দূরে গেছে বন্ধুটি চুল কাটতে। পরের কথাটি ঠিক লেখা যাবে না তাই সেটা ইংরাজিতে পরিবর্তন করে নিজেই উপরেই লিখলাম। আসলে ” hair cutting” কথাটা বলেননি উনি বলেছিলেন ( ঠিক এই শব্দটার হিন্দি অক্ষরে তর্জমা করলে যেটা হয় ঠিক সেটাই )।

আমি কোনভাবে নিজেও ভদ্রতার সুরে তাঁকে লমস্কার জানিয়ে ফোন টা কত তাড়াতাড়ি রাখবো সেটাই ইচ্ছে,এরপর হাসি চাপতে না পারলে ব্যাপার টা খুবই বাজে হয়ে যাবে,উনি হয়তো ভাববেন উনাকে উপহাস করছি। ফোনটা রাখতেই হেসেই চলেছি হাসি আর থামে না, তাই সেটা মনে পড়তেই গতকাল রাতে ও সকালে ঘুম থেকে উঠে হেসেছি।প্রসঙ্গত বলি বন্ধু মহিম ও তাঁর স্ত্রীকে কোনোভাবেই ছোটো করার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয় এটা নিছকই এক সত্যিকারের মজার কথা।আসলে বাঙ্গালী প্রবাসী হলে এত ধরনের কালচারের সাথে তাঁদের মিলমিশ হয় তাই সেটা ভাষাতেও অনেক সময় ধরা পরে এটা তাঁদের দোষ নয়।

Amazon রহস্যের উৎঘাটন, তাও একেবারে ফ্রী ….

এতকাল বাড়িতে বরাবর ঘি এনেছি সেটাও মাদার ডেয়ারী থেকে কারণ স্থানীয় মিষ্টির দোকানের বিক্রীত ঘি গুণ ও মানের দিক থেকে বিশেষ একটা ভালো নয়। কিন্তু ইদানিং কালে সেখানেও খোঁজ করে আর পাওয়া যায় না আসলেই মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। গত ১৮ তারিখ amazon fresh মারফৎ একই ঘি কিনি এক লিটারের তারা দাম নেন ৫৪০/- টাকা ডেলিভারি সমেত, সেটা যথেষ্টই কম, স্থানীয় মাদার ডেয়ারী থেকে।প্রতি মাসে amazon থেকে তিন চারটে জিনিষ প্রায়শই বাড়িতে আসে, তাই ডেলিভারি বয় তারাও চিনে গেছেন বাড়ি, তাই খুঁজতে তাদেরও বিশেষ বেগ পেতে হয় না। ট্রেক রেকর্ড খুঁজে দেখা গেলো সেটা তাঁরা একদিন পরেই অর্থাৎ ২০ তারিখেই ডেলিভারি করে দেবে, যাক ভালো কথা।

হঠাৎ দেখি সেদিনের বিকেলে অর্থাৎ ২০শে আগস্ট ডেলিভারি রিপোর্ট দেখাচ্ছে already delivered, কিন্তু তখনও পর্যন্ত পায়নি, এত ভারী অদ্ভুত এমনটা কোনোকালে হয়নি। তাঁদের customer care এ ফোন ও করি তাঁরাও রেকর্ড দেখে একই কথা বলেন আপনার অর্ডার সময়মত ডেলিভারি হয়ে গেছে। আমি পাইনি, এতো ডাহা মিথ্যে কথা বলছে amazon। চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে উনি বলেন একটু অপেক্ষায় থাকুন আমরা concall এ ডেলিভারি বয়কে নিচ্ছি ও আপনার সাথে কথা বলা বলাচ্ছি।

চেপে ধরতেই মিথ্যে কথা…

কথা হতেই ছেলেটি বেমালুম বলে উঠলো আপনারা ছিলেন না তাই বাড়ির বাইরে রেখে দিয়ে চলে এসেছি।কথাটা শুনতেই ভারী রাগ ও হলো সারাদিন আছি বাড়িতে অথচ ছেলেটি মিথ্যে কথা বলছে। তার কথামত বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত আবারও গেলাম,বাড়ির বাইরে রাখেই নি তো পাবো কি করে?যেই ভদ্রমহিলা কথা বলছিলেন তখনও উনি লাইন ধরে আছেন বুঝলাম উনি বাংলাটা বোঝেননি ডেলিভারি বয় আমায় বাংলাতে ঠিক কি বলেছে,তাই সেই কথাটা তাঁকেও হিন্দিতে বোঝালাম। এটা শোনার পরেই সে বললো একটাদিন সময় দিন আমরা দেখছি ঠিক কি করা সম্ভব।

পরের দিন তক্কে তক্কে আছি কেউ সদর দরজা খুললেই খপ করে ধরে ফেলবো সে নিশ্চয় চাপে পরে চুপিসারে দিয়ে পালাবে। বিকেল হলো সত্যিই কেউ আসেননি তাই আবারও amazon কে ফোন করলাম সেই একই চিরাচরিত কথা তাঁরা বললেন। বুঝলাম ব্যাপারটা গোলমেলে ,একটা বিহিত হতেই হবে তা না হলে সহজে ছাড়ছি না, amazon সংস্থার উপর বিশ্বাস পুরোমাত্রায় আছে তাঁরা এমনটা কোনোকালেই করেন না।নিজেরও একটা ভুল ছিল আমি বরাবরই অগ্রীম টাকাপয়সা দিয়ে রাখি, এক্ষেত্রে যেটা ভুল খাওয়ার দাওয়ারের ক্ষেত্রে COD অর্থাৎ তাদের ভাষায় cash on delivery করলে হয়তো চুরি যেতো না।

রাতে আবারও ফোন করি। তিনবার একই নালিশ জানালাম। তারপর তারা বলেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন মিনিট পনেরোর মধ্যেই আপনার টাকা আপনি পেয়ে যাবেন।তাঁদের যেমন বলা তেমনই কাজ সত্যি সত্যিই টাকাটা পেয়েও গেলাম। পরের দিন আবারও অর্ডার দেই কারণ মাদার ডেয়ারীর ঘি আমার ও বিশেষ প্রয়োজন কিন্তু এবারে পেমেন্ট অপশন COD।

বেলা গড়াতেই দেখি পাড়ার বেশ কিছু লোক আমায় ডাকছেন একটু বাড়ির বাইরে আসতে।বাড়ির বাইরে রাখা দেখি amazon লেখা একটা বড় কার্টুন। তাঁদের সামনেই প্যাকেটটা খুলি দেখি এবারে সযত্নে রাখা ঘি সেই প্যাকেটের ভিতর।বুঝলাম ডেলিভারি বয় ছেলেটি জিনিসটা হাপিস করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু amazon কর্তৃপক্ষের চাপে শেষমেশ হার মেনেছে তাই লুকিয়ে দিয়ে পালিয়েছে।যাক আমার নিজের কাছেও দোষী লাগছে কারন আগের দিন রাতে তারা আমায় টাকা ফেরৎ দিয়েছে অর্থাৎ এখনের পাওয়া ঘি সম্পূর্ণ ফ্রি আমার কাছে।

সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা তাঁদের জানাই ও কর্তব্যের খাতিরে ফোন ও করি কারণ একটাই সকাল সকাল বিনে পয়সার ঘি ও আমার পেটে ঠিক সইবে না, তাই তাঁদের প্রাপ্য টাকাটা ফেরৎ দিতে চাই, সেটা দেবো কিভাবে ওটার জন্যই তাঁদের ফোন করা। অনেকক্ষণ আমায় ফোনে অপেক্ষা করিয়ে ওপাশ থেকে মহিলাটি বললেন স্যার আমাদের এইধরনের কোনো অপশন নেই আর কর্তৃপক্ষ আপনার সততার জন্য আপনাকে শুধু ধন্যবাদই দিতে চান না সেটা amazon পরিবারের পক্ষ থেকে গিফট হিসেবে গ্রহণ করুন, ভাবলাম এমনটাও হয় তাহলে।

আমি আমার দ্বিতীয় দেওয়া অর্ডারটি ক্যান্সেলও করি কারণ এটা তো নিষ্প্রয়োজন আমার কাছে , সেটা অবশ্য amazon থেকে সেই মহিলাটি ও বললেন , যদি আপনার আর ঘি এর প্রয়োজন না থাকে আপনিই ক্যান্সেল করে দিন, আপনার দিনটি টাটকা ঘি নিয়ে শুভ হোক ও আনন্দে কাটুক।

ব্যাপারটা ভেবে বেশ ভালো লাগলো সকাল সকাল গিফ্ট তাও আবার ঘি, মনে মনে আবারও হাসলাম দিনটা হাসি ও “লমস্কার” দিয়ে শুরু করলে তাহলে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য্য প্রদীপের মত অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব। হাসুন প্রাণভরে হাসুন আর আপনার প্রতিদিনের দিনটা শুরু হোক এমনই “লমস্কার” দিয়ে নিজেও হেসে, আবার অন্যকেও হাসিয়ে।