care taker

BMV- 58 দারোয়ান ( GATE KEEPER)

মাস ছয়েক আগে প্রথম  গিয়েছিলাম এক স্বনামধন্য পৃথিবীবিখ্যাত চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি কর্ণধার ও পরিচালক শ্রী সত্যজিৎ রায় মহাশয়ের বাড়িতে।আজ বলবো সেদিনের সেই লোমহর্ষক নিজের কাছে নিজের এক অনুভূতির কাহিনী ।১/১ বিশপ লেফ্রয় রোড বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াতেই কেমন যেন চোখের সামনে ভেসে আসছিলো “পথের পাঁচালী, “অপরাজিত” আর “অপুর সংসারের শৈল্পিক সৃষ্টি ।ভারতবর্ষের প্রথম অস্কার জয়ী যেন সেই মুহূর্তে আমার খুবই কাছের একজন মানুষ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা হবে তাঁরই ছেলে শ্রী সন্দীপ রায় মহাশয়ের সাথে।

বিশাল এক লোহার গেট,গেটের মুখেই দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ দারোয়ান । বুঝলাম এনাকে পেরিয়েই, নিজের পরিচয় দিয়েই তবেই সাক্ষাৎ মিলবে শ্রী সন্দীপ রায়ের সাথে। মনে মনে তৈরি হচ্ছি আর হাতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় সেটা পেরোলেই পৌঁছে যাবো আর প্রথম সাক্ষাতে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়ে বলবো – ” মহারাজা তোমারে সেলাম”।বলিষ্ঠ সেই বৃদ্ধের বয়স প্রায় সত্তর পেরিয়েছে নাম জিজ্ঞেস করাতে উনি বললেন তাঁর নাম মোহাম্মদ হালিম খান, বাড়ি বিহারের দ্বারভাঙা জেলায় ।

মুখে স্মিত হাসি আর নির্লিপ্ত দুইখানি চোখ যেন আজও সাক্ষী বহন করে চলেছেন এই বাড়ীর এক একটি পুরোনো ইতিহাস।তাই প্রথমেই বেশ কিছু আলাপচারিতার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো নানান অজানা সমস্ত কথাবার্তা তাঁরই মুখ দিয়ে জানা।মানুষটার কাছে শুনলাম উনি দীর্ঘ বাইশটা বছর ধরে এই বুঁদির গড়ে প্রহরারত এক ভরসা যোগ্য দারোয়ান ও আজও রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন সেই গড় স্বমহিমায়।

শুনে একটু অবাক হলাম মোহাম্মদ হালিমের সাথে সত্যজিৎ বাবুর কোনোদিনই দেখা হয়নি, এমনকি পরিচয় পর্যন্ত হয়নি। সত্যজিৎ রায় চলে গেছেন আরো আট বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯২ সনে।তবে  হালিম বাবুর সাথে পরিচয় হয়েছিল সত্যজিৎ বাবুর স্ত্রী বিজয়া রায়ের একটা উপযুক্ত সম্মানের সাথে তাঁকে বরাবর দেখাশুনা করতেন একজন রক্ষী হিসেবে কখনোই নয় অধিকন্তু একজন বাড়ির সদস্য হিসেবে।

কথাগুলো শুনে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো একেই তো প্রকৃত শিক্ষা বলে ।সুকুমার রায় যাঁর দাদু শ্বশুরমশাই আর উপেন্দ্রকিশোর রায় যাঁর পূর্বসুরী,সেই বাড়িতে এমন উপযুক্ত শিক্ষার আবহ থাকলে সেটা যে তাঁদের উত্তরসূরির উপর বর্তাবে না এমনটা তো আশা করা যায় না ।বহু মানুষের সাথে এই বৃদ্ধের পরিচয়, ইদানিং কালে কারকার সাথে তাঁর পরিচয় হয়েছে জানতে চাইতেই অবলীলায় বলে গেলেন সেই সকল নাম যেমন – অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, নাসিরউদ্দিন শাহ, জাভেদ আখতার, শাবানা আজমি আরো কত নামীদামী লোকের নাম সমানে বলেই চলেছেন।

শুনে বেশ অবাকই হলাম আমরা এনাদের মত এমন গুণীজন সামনে পেলে নাজানি কত কথায় না বলতাম,কত ছবিই না সঙ্গে যত্নের সাথে রাখতাম অথচ এই বৃদ্ধের চোখে মুখে এতটুকু উত্তেজনা ছিল না, বলার ছন্দটা ছিল অতি স্বাভাবিক।যাক সময় হয়ে গেলো আমার সাক্ষাতের শ্রী সন্দীপ রায় মহাশয়ের সাথে তাই মোহাম্মদ হালিম আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমার সাক্ষাতের হেতুটা ঠিক কি।উনাকে বলতেই হবে না বললে সেখান থেকেই আমার বিদেয় ঘণ্টা বেজে উঠবে তাই আমার লেখা একখানি বই “ছোটন” বার করে উনাকে দেখলাম ও বললাম এই বইখানা দিতে এসেছি।

উপরে আমার সাক্ষাতের খবর ও হেতু দেওয়ার সাথে সাথেই আমার ডাক এলো।বৃদ্ধ আমায় এগিয়ে দিয়ে তিনতলায় যাওয়ার পথটা ঠিক কোনদিকে তা দেখাতে  সঙ্গে নিয়ে গেলেন।সামনে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই লিফট, বললেন দুই নম্বর টিপে উপরে চলে যাবেন আর তারই পাশে দরজা সেখানে আট নম্বর লেখা, বাইরে থেকে কলিং বেল বাজালেই হবে।

মনে মনে এক সাংঘাতিক উত্তেজনা আর সেই পুরোনো কালের লিফটে আমি একা।সমানেই কেন জানিনা বারবার মনে হতে লাগলো আজ থেকে হয়তো প্রায় তিরিশ বছর আগে সত্যজিৎ বাবু এই একই লিফ্ট দিয়ে না জানি কতবারই না ওঠানামা করেছেন, বাকি বহু খ্যাতনামা শিল্পীরাও আনাগোনা করেছেন এই একই লিফটে, তাঁদের পায়ের ধুলো এই লিফটের আনাচে কানাচে হয়তো আজও লুকিয়ে আছে।উত্তেজনায় থাকতে না পেরে নিজেও লিফটের গায়ে হাত বোলালাম না জানি কোনো নামী লোকের হাতের পরশ ও অদেখা ছাপ হয়তো তখনও সেখানে আছে, লিফট এসে থামলো দোতলায়।

আট নম্বর ঘরের বাইরে সেই পুরনো দিনের কালো গোল ও মাঝে সাদা বোতামের  কলিং বেলের সুইচটার উপর আঙ্গুল রেখে টিপবো কি টিপবো না এই ভেবে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়ালাম। সেটা ভয়ে নয় সেটা পুরোমাত্রায় জায়গাটাকে উপলব্ধিতে আনতে ও আরো কিছুক্ষণ থাকার জন্য। এরপর কলিং বেল বাজাতেই বাইরে থেকে ঠিক শোনা গেলো না বাজলো কি বাজলো না, ভয় হলো কিজানি বাজলো তো, আবারও কি আরেকবার টিপবো- বরাবরের অভ্যেস যেমনটা হয় বাড়িতে। থাক আর টিপে লাভ নেই আরেকটু না হয় অপেক্ষায় করি।

বেশ কিছু বাদেই ওপাশ থেকে এক মধ্য বয়সী ভদ্রলোক সদর দরজা খুলে দিলেন।দরজা খুলতেই  চোখের সামনেই খুলে গেলো এক লম্বা বারান্দা আর বারান্দার ডানপাশে বিশাল বিশাল উনারই সৃষ্টির সব চলচ্চিত্রের পোস্টার “সোনার কেল্লা”, “গুপি গাইন বাঘা বাইন”,”অপরাজিত” প্রায় সবটাই দেওয়ালে লাইন দিয়ে একে একে। কেমন যেন বধির হয়ে দেখেই চলেছি সমানে, যেন মনে হলো সিনেমা দেখতে এসেছি হলে কোন ছবিটার টিকিট কাটবো এই মুহূর্তে।

আমি জুতো মোজা কোথায় খুলবো এই নিয়ে ইতস্তত করছি বরাবরের অভ্যেস গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকতে গেলে জুতো খুলতে হয়।দরজা দিয়ে ঢুকেই কিছুদূর এগোতেই ডানদিকের একটা বিশাল ঘরের থেকে একটা অতিপরিচিত গলা ভেসে এলো ” জুতো খুলতে হবে না এমনিই চলে আসুন” ।বুঝলাম আমার ঢুকতে দেরি হচ্ছে দেখে উনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন, উনি আর কেউই নন স্বয়ং শ্রী সন্দীপ রায়।

আমি ঢুকতেই চাক্ষুষ জলজ্যান্ত মানুষটাকে সামনে দেখতেই নিজের চোখকে  ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিছুটা নিজেকে সামলে উনাকে দেখেই দুইহাত তুলে আগে প্রণাম সারলাম, উনিও দেখি দাঁড়িয়ে আমায় প্রণাম করলেন আর একপাশে রাখা এক চেয়ারে আমায় বসতে বললেন।উনি বসলেন সেই পরিচিত এক চেয়ারে যেমন আমরা সত্যজিৎ বাবুকে নানান ছবিতে দেখে এসেছি,পরনে পাজামা ও পাঞ্জাবী।আমি চেয়ারে বসতেই নিজের সামান্য পরিচিতি দিলাম বর্তমানে কোথায় থাকি, বাল্যকাল কোথায় কেটেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপরেই আমার লেখা বই “ছোটন” উনার হাতে তুলে দিলাম।বইয়ের সারমর্ম ঠিক কি জানতে চাওয়াতে সেটাও বললাম সংক্ষিপ্ত ভাবে ও আগামী দিনের স্বপ্নটা ঠিক কি এই বই নিয়ে, কেন তাঁর কাছে আসা সেটাও জানালাম।

ভদ্রলোক অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছেন আর তাঁরই বাম পাশে একটু দূরে বসে আছেন তাঁর সহধর্মিণী শ্রীমতী ললিতা রায় তিনিও শুনছেন আমার প্রতিটি কাহিনীর কথা।আরো বেশ কিছু লোকজন ছিলো তাঁদের ঠিক চিনি না। উনার পেছনে স্তুপাকৃতি সারিসারি বই আর বাম দিকে একটা টেবিলের নিচে কাঁচের মধ্যে দিয়ে উঁকি মারছে সত্যজিৎ রায়ের পাওয়া নানান পুরস্কার ও অস্কারের সেই পরিচিত খেতাব। আমার কাহিনী শুনে উনি শুধু বললেন বইখানি পড়ে নিশ্চয় জানাবো আপনার ফোন নম্বর তো বইয়ে দেওয়াই আছে অসুবিধে নেই, এতটুকুই উনার মুখ থেকে শুনে সে যে কি আনন্দের তৃপ্তি সেটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে এইমুহুর্তে দুঃসাধ্য । যাক সময় শেষ, মুখ ফস্কে বেরিয়ে এলো একটা কথা “একটু আপনার পা ধরে প্রণাম করতে পারি?”

উনি বললেন “তার কি কোনো প্রয়োজন আছে” কেন জানিনা মুহুর্তে মনে বল ও সাহস দুটোই পেয়ে গেলাম উনার কথায়  ” আপনার আপত্তি থাকলে করবো না, কারন এখনও করোনা কাল যায় নি তাই হয়তো….”। উনি বললেন ” না ঠিক তা নয়, ঠিক আছে করুন আমার ব্যক্তিগত কোনও আপত্তি নেই”। প্রণাম সারতে সারতেই সেই মুহূর্তে মনের মধ্যে যেই কথাটা এসেছিলো সেটাই বললাম উনাকে।”আসলে আপনাকে প্রণাম করা মানেই সত্যজিৎ রায়কে পা ছুঁয়ে প্রণাম করা সেই অর্থে, আপনার মধ্যে দিয়ে তো তাঁরই রক্ত বয়ে চলেছে তাই বিশ্বাসের সাথে একসঙ্গে দুজনেরই আশীর্বাদ মাথায় নিলাম, এমন ভাগ্য কতজনেরই বা হয় বলুন”।

কথাটা শুনে স্মিত হাসলেন আর বললেন “বাহ ভারী চমৎকার কথা বলেন তো মশাই”। এরপরই আরো একটা মনের আর্জি জানালাম সেটা ছিল উঠে আসার শেষ ইচ্ছে উনার সাথে ছবি তুলবো বলে।কথাটা বলতেই উনি উনার সেক্রেটারিকে বললেন একসাথে আমার নিজের মোবাইল দিয়ে দুজনের ছবি তুলে দিতে। ছবিও তোলা হলো বেশ কয়েকটা।কিন্তু অবাক হলাম উনার কথায় আমার মোবাইলে তোলা ছবি উনি দেখতে চাইলেন আর বলে উঠলেন “দেখি তো আমার আপনার ছবিগুলো ঠিক কেমন হয়েছে”।

কথাটা শুনেই বেশ ভালো লাগলো এতবড় একজন মানুষ অথচ আমার মত একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছবি তুলে সেটাও উনি দেখতে চাইছেন। হয়তো এমন ধরনের মানুষেরা ঠিক এমনই স্বাভাবিক হন যেটা আমরা বাইরে থেকে উনাদের সন্বন্ধে হয়তো অনেক ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই চলি যেটা আমাদের ভাবার ভুল।বেরিয়ে এলাম এক পুরোমাত্রায় প্রত্যাশার আত্মতৃপ্তিকে সঙ্গে নিয়ে আর একজন ভালো মানুষের আরেকজনের প্রতি নির্ভেজাল মূল্যবোধ কতখানি সেই বোধ নিয়ে।

১৩ই আগস্ট,২০২২ “মাধু” কাহিনী নিয়ে

http://মাধু https://amzn.eu/d/cQdQLVd

এবারে সন্দীপ রায়ের সাথে দেখা করার সময়টা ধার্য্য হয়েছিলো একটু পরের দিকে বিকেল ঠিক ৫.৩০। আমি আগেভাগে চলে গেছি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে সেটা হলো সেই দারোয়ান অর্থাৎ মোহাম্মদ হালিমের সাথে জমিয়ে আলাপ করতে হবে আর সঙ্গে বেশ কিছু বই “ছোটন” নিয়ে উনাকে দেবো বলে।কারণটা একটাই উনার হাতে এই বই তুলে দিলে উনি নিশ্চয় বেশ কিছু নামী পরিচালকের হাতে আমার বইখানা তুলে দেবেন যেহেতু সেই বাড়িতে প্রতিনিয়তই নানান পরিচালকের আনাগোনা লেগেই থাকে।

যথারীতি প্রতিটা বই একেবারে গিফ্ট প্যাক করে সঙ্গে নিয়ে গেছি।তবে বাড়ির সামনে পৌঁছতেই দেখি দারোয়ানের প্রহরায় মোহাম্মদ হালিম নেই সেখানে অন্য আরেকজন মধ্যবয়সী লোক দাঁড়িয়ে। পরে উনার নাম জানতে চাইলে উনি বললেন উনার নাম শেখ আব্দুল শরীফ ।কিছুক্ষণ পরে দেখি দূর থেকে মোহাম্মদ হালিম নামে আমার সেই পরিচিত বৃদ্ধ হাতে চায়ের কাপ ও কেটলি নিয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে আসছেন।

উনাকে দেখেই মনে বল ফিরে পেলাম উনিও দেখে আমায় চিনতে পারলেন ও বললেন ” কিতনা দিন বাদ অ্যায়া সাহাব, ফির কোই কিতাব দেনা হ্যায় ক্যা”।ভালো লাগলো বৃদ্ধ আমায় মনে রেখেছেন , দেখি আমাকেও চা এগিয়ে দিলেন, নিমরাজি ছিলাম কিন্তু ফেরাতে পারলাম না। দুই দারোয়ানের সাথে আলাপ জমানো শুরু করে দিলাম উদ্দেশ্য নিজের ঐ এক সামান্য স্বার্থসিদ্ধির লোভে।আলাপ বেশ ঘোরতর হলো সঙ্গে জুটে গেল দুজনেরই ব্যক্তিগত ফোন নম্বর যেটা আমার একান্তই দরকার ছিল।আরো একজন খুবই নামী মানুষের ফোন নম্বর বেরিয়ে এলো কথাবার্তায় যেটা এই লেখায় ঠিক উল্লেখ করা যাবে না তিনি কে।

যাক সময় হয়ে গেলো সন্দীপ রায়ের সাথে সাক্ষাতের। উনারা বললেন আপনি তো চেনেন তাই খবর পাঠাচ্ছি না আর সঙ্গেও আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি না নিজেই চলে যান, আপনি তো সবই জানেন।যথারীতি উপরে উঠতেই সেই কলিং বেল বাজাতেই এক মহিলা পরিচারিকা বেরিয়ে এলেন উনি বললেন আজ বিশেষ কারণ বশত উনার সাথে দেখা হবে না।উনি খুবই ক্লান্ত সবে পুরী থেকে সতেরোদিন পরে শুটিং শেষ করে ফিরেছেন। যাক কি আর করার বইখানি সেই পরিচারিকার হাতেই তুলে দিলাম সঙ্গে আগের থেকে লেখা একখানি চিঠি, যদিও সম্পূর্ণ বইখানা ও চিঠি গিফ্ট প্যাক করা, কিছুটা হতাশ হয়ে নেমে এলাম।

চিঠিতে লেখা ছিল বাড়তি এক আর্জি যেহেতু বাল্যকাল কেটেছে ঘাটশিলায় তাই বিশেষ ইচ্ছের কথা বিভূতিভূষণের আবক্ষ মূর্তির  পাশে যদি সত্যজিৎ রায়ের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা যায়। যদিও বিভূতিভূষণ কমিটির সাথে কিছুদিন আগেই আমার এই আর্জি নিয়ে ফোনে কথা হয় ও উনারাও একই অভিমত পোষণ করেন। উদ্দেশ্য একটাই ঘাটশিলার অধিকাংশ ছেলেমেয়ে বিভূতিভূষণকে  চেনে কিন্তু সত্যজিৎ রায়কে অনেক স্কুলের বাচ্চারাই হয়তো চেনে না তাই আমার নিজের এক ঐকান্তিক প্রয়াস।

যাক মনকে এটাই সান্তনা দিলাম আমাদের নিজেদের ও তো এমন অনেক সময়েই হয় কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনা অনেক সময় তাই মেনে নিলাম। নিচে আসতেই উনারা কিন্তু একই কথা বললেন সন্দীপ রায় সবেমাত্র পুরী থেকে ফিরেছেন। ইতিমধ্যেই শুনি উনারা ঠিক করে ফেলেছেন আমার বই ঠিক কাকে কাকে দেবেন। তারই মধ্যে একজনের কথা বললেন প্রায়শই সেখানে আসেন আনন্দবাজারের একজন বর্ষীয়ান এডিটর উনাকে দেওয়াটা বিশেষ প্রয়োজন।

এরপরই উনারা আমায় আশ্বস্ত করে বললেন দাঁড়ান আপনাকে খালি হাতে ফেরাবো না আজ সন্দীপ রায়ের ছেলে সৌরদীপ রায়ের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেবো। মোহাম্মদ হালিম ও শেখ আব্দুল শরীফ দুজনেই সৌরদীপ রায়ের নাম বলতেই পঞ্চমুখ। উনারা বলে উঠলেন দেখে ও কথা বললে আপনি বুঝবেন ছেলেটি এতটাই মাটির মানুষ। বলতে বলতে গেটের অপর পাশে এক চায়ের দোকানে খোঁজ নিতে গেলেন বাড়িতে থাকলেই বেশিরভাগ সময়েই সৌরদীপ সেখানেই সময় কাটান, স্থানীয় সব মানুষের সাথে আলাপ ও সখ্যতা আছে তাঁর ভালোই।

ফিরে এলেন সেখানেও সে নেই আজ হয়ত ঘুমোচ্ছে পরের দিকে নামবে। একটা কথা দুজনেই বললেন বেশ ভালো লাগলো শুনে যতবারই বাড়ির থেকে সৌরদীপ নিচে নামেন ততবারই গেটে তাঁদেরকে সেলাম করবেনই করবেন।কথাটা বলতে বলতে বৃদ্ধ এতটাই আপ্লুত প্রায় চোখের কোনায় উনার জল চলে এলো।আমায় শুধু চোখ মুছতে মুছতে একটাই কথা বললেন ” সাহাব সিকছা এক আইসী চিস হে যো ইনহী কি ঘর সে সদীও সাল সে চলে আ রহা হেয়”।বুঝলাম কতখানি ছুঁয়ে গেছে এই বৃদ্ধকে এই বাড়িটি তাই সুদূর দ্বারভাঙার মায়া ছেড়ে এই বয়সে আজও যক্ষের ধনের মত প্রহরায় দাঁড়িয়ে আছেন ভদ্রলোক।

আমার এই শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের দারোয়ান কাহিনী এই জন্যই লেখা একজন পরশ পাথরের ছোঁয়াতেও যে সোনা হয় এটাই শেখার। নইলে আমার মত একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে এনারাও বা কেন এত ব্যস্ত হবেন আমার বই ঠিক কোন কোন পরিচালকের হাতে তুলে দেওয়া যায় তারই চিন্তায়। যদিও “ছোটন” কাহিনী বেশ কিছু পরিচালকদের হাতে পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যেই আর “ছোটন” কাহিনী পাড়ি দিয়েছে বিদেশেও এক নামী সংস্থার কাছে যেটা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ ভাবে উহ্য থাকায় শ্রেয়,সেটা সময়ে বলবো। তবে আর একটি খুশির খবর নিজের কাছে সেটা মুম্বাই Script Writers Association এর আমি নিজে এই মুহূর্তে একজন সদস্য। তাই আমার লেখা প্রতিটি বইয়ের কপি সেখানেও জমা হয়ে গেছে।বর্তমানে তাঁরা আমায় সেই মেম্বারশিপের কার্ড ও পাঠান।