good morning

BMV-40 GOOD MORNING সম্পর্কের যথার্থতা,নাকি বজায় রাখার শেষ সুতোর টান?

আজকাল একটা বেশ প্রচলিত রীতি রেওয়াজ চলে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে প্রায় চার পাঁচ বছর তো হবেই। সকালে উঠতেই মোবাইলে বন্ধুবান্ধব বা হয়তো আত্মীয় স্বজন থেকে ভেসে আসা এক সৌজন্য মূলক বার্তা গুড মর্নিং ব্যস এতটুকুই।

ভালো কথা দেখে বেশ আপ্লুত মনে হয় যাক বন্ধুটি আমার বেশ খেয়াল রাখে। কেউ কেউ তো ঘুম চোখে ছাদে বা বাড়ির সামনের টাটকা বাগানের ফুল তুলেও সুপ্রভাত পাঠান অনেক সময়। বিন্দুমাত্র ক্ষতি নেই তাতেও, এতো ভালোলাগারই জিনিষ।

এতে আমি বা আপনি একটা সম্পর্কের সৌজন্যতা বজায় রাখার জন্য আমরাও পাঠায়।এই পর্যন্ত ঠিকঠাক কোনো দ্বিমত নেই,আর হবেই বা কেন সে তো আমারও কুশল চায়। তাই প্রতিটা দিন সেও নিয়ম করে পাঠায় সঙ্গে আমি বা আপনি নিজেও। এমনকি কোনো অনুষ্ঠান বা বিশেষ দিনক্ষণ হলে তো কথাই নেই সকালেই যেন মনে করিয়ে দেয় সুপ্রভাত জানিয়ে বিশেষ দিনটার কথা।

যেই মুহুর্তে আপনি বা আমি কিছু লিখলাম “কি রে কেমন আছিস? এতদিন পর, প্রতিদিন শুধুই সুপ্রভাত জানাবি নাকি আর কোনো কথা নেই? ফোন তো করতে পারিস মাস তিনেক পরেও না হয় ফোন করিস। এর আগেও আমি কয়েকবার ফোন করেছি কখনো ব্যস্ত,না হয় কখনো হাল্কা সৌজন্য আবার কখনো লিখেছিস তোকে পরে ফোন করছি কিছু মনে করিস না সময়ই পাই না আজকাল।

অথচ সকালে সেই একই সময়ে সুপ্রভাত টা পাঠাতে ভুল করিস না। আমিও পাঠাতাম এখনও  করি ঠিকই কিন্তু সেটা দায়িত্ব ভেবে, তাও মাঝে মধ্যে সত্যিই কথা বলতে কি মন থেকে নয়।আমি আজও অনেকের মতো হাল্কা থাকতে পারিনা যে কি করি বল।এই শোন বিন্দুমাত্র রাগ করিনি আত্মীয় বা বন্ধুর উপর রাগ করা চলে নাকি? ওটা অভিমানে বললাম”।

দেখলাম সে দেখলো কারণ দুটো নীল দাগ জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠলো তাই অপেক্ষায় আছি নিশ্চয় ওপাশ থেকে  কিছু না কিছু লিখবে।কিন্ত তিনি তো ব্যস্ত আরো বাকি সম্পর্ক গুলোকে সুপ্রভাত পাঠাতে ও জানাতে।একটা কোথাও যেন মনের গভীরে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্পর্ক চোকানোর দায়িত্ব, না দিলে সে কি ভাববে?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানে টা এটাই দাঁড়ায় যে বোবা বা হালকা থেকে শুধুই সকাল সকাল বাপু এগারোটা লেটার( good morning) ছুঁড়ে দেওয়ার দায়িত্ব টা সেরে ফেলো ওটাই আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বটা ভালো রাখার একমাত্র সুকৌশল বা চালাকি ,সম্পর্ক বজায় রাখার টোটকা।এক আর এক এগারো দুই ক্ষেত্রেই যে দুজনে একা সেটা কে কবে বুঝবে?একটা ভ্রান্ত ধারণা মনে পোষণ করতে করতে আমরা সকলেই ভাব প্রকাশের ইচ্ছেটুকুই হারিয়ে ফেলছি কথা বলার মাধ্যমে ওই যে হাল্কা থাকতে হবে।

অথচ সেই আমি বা আপনি দেখুন সমান তালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে নিজের একটার পর একটা ছবি পোস্ট করেই চলেছি।নতুন শাড়ি বা জামাকাপড় পড়লে সেটার ছবি,ঘুরতে গেলে হাওড়া বা এয়ারপোর্টের ছবি, ফুলের বাগানে গেলে ফুল গাছের সাথে ছবি, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে মনের দুঃখের ভাব প্রকাশের ছবি, এমনকি কেউ মারা গেলে বন্ধ চোখের উপর তুলসী পাতা ও মৃতের বুকে গীতার ছবি এটাও আজকাল ফেসবুকে স্থান পেয়েছে।

যিনি পোস্ট করলেন একটা চরম আত্মতৃপ্তি কটা লাইক এলো আমার ছবিতে দেখেই চলেছেন।এটাও কি মানুষজনকে আগামীতে শুধুই আত্মকেন্দ্রিক করে দিচ্ছে না?নাকি এখনো হাল্কা ও বোবা থাকবেন বলে সারাজীবনের শপথ নিয়ে ফেলেছেন।যেকোনো লেখা বা কিছু ভালো উক্তি সেখানেও একটা মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে কিছু কি লিখবো নাকি শুধুই পড়েই ছেড়ে দেবো কিছু লিখলে যদি আরেকজন সেটা দেখে কিছু ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া বলে কথা। বড়জোর জিজ্ঞাসা করলে বলেই দেবো দেখেছি কিন্ত সময় পায় না আজকাল মনের দ্বন্দ্বের ব্যস্ততা এতটাই।

থাক দরকার নেই ঝামেলা বাড়িয়ে।অথচ সেই আমি বা আপনি শুধু সকালে উঠেই প্রতিদিন পাগলের মত এগারোটা লেটার লিখেই চলেছি হয়তো সত্য যুগ থেকে যদি তখনও হোয়াটসঅ্যাপ থাকতো।আর মনে একটাই শান্তির বাণী দিয়ে চলেছি যাক বাবা সুপ্রভাত টা তো জানিয়েছি এটা কিন্তু কোনো বন্ধুবান্ধব জানবে না ওটা ছোটকালের সেই একই লুকোচুরির টুকি টুকি সুপ্রভাত খেলা আমার আর বন্ধুটির মধ্যে।

এমন টুকি টুকি খেলতে গিয়ে সেটাও হারিয়ে যাবে একদিন এটাই বাস্তব তারপর মনের মধ্যে আরেক নতুন খেলা শুরু হবে “কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাকে পাবি তাকে ছোঁ”।প্রত্যেকেই একটা centripetal force নিয়ে একই বৃত্তে ঘুরেই চলেছে।অন্যের চিন্তাভাবনা কে নিজের মতন করে সাজিয়ে নিয়েছেন। নিজের জন্য বাঁচতে চান সবাই কিন্ত ভাবনা গুলো বাঁচিয়ে রাখেন অন্যের ভাবনাকে মূল্য দিয়ে ওটাই ভুল।

আজকের দিনে আম্বানি বাবু তো আমাদের সকল মুশকিল কে আসান করে দিয়েছেন যে যতই দেশের একপ্রান্ত অপরপ্রান্তে থাকি না কেন। অনায়াসে কথা তো বলতেই পারি তাও আবার অত্যন্ত কম খরচে।যেখানে সুবিধে যত বেশি সেখানে জোর করে বধির হওয়ার সুযোগটাও হয়তো বেশি।

বধির হতে হতে মানুষ সত্যিকারের একদিন এতটাই নিশ্চুপ হয়ে পড়বেন তখনই শেষ জীবনে ডাক্তারের পরামর্শে আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়াবে ওই যে পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা এখনকার লাফিং ক্লাব।এরপর মানুষ সকালে উঠে একা একা হেসেই যাবেন টেনশন কাটানোর তাগিদে তখন তাঁকে কেউ তো আর সুপ্রভাত জানাবেনই না উল্টো বলবেন শুনেছি ” তোর নাকি নার্ভের ব্যমো হয়েছে”।

অথচ এই সময়ে ঐ তখনকার জোর করে পাঠানো সুপ্রভাতের একটা বিশেষ প্রয়োজন আছে।যেটা সুস্থ থেকে কথা বার্তা না বলে দিয়ে চলেছিলেন সেই সময়ে।এখন ফোন বা কথা বলে কি লাভ যাঁর সাথে বলবেন সত্যিই সত্যিই উনি অসুস্থ বধির হয়ে থাকা আপনার বন্ধু বা আত্মীয়।আফসোস টা একটা জায়গাতেই রয়ে যায় যেই সময় প্রয়োজন পাশে দাঁড়ানোর তখন শুধুই বার্তা।

আর যেই সময় সৌজন্য দেখানোর বিশেষ প্রয়োজন তখন মনে চলতে থাকে আকুলি বিকুলী ইসস একবার যদি কথা বলতো কি রে কেমন আছিস?এটাই তো সত্যিকারের বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তা মানুষ এটাই খুঁজে চলেছে।প্রতিটা ঘরে ঘরে মানুষ অনেক মানসিক কষ্টে আছে যেটা আমরা দেখে কেউই ঠাউর করতে পারিনা। দিনান্তে কথা বলুন ঠাট্টা তামাশায় আবারও মেতে উঠুন শুধু তাকে ভালো রাখতে নয় নিজেকেও ভালো রাখতে।

নাইজেল আকারার মত একজন কুখ্যাত সমাজ বিরোধী যিনি একটা সময়ে ত্রাস ছিল মানুষের উনি যদি অলকানন্দা রায়ের হাত ধরে জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকার মূল্যটা বুঝতে পারেন নাচ গান ও সিনেমার মাধ্যমে তাহলে আমরা কেন পারিনা?বন্ধ করুন সকাল সকাল শুধুই সুপ্রভাতের ঘটা অনুষ্ঠান। ওটা আপনাকে হয়তো শান্তি দেবে না আগামীতে কারণ আমরা আপনারা কোথাও না কোথাও প্রত্যেকে একা।

05.09.2021

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *