MEMOIR

BMV-57 মহিমের খেরোর খাতা – পাগল ও গাড়ি বিভ্রাট

বহু জমাটিয়া মজার মানুষ দেখেছি কিন্তু মহিমবাবুর মত এত প্রাণোচ্ছল মানুষকে খুঁজে পাওয়া হয়তো অতি বিরল।জীবনে উঠতে চলতে খেতে বসতে এমনকি ঘুমোতে গেলেও  রসিকতা না করে ঘুমোতে যান না।অথচ নিজে বলার সময় এতই স্বাভাবিক থাকেন তাতে যিনি শুনছেন প্রথমত যিনি তাঁকে না চেনেন ব্যাপারটা হজম করতে একটু অসুবিধে হবেই হবে।

মহিমবাবুর বয়স এই পঞ্চাশ পেরিয়েছে মাত্র কিন্তু তাও নিজেকে আজও চনমনে ও খোস মেজাজের এক তরতাজা উঠতি বয়সী যুবক বলে ভাবেন।নিজে ও সেটা মাঝেসাঝে জোর গলায় বলেন ও।বাল্যকালের বহু মজার ঘটনা আছে তবে সেসব স্মৃতির মন্থন করতে হবে আস্তে ধীরে সবই বলবো তাঁর সন্বন্ধে।যাক শুরু করি তাঁরই ইদানিং কালের প্রায় মধ্য বয়সের বেশ কিছু মজার ঘটনা নিয়ে তাই প্রথমেই শুরু করা যাক গাড়ী বিভ্রাট।

সালটা দুহাজার সালের জানুয়ারী মাস, শীতকালের সকাল মনটা বেশ ফুরফুরে মেজাজে মহিমের ঘুম ভাঙলো বাড়ীর কাজের মাসী বুলা পাগলীর বকবকানিতে। সে সকাল সকাল  বাড়িতে কাজে আসলেই হল, এতই বকবক করে নিজের মতন তাতে বাড়ির সকলের ঘুম তো ভাঙবেই। বেলা বাড়লেই এই বকবকানি বেড়ে গিয়ে দাঁড়াতো অকথ্য গালাগালিতে ।তাই মহিমের মা তাকে পাড়ায় অন্যের বাড়িতে কাজে আসার আগেই নিজের বাড়িতে কাজের জন্য আগেই ডেকে নিতেন।

বহুদিন মহিম রেগে গিয়ে মাকে বলতো মা বুলা পাগলীকে এবারে ছাড়িয়ে দাও সকাল সকাল ওর পাগলামী শুনে ঘুম থেকে উঠতে আর ভালো লাগে না।মহিমের মা অবশ্য বলতেন না রে বাবা ও পাগলী হতে পারে তবে কাজকর্ম বেশ পরিস্কার, অনেকদিন কাজ করছে তাই ওর প্রতি একটা মায়াও হয়ে গেছে কি করে ছাড়াই বল তো?

আগের দিন রাতে ঘুমোতে গিয়ে মহিম মনে মনে ভাবে সকাল হলেই মা বাবাকে চায়ের আসরে নিজের গাড়ি কেনার ইচ্ছেটা জানাবে দেখা যাক কি বলে বহুদিন তো হলো সাইকেল নিয়ে ঘুরছি , এবারে নিশ্চয় বাবা মা আর অরাজি হবেন না, এই কথা ভাবতে ভাবতে মহিম ঘুমিয়ে পড়লো আগের দিন রাতে। যথারীতি পরদিন সকালে মহিমের ঘুম ভাঙ্গলো সেই বুলা পাগলীর বকবকানিতে,আজ এমন জোরে জোরে বকবক করতে করতে কাজে এলো যেন মহিমের মনের কথা আগের থেকেই তার জানা।

হঠাৎ বাড়ির নিচের থেকেই বকবক করতে করতে উপরে উঠে এলো “গাড়ি দেখাচ্ছে গাড়ি,যত বড়লোকি চাল, গাড়ি যদি ঢোকে তাহলে বলে দিচ্ছি ভালো হবে না, একেবারে গাড়িটা ভেঙে রেখে দেবো” এই বলতে বলতে বুলা পাগলী সদর দরজার পাশ দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো প্রতিদিনের মত কাজে। মহিম কথাটা শুনেছে ঠিকই তবে ঘুমচোখে অতটা পরিষ্কার নয় অনেকটাই আবছা তাই বুঝতেও পারেনি। মহিম বরাবরের মত বুলা পাগলীর আসাটাকে অ্যালার্ম বলে ভেবে এসেছে এতকাল, তাই ঘড়ির অ্যালার্ম কোনোদিনও দিত না, কারণ সময় জ্ঞান ছিল তার মারাত্মক।

যাক কথাটা কানে যেতেই ঘুম ভেঙে ঠাকুরের নাম নিয়ে মহিম বরাবরের মতই বিছানা ছেড়ে উঠে এলো । এবারে আবারও বুলা পাগলী শুরু করলো সেই একই কথা “গাড়ি দেখাচ্ছে গাড়ি যত বড়লোকি চাল, গাড়ি যদি ঢোকে তাহলে বলে দিচ্ছি ভালো হবে না, একেবারে গাড়িটা ভেঙে রেখে দেবো”।কথাটা শুনতেই মহিম ঘুম চোখে তরাং করে লাফ মেরে ওঠে,অবাক হয়ে বুলা পাগলীর মুখের দিকে তাকিয়ে মহিম ভাবতে থাকে এই বুলা পাগলীটা কি অন্তর্যামী এই কথা সে জানলো কি করে ?আমি তো কাউকেই বলিনি আমার গাড়ি কেনার কথাটা ,কাল রাতে শুধু শোয়ার সময় কথাটা মনে মনে ভেবে শুতে গেছি আজ সবেমাত্র মা বাবাকে বলবো বলে।

বুলা পাগলীকে মাঝে মধ্যে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে সেটা আবার ঠিকঠাক উত্তর দেয়।তাই মহিম ঘুম চোখে থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো এই বুলাদি সকাল সকাল কি গো কি সব বলছো কার গাড়ি ভেঙে দেবে শুনি?বুলা পাগলী অমনি বলে উঠলো আর বোলো না ভাই ওপাড়ার শুভর বাবা নতুন দুচাকার মোটর কিনেছে চালাতে জানে না।চালানোর আগে শিখে তবেই চালাতে পারতো। কাল বিকেলে রাস্তার ধারে গোলকদের বাড়ীর বারান্দায় বসে আছি পা ছড়িয়ে, অমনি মোটরটাকে আমার কেনি আঙ্গুলের উপর দিয়ে চালিয়ে দিলো আর নিজে গিয়ে পড়লো হাই ড্রেনের উপর।

নিজেই ঠিকমত চলতে পারিস না তো গাড়ি চালাতে যাস কেন? দিলি তো আমার কেনি আঙ্গুলটাকে কানা করে। মহিম কথাটা শুনে একটু আশ্বস্ত হলো বুঝলো এই কথাটা বুলাদী সজ্ঞানে বলছে তাই জিজ্ঞাস করলো তা এখন কেমন আছে তোমার কেনি আঙ্গুল কৈ দেখি।কেমন আর থাকবে “ঝাঁটা মেরে উড়িয়ে দেবো”, মহিম বুঝলো এই রে পাগলামীর মিটারটা আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে,সকাল সকাল ওই ঝাঁটাটা আমার কপালে নয় ওটা শুভর বাবার কপালে গিয়ে পড়লো।

আসলে পাগল মানুষেরা এমন বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা প্রায় সময়েই বলেন এই একটা কথা ঠিকঠাক বললো কি না বললো আবারও পরের কথাটা বেলাইন বলবেই বলবে,আগের কথার সাথে পরের কথাটার মিলই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একবার মহিম তার বাবার থেকে শুনেছে আরেক পাগলের কাহিনী সেটাও আবার রাঁচির পাগলাগারদের এক অদ্ভুত দৃশ্য।উনি বন্ধু শোভনের ছেলে বাট্টাকে নিয়ে গেছেন সেই পাগলাগারদে সামান্য ট্রিটমেন্ট করাতে ও দেখাতে।

শোভন বাবু ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাচ্ছেন চেম্বারের ভিতর তাই মহিমের বাবা পাগলাগারদের বেশিরভাগ জায়গাটাকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন।কেমন কষ্টের মধ্যে মানুষগুলো থাকেন, একেবারে জেলের কয়েদিদের মতন অবস্থা অথছ অনেকেই সম্ভ্রান্ত বাড়ি থেকে এসেছেন।অমনি পেছন থেকে এক ভদ্রলোক মহিমের বাবার পিঠে হাত দিয়ে যেচে আলাপ করা শুরু করলেন। বহুক্ষণ আলাপচারিতার পর বুঝলেন উনি বাঙ্গালী।

বাঙ্গালীর বরাবরের একটা অভ্যেস আছে বিদেশে বিপাকে স্বজাতি পেলেই হলো একেবারে গল্পে মশগুল হয়ে যান।ভদ্রলোকের সাথে মহিমের বাবা নানান বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেই চলেছেন দুজনেরই বেশ ভালই লাগছে, কখনো রাজনীতি নিয়ে আবার কখনো দেশের হাল হকিকত নিয়ে। একটা সময় সেই ভদ্রলোক বলেই ফেললেন দাদা এখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না নইলে আপনিও পাগল হয়ে যাবেন, বুঝলেন মশাই এটা যে সে জায়গা নয় এটা পাগলদের মাথার মেরামতির কারখানা সারাক্ষণ রিপেয়ারিং চলছে সকলের এই ভালো তো এই খারাপ।

থাকতে ইচ্ছে করলে থাকুন দেখবেন আপনাকেও পাগল ভেবে বন্দী করে একটা ঘরে ঢুকিয়ে না রাখে এনারা।কথাটা শুনে মহিমের বাবা বলে উঠলেন, না,না আমি কিসের জন্য পাগল হবো, আমি তো এসেছি বন্ধুর ছেলেকে এখানে দেখাতে এতে পাগল হওয়ার কি আছে?কিছুক্ষণ পরে উনি প্রায় স্তম্ভিত হয়ে দেখেন পেছন থেকে এক ধোপদুরস্ত ভদ্রলোক এলেন হঠাৎ যাঁর সাথে এতক্ষণ মহিমের বাবা কথা বলছিলেন উনাকে অনেকটাই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে প্রায় টানতে টানতে হিড়হিড় করে নিয়ে যাচ্ছেন, আর উনিও অবলীলায় প্রতিবাদ না করে উনার সাথে চলেছেন গারদের অভিমুখে।

আদতে উনি সেমি পাগল থেকে সুস্থের দিকে যাচ্ছেন এখনও আন্ডার ট্রিটমেন্টে পুরোপুরি মাথার ব্যামোটা তখনও সারেনি, মাথার কব্জাগুলো কিছুটা ঠিকের পথে।ব্যাপারটা মহিমের বাবাকে বেশ অবাক করেছিল কি আশ্চর্য এতক্ষণ যাঁর সাথে কথা বলছিলাম সে পাগল?আবার যিনি তাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন তবে তিনি কে? তিনিও কি পাগল?শুনেছি এক পাগল ঠিক আরেক পাগলের ভাষা বোঝে তবে কি কথাটা সত্যি।

তাহলে তো এখানে সত্যি সত্যিই কারোর সাথে কথা বলা যাবে না ,ভদ্রলোক কথাটা পাগল হলেও নেহাতই মন্দ বলেননি।তাই যতক্ষণ মহিমের বাবা সেখানে ছিলেন তারপর কারোর সাথে বিশেষ একটা কথা বলেননি ভয়ে একেবারে বধির হয়ে ছিলেন, যার সাথেই দুটো কথা বলতে ইচ্ছে করছে পরক্ষণেই এক ধারণা হচ্ছে কি জানি ঠিকঠাক লোকের সাথে কথা বলছি তো?

যাক আসা যাক প্রসঙ্গতে, মহিম ঠিক করে বুলা পাগলী কাজ করে না বেরোলে মা বাবাকে গাড়ি কেনার কথাটা কিছুতেই বলবে না কারণ সে জানতে পারলেই বা কথাটা কানে গেলেই হয়তো উল্টোপাল্টা বলে এমন বেগরা বাঁধাবে  গাড়ীই আর কেনা হবে না। যথারীতি সে বেরোতেই মহিম মা বাবাকে অনেক বলে কয়ে রাজি করালো, দিনসাতেক পর মহিমের গাড়ি এলো বাড়িতে। গাড়ি কিনতে গিয়ে আরেক বিভ্রান্তি ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হোলো মোহিমকে। সমানেই গাড়ির সাথে আনুষঙ্গিক বাড়তি কোনো পার্টস লাগাবে কিনা এই নিয়ে গাড়ি বিক্রেতা জোরাজুরি শুরু করে দিলেন,যাক সেটা কোনোভাবে এড়ানো গেলো।

কিন্তু অনেকেই গাড়ির সাথে এমন এমন সব স্টিকার লাগাচ্ছেন তাতে মহিমকেও বেশ অবাক করলো,ব্যাপারটা বেশ মজার তো মানুষ গাড়ীতে সামান্য এক স্টিকার লাগানোর জন্য কেন এত উতলা? তাই মহিম এককোনায় দাঁড়িয়ে এমন সব বিদঘুটে লোকের ধ্যানধারণাকে উপলব্ধি করে চলেছে যেহেতু এই অভিজ্ঞতা তার কাছে একেবারেই নতুন।কেউ স্টিকারে লেখাচ্ছেন “বাবা মায়ের আশীর্বাদ”, কেউ “ভবা পাগলা”,”মায়ের দান” ,”ভোলে বাবার দান” আবার কেউ সন্তানের নাম সহেলি, মিলি, অনেকে তো আবার দুই ছেলেমেয়ের নামে “ রাজা ও রানী”। মহিমের কাছে একটাই প্রশ্ন ছিল সেদিন জানিনা যাঁরা এইসব লেখাচ্ছেন আদৌ কি কোনো যথার্থ যৌক্তিকতা আছে কিনা।

আসলে কোথাও হয়তো মানুষ আরেকজনের থেকে দেখে শিখছেন বা হয়তো ধর্মভীরু এটাই হয়তো মধ্যবিত্তের মধ্যে থাকা একটা গোষ্ঠীর মানসিকতার পরিচিতি।আর্থিক ভাবে কোনো মানুষই মধ্যবিত্ত নন সেটা জ্ঞানের পরিধির সীমাবদ্ধতা , তাই হয়তো তাঁদের এটা লিখতে পারা মনের আনন্দের এক বহিঃপ্রকাশ।মহিম ভাবতে থাকে এই সব মানুষেরা অডি, রলস রয়েস, বিএমডাবলুর মত গাড়ি যদি কখনো কেনেন তখনও কি একই কান্ড করবেন?রাস্তা ঘাটে কত নামিদামি গাড়িই তো ঘুরে বেড়াই কৈ তাদের গাড়িতে এমন লেখা কখনোই থাকে না এটা নেহাৎই এক বোধের অভাব।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মহিমের সামনে দিয়ে একটা খালি রিকশা চলে যেতেই দেখে পেছনে লেখা “বুরি নজর বালে তেরা মুহ কালা”। এটা লিখেও উনি খান্ত হননি রিকশার পেছনে ঝাঁটা, জুতো ঝুলিয়ে চলেছেন গান করতে করতে।ব্যাপারটা নজরে পড়তেই মহিমের বেশ হাসি এলো, কি আশ্চর্য কেউ সকাল সকাল অফিসে গেলে কেন এমন রিকশাতে উঠতে যাবেন সেটা তাঁর হয়তো উপযুক্ত বোধের অভাব। রিকশাওয়ালাকে ছোটো না করেই মহিম ভাবতে থাকে কারোর খেয়েদেয়ে কাজ নেই এক রিকশা দেখে মনে মনে “বুরি নজর” চোখে দেখবেন ও তাঁকে হিংসে করবেন আহা কি ভাগ্যবান যে সে রিকশা হাঁকিয়ে চলেছেন, যদি আমারও এমন রিকশো হত, এমন উচবুকের মত ভাবনা কোন মানুষের মাথায় আসবে সেটা যদি বুলা পাগলী হয় সেক্ষেত্রে তাও মানায়।

হয়তো এমন লেখাটা তিনি লেখেন ঠিক তাঁদেরই গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে, এটাই হয়তো শ্রেণী বিভাগের একটা পরিষ্কার মানসিকতা বুঝিয়ে দেয়।যেমনটা দু চাকা বা চার চাকায় বেশিরভাগ মানুষই করে থাকেন। রোলস রয়েস গাড়ি কিনলেও কি মানুষ এমনটা করবেন? নিশ্চয় না, আর এমনটা বিশেষ একটা চোখেও পড়ে না।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মহিম নিজেও কোথায় হারিয়ে গেলো সামনে ভেসে এলো রোলস রয়েস কোম্পানির এক অন্য মাত্রার গাড়ি বানানোর চিন্তাধারায়।পারলে তো এই গাড়ি বিক্রেতা কোম্পানী অন্যের সাথে টেক্কা দিতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ গাড়ি বানাতে পারেন, কৈ সেটাতো করেন না,যেখানেই টেক্কা সেখানেই যে বিপদ।

উনাদের চিন্তাধারা একটাই গুণগত মান আর তৈরির ক্ষেত্রে নিপুণ দক্ষতা ওটাই হাসিল করতে পারলে দাম যতই বেশি হোক উত্তরোত্তর চাহিদা বাড়বে বৈ কমবে না, তাই হয়তো এই গাড়ির আর্থিক মূল্য দশ কোটি টাকা। তাঁরা এই একই গাড়ির বেশিরভাগটাই তৈরি করেন হাতে, যৎ সামান্য মেশিনের প্রয়োগ ও ব্যবহার হয় সেটা তৈরির ক্ষেত্রে।যেই কাজ নিজেদের হাতের নৈপুণ্যে ও পারদর্শিতার সাথে করা সম্ভব সেখানে এক শ্রেণীর সমঝদার মানুষ তাঁদের এত কষ্টের দাম তো দেবেনই এটাই তো স্বাভাবিক,ঠিক এই একই কারণে এই সমস্ত কোম্পানি বিজ্ঞাপন কে হয়তো তেমন তোয়াক্কা করেন না।এতসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে মহিম বাড়ি ফিরে এলো সঙ্গে নিয়ে এলো বেশ কিছু নানান শ্রেণীর মানুষের মানসিকতার অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে বাড়িতে।

 মা বললেন বাবা আগে মন্দিরে গিয়ে পূজো দিয়ে আয় তারপর না হয় গাড়ীটাকে ভালো মতন চালাস, গাড়ি হলো বিশ্বকর্মা উনাকে আগে সন্তুষ্ট না করলে উনি খুবই রুষ্ঠ হন। মায়ের কথা ও বিশ্বাসকে ফেলতে না পেরে উনার কথামত পূজো দিয়ে সেদিনটার মত মহিমের নিজেরও দিনটা আনন্দে কাটালো।মহিমের ভয় ঠিক পরদিন সকালটাকে নিয়ে বুলাদি কাজে আসলে কি যে বলে উঠবে তার  ঠিক নেই।তাই সেদিন বুলাদি আসার আগেই মহিম ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।

সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই ডান পাশে গাড়িটা রাখা সেটা দেখেই বুলা পাগলী অবাক হয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে আর মহিম নিজেও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে কি করে সে। হঠাৎই নিচের থেকেই ভাই ও ভাই বলে চিৎকার করতে থাকে, মহিম সামনে যেতেই বলে উঠলো শুভর বাবা তার গাড়িটা তোমায় বিক্রি করেছে তাই না? দাড়াও দেখাচ্ছি মজা আমাকে ধাক্কা মেরেও শুভর বাবার শান্তি হয়নি,আমি আজ কাজ করবো না আগে পুলিশকে ডেকে আনি তারপর মোটা টাকা নিয়ে তবেই ছাড়বো, শুভর বাবার আমাকে ধাক্কা মেরেও শান্তি হলো না?

মহিম থাকতে না পেরে বুলাদির পেছন পেছন রাস্তা পর্যন্ত ছুটতে থাকে ও বলতে থাকে বুলাদি আমার কথা শোন তারপর তোমার যা ইচ্ছে কোরো। গাড়িটা আমি আমার নিজের পয়সায় কিনেছি,উনার থেকে কেন কিনতে যাবো।বুলাদি কেন জানিনা কথাটা শুনতেই থমকে দাঁড়ালো হয়তো বুঝলো তাই কথামত ফিরেও এলো।পরক্ষণেই গাড়ির সামনে এসে বেশ ভাবুক হয়ে বলে উঠলো এটা আমার ভাইয়ের গাড়ি তা ভাই অনেক দূর দূর যাবে বলো এই গাড়ি নিয়ে?ভালোই করেছো, কাকু কাকিমাকে নিয়ে অনেক ঘুরতে পারবে। মহিমের কথাটা শুনে বেশ আশ্বস্ত লাগলো আর মায়াও হলো তার প্রতি।

প্রায় মাসখানেক পর মহিমের সাথে শুভর বাবার পথে দেখা, মহিমের নিজেরও তাঁকে দুর থেকে আসতে দেখে বেশ হাসি লাগলো হাসি আর কিছুতেই চাপতে পারছে না, সত্যিই তো ভদ্রলোক গাড়ি চালাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু কেমন যেন একেবেকে, বোঝাই যাচ্ছে একেবারে নতুন হাত আজও পরিষ্কার হয়ে ওঠেনি। সামনে আসতেই মহিম থাকতে না পেরে বলেই উঠলো দাদা পাড়ার বুলাদির সাথে মীমাংসা করে ফেলুন নইলে উনি যা পাগল কোনদিন আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবে।

কথাটা শুনতেই উনি নিজেও ঘাবড়ে গেলেন সবে ভাড়া এসেছেন পাশের পাড়ায় মাস ছয়েকও হয়নি। আরে দাদা কি আর বলি প্রথম যেদিন গাড়ি কিনি শখে সবে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছি শিখবো বলে আমি কি করে জানি উনি পাগল, সবাই তাকে এড়িয়ে চলে উনার পাশ দিয়ে যেতেই এমন ঝাঁটা হাতে তেড়ে এলেন আমি নিজেকে গাড়ি নিয়ে সামলাবো নাকি উনার ঝাঁটার মার খাবো, পড়বি তো পড় একেবারে গাড়ি নিয়ে উনাকে সমেত, আমি পড়লাম পাশের হাই ড্রেনে আর গাড়ির চাকা উনার পায়ে।বলছেন যখন সমঝোতা করে নেবো পাগলের কোনো ঠিক আছে নাকি? সত্যিই তো আমার লাইসেন্স ও নেই কোনদিন সত্যি সত্যিই উনি আমায় পুলিশে না ধরিয়ে দেন।কথাটা বলে বেশ ভালোই করলেন দাদা ধন্যবাদ।

satta king tw