BMV-62 Pot (মাটির পাত্র) থেকে IPHONE বানানোর এক অজানা সৃষ্টির কাহিনী
জীবনে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিষ থেকে শিক্ষা নিয়েও যে সাফল্য পাওয়া সম্ভব তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত দৃষ্টি ও লক্ষ্যে পৌঁছনোর একনিষ্ঠ মন। যিনি সেই দৃষ্টি থেকে সৃষ্টির এক বিপুল সাফল্যের পথে হাঁটতে ও ভাবতে পারেন অবশেষে জয়ী তিনিই হন। স্টিভ জবস নামটা আমাদের প্রত্যেকের কাছে অজানা নয় ঠিক এমনই এক দৃষ্টি থেকে উনার চিন্তার সাথে মেলবন্ধন ঘটিয়ে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে খাঁড়া করে দিয়েছিলেন বিশ্বের কাছে তাঁর সেই অসামান্য সৃষ্টির iphone।
পৃথিবীতে বহু নামীদামী মোবাইল ফোন নির্মাতা আছেন, কিন্তু বানাতে গিয়ে ঠিক কতভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ গভীরে চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরো নিখুঁত বানানো সম্ভব সেটাই হয়তো এক স্রষ্টাকে আলাদা করে অন্যের থেকে ,সেটাই হয় তাঁর জীবনে মূল লক্ষ্য ও জীবনে আনে অসামান্য সাফল্য। এ জীবনে হয়তো তাঁদের সৃষ্টির মূল্য তাঁরা নিজেরাই ঠিক করেন তাই হয়তো উপভোক্তা বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না তাঁদেরকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে,মানুষ সারাটা জীবন যে কোনো সৃষ্টির উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেন সেটা একমাএ দিয়ে থাকেন তাঁর চিন্তাশক্তির ভিক্তির উপর দাঁড়িয়ে।
বিল গেটস একটা কথা বলেছিলেন “ যেই কাজে যত বেশি পরিমাণে জট সেখানেই লুকিয়ে আছে বিপুল পরিমাণ সাফল্য” । এমন এক উক্তিতে কেউ একজন আরো একটু এগিয়ে এক সুন্দর উপমা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বলা এই উক্তিটিকে। ধরুন এক লম্বা সুতোকে আপনি মুহূর্তে পাক দিয়ে আপনারই অজান্তে জট পাকিয়ে ফেলেছেন অথচ সেই সুতোকে আগের অবস্থায় ফেরানো আপনার কাছে বেশ দুঃসাধ্য। আমরা বেশিরভাগ সময়ে চেষ্টা করি সেই জট ছাড়ানোর কিছুটা সময় ধরে, অবশেষে অনেকে হাল ছেড়ে দেই আবার অনেকে সেই জট ছাড়ানোর জন্য লেগেই থাকেন।
যিনি অবশেষে সেই জট ছাড়িয়ে ফেলেন হয়তো বিপুল কিছু হাসিল করেন না তবে যেটা করেন সেটা হলো ধৈর্য্য ও লক্ষ্যে পৌঁছনোর এক নিরন্তন তালিম বা শিক্ষা তাতেই হয়তো তাঁর খোলা সেই জট পাকানো সুতো এক সরল রেখায় পরিণত হয় এটাই তো সাফল্য।
এরপর আরো এক কথা বলেন জীবন কখনোই সরল রেখা নয় বেশিভাগটাই জট পাকানো সুতোর মত, হয়তো একজনই খুলতে পারেন সেই জট লাগানো সুতো আর বাকিরা সেই কৌশল আয়ত্ত করে একই পথ ধরে এগোতে থাকেন তাই যিনি খোলেন তিনিই থাকেন সৃষ্টির শীর্ষে আর বাকিরা সেই সৃষ্টির গুঁড়ো নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে ফেলেন এক সাধারণ মানুষ হয়ে, ব্যস এতটাই পার্থক্য।
এবারে প্রসঙ্গে আসা যাক, জাপানের এক বিখ্যাত মৃৎ শিল্পীর কথা- নাম ইয়কিও শাকুনাগা, উনার সৃষ্টি ছিল একটার পর একটা পর্শিলিনের বাসন বানানো অতি নিপুণতার সাথে কখনো চায়ের রেকাবী তো আবার কখনো ঘর সাজানোর নানান উপকরণ, এই পর্শিলিনের মাটিই ছিল তাঁর শিল্পের সাফল্যের জগৎ জোড়া নামের আসল চাবিকাঠি ও মূল অস্ত্র।
নিজে যেখানে থাকতেন সেখানেই কাছাকাছি পাহাড়ে যেতেন, প্রতিনিয়তই শুনেছিলেন সেই পাহাড়ের মাটির গুণাগুণ ও ক্ষমতা, তাই প্রকৃতিই ছিল তাঁর বিশেষ বন্ধু। দীর্ঘদিন ধরে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে গিয়ে অতি পরিশ্রম করে সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন এই পর্শিলিনের মাটি, কারণ এই মাটি উনি চিনতে পারতেন তার জন্য যেটা হাসিল করেছিলেন সেটা এক বিশেষ চাহনি শক্তি ও মাটির সাথে আত্মিক মেলবন্ধন ,কোন পাহাড়ের মাটি সঠিক পর্শিলিনের উপযুক্ত উনি বুঝতেন।
উদ্দেশ্য একটাই যা তুমি সৃষ্টি করতে চাও তাঁকে গোড়াতেই খুঁজে নিতে হবে অনেক গভীরে গিয়ে, প্রয়োজনে অনেক পরিশ্রম ও সময় লাগবে তবেই আসবে বিপুল সাফল্য। স্টিভ জবস বহু আগের থেকেই উনাকে চিনতেন নামও শুনেছিলেন তাই আইফোন বানানোর আগে উনি জাপানে গিয়েছিলেন পরিচয় করতে ও জানতে গিয়েছিলেন তাঁর নিপুণতা ও খ্যাতির আসল রহস্যটা ঠিক কোথায় লুকিয়ে।
সাক্ষাতে সঙ্গে নিয়ে ফিরেছিলেন যা তুমি সৃষ্টি করতে চাও তার জন্য প্রয়োজন অবিরাম পরিশ্রম ও নানান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবনা চিন্তা যেটা গ্রাহককে হয়তো এতটাও ভাবাতে পারবেনা কোনোদিন যেটা একজন সৃষ্টি কর্তা ভাবতে পারেন তবেই তো ন্যায্য মূল্যের স্বীকৃতি, দেশে বিদেশে সুনাম যা আপনি সৃষ্টি করবেন ঠিক তেমনটাই আর কেউ কোনোদিন চেষ্টা করেও পারবেন না সেখানেই থাকে আসল সাফল্য।
ইয়কিও শাকুনাগা চিনতেন না কে এই স্টিভ জবস নামক ব্যক্তিটিকে কারণ তখনও তিনি তাঁর ক্ষমতার শিখরে পৌঁছননি। স্টিভ জবস সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বেশ কিছু রেকাবি, চায়ের পট,আর ঘর সাজানোর নানান পর্শিলিনের সামগ্রী। জবস মারা যাওয়ার অনেক পরে এক সাক্ষাৎকারে ইয়কিও শাকুনাগা বলেছিলেন সেই অনবধ্য কাহিনী ঠিক কি কি ছিল তাঁর জিজ্ঞাস্য।
শুরুতেই প্রথম প্রশ্ন ছিল তাহলে কি সাফল্যের জন্য প্রয়োজন, যা আপনি সৃষ্টি করতে চান তার জন্য প্রয়োজন সেই সম্বন্ধে নানান দিক থেকে ভাবা? উত্তরে বলেছিলেন ভাবার তো শেষ নেই ভাবারও উত্তর খুঁজতে হয় থেমে থাকলে চলে না ,তাই সেই ভাবনাচিন্তাকে কাজে লাগিয়ে নেমে পড়তে হবে আসল কাজে তখনই আসবে নতুন করে আরো একটা বা একাধিক বাধা। এই বাধায় হলো আসল জট যিনি পারেন খুলতে তিনিই পৌঁছন সেই অসামান্য সাফল্যে, বাকিরা পারেন না কারণ উনারা সেই পথে হাঁটেন না তাই অসফল।
যিনি রেকর্ড গড়েন সেটা খেলাধুলো হোক কিংবা গান বাজনা বা নৃত্যশিল্প যেটাই হোক না কেন সেটা হয় ঠিক সেই সময়ের জন্য রেকর্ড। যিনি গড়লেন উনিও জানেন কতটা ব্যর্থতার পরে এই সাফল্য কিন্তু তাও মনে মনে প্রশ্ন থাকে হয়তো একদিন এই রেকর্ডও ভেঙে যাবে কারণ সৃষ্টি যিনি করেন সেই রেকর্ডই ভাঙেন আরেকজন। আমরা অপেক্ষা করে থাকবো আগামী প্রজন্মের কাছে হয়তো তাদের মধ্যে থেকে আরো একজন স্টিভ জবস কিংবা ইয়কিও শাকুনাগা বেরিয়ে আসবেন তাঁদের গড়া রেকর্ড ভেঙে।
আমার এই সত্য কাহিনী বিখ্যাত বই “IKIGAI” থেকে নেওয়া উদ্দেশ্য একটাই যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করা তাই নিজে যা শিখি তাদেরকেও জানাতে ইচ্ছে করে, অন্ততপক্ষে তারা যেন নতুন কিছু সৃষ্টির পথে এগিয়ে চলে। একটাই জীবন, একটাই জীবনের উদ্দেশ্য তাই এই জীবনে বিপুল সাফল্য হয়তো তাদের আসবে এইটুকু বিশ্বাস থেকে লেখা।
শেষমেশ একটা কথাই বলবো বই কিনুন ,তাদের হাতে তুলে দিন এই সমস্ত বই যাদের বই পড়ার অভ্যেস নেই অন্তত সকালে উঠে দুপাতা পড়তে সাহায্য করুন। সময় নেই বলে দয়া করে তৃতীয় হাতের দোহাই দেবেন না যার নাম অজুহাত। হয়তো এই অজুহাতকেই শিখণ্ডী করে সান্ত্বনা পুরস্কারের পথ বেছে নিয়েছেন নিজের জন্যে, আপনি বা আমি ভুলে যাই প্রতিনিয়ত,সেই আমি বা আপনি সবার কাছে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে চাই একটা নিজের ছবি পোষ্ট করে সবার মাঝে শ্রেষ্ঠ হতে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায়, এটাও কি নিজের কাছে নিজের প্রতি সান্ত্বনা পুরস্কার নয়?