BMV-20 SRINIVAS RAMANUJAN
এই মহানুভব ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেন 22 শে ডিসেম্বর 1887 সালে তামিলনাড়ুর ইরোদ নামে এক গ্রামে।মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে জীবনের পাঠ চুকিয়ে পৃথিবীকে দিয়ে গেছেন তাঁর অসামান্য গণিতের ফর্মুলা ও রেখে গেছেন চুলচেরা ব্যাখ্যা গণিত সম্বন্ধে।জন্ম হয় এক অসামান্য প্রতিভা নিয়ে,কাবেরী নদীর ধারে চারিদিকে মন্দির বেষ্টিত ছোট্ট শহরে, যার নাম কুম্ভকোনাম।
বাবা কুপ্পুস্বামী শ্রীনিবাস পেশায় একজন ক্লার্ক শাড়ির দোকানে।মা কোমলতাম্মাম গৃহবধূ কিন্তু অবসর সময়ে গান করেন নিকটবর্তী মন্দিরে।এক ভাই সাদাগোপান জন্মের মাস তিনেকের মধ্যেই মারা যায় ।বর্তমানে তাঁদের এই বাড়িটি একটা museum।
1892 সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক স্কুল কেঙেয়ান প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা সংক্রান্ত হাতেখড়ি।ছোটো থেকেই অঙ্কের প্রতি ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা, তাই তাঁকে অঙ্কের জাদুগর ও বলা হতো। মাত্র বারো বছর বয়সেই উনি অঙ্কের ফর্মুলার সৃষ্টির রহস্য শুধু নয় , এমনকি সেটিকে যথোপযুক্ত ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন।
আর এইখান থেকেই আরো খোঁজ দেন নানাবিধ ফর্মুলার যা এখনো অনেকের কাছে অজানা।অঙ্ক নিয়ে এমন সব প্রশ্ন করতেন রামানুজন শিক্ষকদের যা শুধু ওনাদের ভাবাতেনই না, মাঝে মধ্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর ওনাদের ও অজানা ছিল, যেমন “what is the highest truth in Mathematics is “।
Childhood days, & playing with only Mathematics
ছোটো থেকেই রামানুজনের ভগবানের প্রতি আস্থা এতই প্রখর ছিল যে বেশিরভাগ সময়টা সে কাটাতে চাইতো মন্দিরে। এমনকি মন্দিরের প্রসাদই ছিল একমাত্র তাঁর অতি প্রিয় খাবার।অঙ্ক এতই প্রিয় ছিল যে মন্দিরের দেওয়ালে লিখে রাখতেন তাঁর অঙ্কের হিসেবনিকেশ।
শিশুকাল ছিল উৎসুকতায় ভরা নানান প্রশ্নে । এই পৃথিবীর প্রথম মানুষটির নাম কি?মেঘের ওপারে কি থাকে, এই অনন্ত মহাকাশের শেষটা কোথায়,এমন সব প্রশ্ন।একবার ক্লাসে শিক্ষক পড়াতে পড়াতে বলেন 10/10 =1, যে কোনো সংখ্যা সেই একই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল সবসময় এক হয়। এর উত্তরে তিনি বলেন সবক্ষেত্রেই সেটা নয়,0/0=0 এটা কিন্ত ব্যতিক্রম।
স্কুলে থাকাকালীন তিনি অংকে এতই ভালো ছিলেন যে স্কলারশিপ পেতেন শিশুকাল থেকেই। কিন্তু ঘটনা টা ঘটলো ঠিক বিপরীত কলেজে উঠতে না উঠতেই অংকে তো সর্বোচ্চ নম্বর পেতেন এমনকি তিন ঘন্টার পরীক্ষা তিরিশ মিনিটে শেষ করে ফেলতেন।
শুধু তাই নয় যে অঙ্কটা দশের বেশি স্টেপে মাস্টারমশাই করতেন সেই একই অঙ্ক শেষ করতেন মাত্র তিন টি স্টেপে।কিন্তু কলেজে বাকি বিষয়ে ফেল করে গিয়েছিলেন তাই স্কলারশিপ টা বাতিল হয়ে গিয়েছিলো তাঁর।এমনকি কলেজ ও ছাড়তে হয়েছিল।
ছেলের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটায় মা এতই দুঃখ পেয়েছিলেন যে মনস্থির করেন ছেলের বিয়ে দিয়ে দেবেন তাতে যদি ছেলের সম্বিত ফেরে। জানকি নামে এক দশ বছরের মেয়ের সাথে তাঁর বিবাহ করিয়ে দেন।
কিন্তু বৌকে খাওয়াবেন কি? তাই নিজের অঙ্কের খাতা সকলকে দেখিয়ে বেড়াতেন যদি চাকরি পাওয়া সম্ভব। অবশেষে চাকরি পেলেন মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্ট এ।sir fransis ও Narayan Iyer এর দপ্তরে কাজ শুরু করেন ক্লার্ক হিসেবে।
এনাদের দুজনার অনুপ্রেরণায় রামানুজন cambridge university তে চিঠি পাঠান তাঁর অঙ্কের বিষয়ে অসামান্য কৃতিত্ত্বের কথা জানিয়ে।এই চিঠিটার মধ্যে এমন কিছু কথা উনি লেখেন যা এখনো অনেক অঙ্ক বিশারদ কে দেখানো হয়।
What he exactly wrote to prof. Hardy in his letter
শ্রদ্ধেয় স্যার,
আমি এইমুহূর্তে তেইশ বছরের এক যুবক। বর্তমানে ভারতবর্ষের মাদ্রাজ শহরে পোর্ট ট্রাস্ট সংস্থায় কর্মরত, মাইনে বছরে কুড়ি পাউন্ড।আমার কাছে কোনো ধরনের ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী নেই, শুধুমাত্র স্কুলের একটা ডিগ্রী আছে। কিন্ত জীবনের ধ্যানজ্ঞান শুধুই অঙ্ক।আমি divergence theory উপর কাজ করেছি। আমি আমার এই চিঠির সাথে বেশ কিছু theorem পাঠাচ্ছি, যদি আপনার এই theorem সামান্য হলেও valuable মনে হয় তাহলে আশা করবো আপনি আমার এই theorem publish করবেন।
ইতি,
আপনার অনুগত,
রামানুজন শ্রীনিবাসন।
প্রায় পঞ্চাশটা theorem পাঠান তাঁকে, তার মধ্যে একটা বেশ আশ্চর্য করা যা professor Hardy কে বেশ অবাক করে ছিল। সেটা এরকমেরই এক অনন্ত নম্বরের যোগফলের শেষ পরিণতির সংখ্যা টা কি হতে পারে।সেটাও আবার ভগ্নাংশে ও নেগেটিভে, কি ভাবে সম্ভব।
কিন্তু অঙ্ক বিশারদেরা বলছেন যদি আমরা এটা মানতে রাজি না হই তাহলে STRING THEORY নিয়ে কোনোভাবেই এগোনো সম্ভব নই।
How far prof. Hardy was influenced by Ramanujan
তাঁর চিঠি পাওয়ামাত্র গণিতজ্ঞ প্রফেসর হারডি এতটাই প্রভাবিত হন যে উনি তাঁকে ইংল্যান্ড এ আসতে বলেন ও তাঁর অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করতে বলেন Cambridge University থেকে।
উনি রাজি হননি, একটাই কারণ তাঁদের সন্তান যখন হবে তাঁদের কোনোদিন বিয়ে হবে না, যেহেতু বিদেশে জন্ম,এই ভেবে।পরবর্তী সময়ে তাঁর ইস্টদেবতা নামাগিরি থেকে স্বপ্নাদেশ পান ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য।
জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই এই ইষ্টদেবতাকে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, যে কোনো সিদ্ধান্ত উনার অনুমতি বিনা এগোন নি কখনো।প্রফেসর হারডি বলেন রামানুজন এমন এক অসীম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যে তাঁর জন্ম যদি ভারতে না হয়ে ইংল্যান্ডে বা যে কোনো ইউরোপীয় মহাদেশে হতো, হয়তো জীবনের অনেক শুরুতেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখতেন।
রামানুজনের প্রফেসর হারডির সাথে যখন দেখা হয় লন্ডনে,তখন তাঁকে প্রায় তিন হাজার theorem দেন। তখন প্রফেসর হারডি বলেন আপনার এই theorem প্রকাশনায় দেওয়া যেতে পারে যদি আপনি সেটার যথোপযুক্ত প্রমান দিতে পারেন যে কিভাবে আপনি একটা সিদ্ধান্তে এলেন।
কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উনি step jump করে আসল উত্তরটা লিখে রাখতেন।যেটা সাধারণ মানুষের বোঝানোর উদ্দেশ্যে প্রত্যেকটা ধাপ বিশ্লেষণ করা বিশেষ জরুরি।তাই উনি Cambridge University তে পড়ানোর সুযোগ পান। আর এরই মধ্যে উনার নয়টি পেপার পাবলিশ হয় 1915 সালে।যার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য স্থান পায় Modular Equation ও Approximation to Pai পেপার দুটি।
Relation with wife Janki
রামানুজন চাইতেন যে তাঁর স্ত্রী জানকি তাঁর সাথে cambridge এ থাকুক।এই নিয়ে বহুবার বাড়িতে চিঠি ও লেখেন, কিন্ত মা বৌয়ের থেকে এই চিঠিগুলো লুকিয়ে রাখতেন ও তাঁকে জানাতেন ও না। এদিকে কোনো জবাব না আসাতে এতই ভেঙে পড়েছিলেন উনি যে আত্মঘাতী হওয়ার কথা ভাবেন ট্রেনের সামনে।
ট্রেনের চালক দেখতে পেরে গাড়ি থামিয়ে দেন ও পুলিশের কাছে সপেঁ দেন।প্রফেসর হারডি এই খবর পেয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন ও এক মিথ্যে কথা বলেন রামানুজনের সম্পর্কে যে সে Royal Society র একজন fellow। এই শোনামাত্র পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেন।কিন্ত এই মিথ্যে খুব তাড়াতাড়ি সত্যি তে মোড় নেই।
রামানুজনকে সত্যি সত্যিই Royal Society র Fellow আখ্যা দেওয়া হয়।আর এর পর থেকেই উনার নামে একটা উপাধি যুক্ত হয়ে F R S (FELLOW OF ROYAL SOCIETY)।
Fellow of Royal Society (F. R. S)
বলা বাহুল্য বহু কম মানুষই এই উপাধি সম্বন্ধে অবগত আছেন এখনো পর্যন্ত। বিশ্বের যে কজন বিজ্ঞানী এই উপাধি পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হোলো Newton, Michael Faraday, ও Einstein।লন্ডনে থাকাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে যাবেন। ফিরেও এলেন কিন্ত পরের বছরই এই মহানুভব ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান হয় মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে।
As per scientist Ramanujan’s thought was 83 years ahead -which has been proven later…
মাত্র বত্রিশ বছর আয়ুকালের মধ্যেই উনি 3900 টি ফর্মুলা তৈরী করে ফেলেন, যা দিয়ে যে কোনো ধরণের অঙ্ক সমাধান করা সম্ভব।যা গণিতের ভাষায় Identities ও equation বলা হয়ে থাকে।যার মধ্যে কিছু Identities ও equation থেকে রেজাল্ট তো পাওয়া সম্ভবপর হয়েছে কিন্তু সে সম্বন্ধে আজও research অব্যহত আছে।
রামানুজমের বেশিরভাগ পেপার ও research পত্রপত্রিকায় ছাপা হতো না, কারণ সম্পাদক নিজেই বুঝতে পারতেন না রামানুজন ঠিক কি বলতে চেয়েছেন।পরবর্তী সময়ে উনার এই theory পেপার থেকেই Maths, physics, এমনকি Astronomy সম্বন্ধে বড়বড় সমস্যার সমাধান সম্ভবপর হয়েছে।
“MOCK THETA FUNCTION”-Infinite calculation
1919 সালে উনার MOCK THETA FUNCTION, অর্থাৎ INFINITE সম্বন্ধে গণনার একটা সুস্পষ্ট ছবি তুলে ধরেন পৃথিবীর সামনে।বিজ্ঞানীরা এ সম্বন্ধে দীর্ঘদিন গবেষণা করেন তাঁর এই অসামান্য অবদান কে ঘিরে শেষমেশ সফলতা অর্জন করেন 2002 সালে।
বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে হলে, বা BLACK HOLE সম্বন্ধে এক পরিষ্কার ছবি বুঝতে হলে তাঁর এই অসামান্য সৃষ্টি MOCK THETA FUNCTION সম্বন্ধে বিশেষ জানা বা জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। তবেই অনন্ত অন্তরীক্ষ নিয়ে জানা সম্ভব ও সেখানে পাড়ি দেওয়া সম্ভব।তাই বলা হয় উনার চিন্তাধারা প্রায় একশো বছর এগিয়ে ছিল বাকি বিজ্ঞানীদের থেকে ।
আমরা সকলেই জানি ক্যান্সার এক মারণ রোগ। ঠিক কি হয় এই রোগে? মূলত যেই জায়গাটি তে এই রোগ আক্রান্ত হয় সেখানে cell division খুবই তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। আর এটা যেন বাড়তে না পারে তাই সেই জায়গার ট্রিটমেন্ট করার প্রয়োজন আছে।
আজকের দিনে এই MOCK THETA FUNCTION এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন বৈজ্ঞানিকেরা। এর মাধ্যমে কোনো রোগীকে কতটা পরিমান ওষুধ দেওয়া যায় যাতে রোগীর সংক্রমণ রোখা সম্ভব। CELL DIVISION এর যে মুহূর্তে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রক্রিয়া সেটা আগে থেকেই গণনা করা সম্ভব এই MOCK THETA প্রক্রিয়া দিয়ে।
How was his relation with famous British Mathematician Prof.G H Hardy
সালটা 1913,রামানুজন এক চিঠি দেন প্রফেসর হারডি কে, যেই চিঠিতে উনি উনার অঙ্কের সম্বন্ধে নানান তথ্য পেশ করেন ও বেশ কিছু অসম্পূর্ণ অঙ্কের ব্যাখ্যা ও দেন সেখানে। এই চিঠি পাওয়া মাত্র প্রফেসর হারডি,উনাকে আমন্ত্রণ দেন ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি তে আসার তাঁর গণিত নিয়ে পরবর্তী গবেষণা করতে।
প্রফেসর হারডি উনি এক লেখায় বলছেন – যে সমস্ত ফর্মুলা সমাধান করতে বাকি সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা লাগে, রামানুজনের ক্ষেত্রে যেন নিমেষেই হয়ে যায়, তিনি যেন কোনো কিছু ভাবারই প্রয়োজন মনে করতেন না।বিদ্বানদের মতে শুধুমাত্র মানসিক শক্তির দ্বারাই এটা সম্ভব হয় ।
A connection of Mathematical resonance with Spirituality
যখনই উনি কোনো অঙ্ক করতেন তখনই চোখ বন্ধ করে মন কে কেন্দ্রীভূত করতেন ঠিক দুই চোখের মাঝের অংশে,যা যোগ সাধনায় বলা হয়,এ এক এমন কেন্দ্রস্থল যা আধ্যাত্মিক শক্তির চরম বিন্দু । পুরানে এ সম্বন্ধে এক বিস্তৃত বিবৃতি ও আছে।
উনি আরো বলেন উনার কাছে এই ফর্মুলার সৃষ্টি কোনো নতুনত্ব নয়,সেটা যতক্ষণ না সাড়া পাওয়া যায় কোনো ঐশ্বরিক শক্তি থেকে তাঁর আগে কোনোমতেই সম্ভব নয় ।
এমন বহু আশ্চর্য ঘটনা প্রফেসর হারডিকে ভাবিয়ে তুলেছিল। কোনো সূত্র বা equation এর সৃষ্টির গুরুদায়িত্ব দিতেন তাঁর ইস্টদেবী নামাগিরি কে। বলতেন রাতে ঘুমের মধ্যে তাঁকে স্বপ্নে সমস্ত ফর্মুলা বলেন,তাই তিনি ব্যাখ্যা সমেত পরের দিন নথিভুক্ত করেন।এটা উনার নিজের কোনো সৃষ্টি নয় ।
Death of Ramanujan Srinivas
এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনবসান ঘটে 26শে এপ্রিল 1920 সালে। লিভারের এক সংক্রমন থেকে যা পরবর্তীকালে ডায়রিয়া বা কলেরা বলে জানা যায় ।প্রতি বছর ভারত সরকার তাঁর জন্মদিন অর্থাৎ 22 শে ডিসেম্বরকে National Mathematics Day হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।