BMV-16 SINDHU TAI SAPKAL(CHINDI)
একটা খুবই প্রচলিত কথা আছে বাংলাতে “বিন্দু বিন্দু তে সিন্ধু”, দারিদ্রতা আর কষ্টের সাথে বিন্দু বিন্দু যুঝতে যুঝতে একদিন সিন্ধু হয়ে গেছিলো যে নারী। ঠিক যেমন সুদূর তিব্বত থেকে দীর্ঘ পথ ধরে যে নদী লাহোরে গিয়ে,আরব সাগরে মেশে, নানান বাধা নানান মোড় নিয়ে সিন্ধু নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
A short story of Chindi – Her childhood days
জন্ম মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধাতে 14ই নভেম্বর,1948 সালে, এক শিশুকন্যা হিসেবে। মহারাষ্ট্রীয়ান ভাষায় “চিনদি” মানে “ছেঁড়া কাপড় বা নেতা” যা আমরা অযত্নে ফেলে দেই। সৎ মা তাকে এই নামেই ডাকতো।পড়াশোনো ক্লাস ফোর পর্যন্ত। বয়স যখন দশ বছর বিয়ে হয়ে যায়, তাঁর থেকে বয়সে দ্বিগুন অশিক্ষিত স্বামীর সাথে।
চিনদি পড়তে ভালোবাসতেন আর স্বামীর সেটাই পছন্দ ছিল না, তাই পুড়িয়ে ফেলতেন সমস্ত কাগজপত্র। একটা সময় উনাকে ভয় পেতেন তাই যেটাই পড়তেন সেটাই খেয়ে ফেলতেন বিশ্বাস একদিন এটাই উনাকে লেখিকা হতে সাহায্য করবে। “লিখে দেবো জীবনের কথা। আর জীবনের স্বপ্ন বাকি সব চিনদিদের পাশে দাঁড়াবো যাঁরাই সমাজের অবহেলিত”।
Turning point of her Life:- How Chindi became Sindhu Tai
বয়স যখন কুড়ি সিন্ধু তাই সে সময় গর্ভবতী । গোবর কোড়ানো নিয়ে এক সামান্য প্রতিবাদ যেটা উনার হকের পাওনা। সরকারের পক্ষ থেকে গোবর নিয়ে যেত কিন্তু কোনোরকমে অর্থ সাহায্য করতো না । এটাই ছিল তাঁর প্রতিবাদ।
যিনি আসতেন তাঁর নাম ছিল রঙ্গনাথন, একজন ওয়ার্ধার কালেক্টর সরকার পক্ষ থেকে। সিন্ধু তায়ের স্বামী গরু চড়াতেন আর উনি গোবর কুড়িয়ে রাখতেন, ঘুটে বানানোর জন্যে ।কালেক্টররের সাথে বচসা সিন্ধু তায়ের গোবর দিতে পারি কিন্ত বিনিময়ে টাকা দিতে হবে।আর কালেক্টর হেরে গিয়ে টাকা কড়ি তো দিলেন,কিন্ত রাগে বলে গেলেন এক কঠিন কটূক্তি “সিন্ধু তায়ের সন্তানের আসল বাবা উনি স্বয়ং নিজে”।
স্বামী নামক মানুষটা এতটাই অবুঝ ও নির্বোধের পরিচয় দিয়েছিলেন, সে যাচাই করার আগেই স্ত্রীর পেটে পদাঘাত করে দিলেন। অচৈতন্য অবস্থায় স্ত্রীকে টানতে টানতে ঠাঁই দিলেন গোসাঁলাতে। আর সেখানেই প্রসব করলেন কন্যা সন্তানের।
অচৈতন্য অবস্থায় সন্তানের প্রসব আর পাহারা রত চারিপাশে গরু চীৎকার করে উনাকে সমানে জাগাতে চাইছিল।সমাজ সেদিন উনাকে মেনে নেয়নি, ঐ যে কালেক্টরের দেওয়া মিথ্যে অপবাদ তাই কোনো ধাইমা ও এগিয়ে আসেনি সিন্ধু তায়ের পাশে। উনি সদ্য প্রসবিত সন্তানের সাথে নাড়ির ছেদ ঘটালেন সামনে রাখা পাথর দিয়ে। সে নাড়ির বাঁধনের ছেদ হোলো গুনে গুনে ষোলো বার পাথরের প্রহারে ।
Every rejection of life, makes a human stronger, and determined.
সন্তান ও পেটের ক্ষিদে এতটাই প্রখর একদিন না পেয়ে চলে গেলেন নিজেকে শেষ করে দেবেন রেলের চাকায় পিষ্ট হয়ে, এই ভেবে ।তখনই সম্বিৎ ফিরলো মনে। সন্তান যেন বলে দিল জন্মই যখন দিলে তাহলে প্রাণের আহুতির জন্য ব্যাকুল কেন?
রেলে গান গেয়ে ভিক্ষা করতেন আর সেখান থেকে ভিক্ষার অর্থ দিয়ে সন্তান ও সবাইকে খাওয়াতেন। জীবনের বহু সময় কেটেছে শ্মশানে,উনি মানতেন এই একমাত্র জায়গা যেখানে রাতের বেলায় একমাত্র শ্মশানযাত্রী ও মৃত মানুষই আসে, তাই অনেকটাই শান্তি খুঁজে পেতেন সেখানে । জ্বালানির অভাব ছিল এতটাই যে, বহুবার হাতে বানানো রুটি সেঁকেছেন মৃতদেহ পোড়ানোর কাঠের উপর রেখে।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে প্লাটফর্মের অনাথ শিশুদের নিজের শিশু হিসেবে পালন করতে থাকেন। গ্রামের লোকেরা উনাকে একটা চালার ঘর বানিয়ে দেন আর সেখানেই থাকতে শুরু করেন। চালার ঘর কখন কোন এক অজান্তে সৃষ্টি করে ফেলে বিশাল এক “সম্মতি অনাথাশ্রম ” যেখানে এখন পনেরোশো অনাথ শিশু বাস করে।
A real goosebump story of Sindhu Tai
“রাখে হরি তো মারে কে” ।একটা সময় সিন্ধু তাই বাসে করে এক স্টপেজ থেকে যাচ্ছেন আরেক স্টপেজে,পরনে শ্মশানে মৃতের ছুঁড়ে ফেলা ছেঁড়া শাড়ী। কন্ডাক্টর সমানে উত্যক্ত করছেন ভাড়া দেওয়ার জন্য,এদিকে পয়সা নেই আর বাইরে বিদ্যুতের চমক ও মুষলধারে বৃষ্টি, তাই নামার ও উপায় নেই।
বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক অতি গরিব যাত্রী, যাঁর নিজেরও বাস ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা নেই,সিন্ধু তাইকে দেখে খুবই বাহবা ও সুখ্যাতি করেন তাঁর গানের কারণ তাঁর গান উনি আগে বহুবার শুনেছেন ও ইচ্ছে প্রকাশ করেন একটু চা খাওয়াবেন।
সিন্ধু তাই মনে মনে খুবই আনন্দিত, এই প্রথম কেউ তাঁকে নিজের পয়সায় কিছু খাওয়াবেন। নেমে পড়লেন তাঁর কথায়। যেই নামা সেই বিপদ,চোখের সামনে কিছু বোঝার আগেই বাজ পরে সম্পূর্ণ বাসটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।সিন্ধু তাই সেই লোকটিকে হন্যে হয়ে খুঁজেছিলেন যাঁর জন্য এই জীবন পাওয়া,কিন্তু পেলেন না।
Sindhu Tai’s children (4 biological), 1500 adopted
যেই সন্তানকে জন্ম দিতে গিয়ে জীবনের এতগুলো বছর শুধু সংগ্রাম আর সংগ্রাম, আর সৃষ্টি করলেন একের পর এক নজির- অন্যের জন্য সেই মমতাভরা সন্তানের মমতা তাঁর প্রতি কতটা বর্ষায় সেটাও জানার প্রয়োজন। কন্যা মমতা মায়ের সাথে এক হয়ে সমস্ত অনাথ আশ্রম একা হাতে চালান।
Awards of Sindhu Tai,including 2021 Padmashree.
দেশে বিদেশে এযাবৎ উনি প্রায় 750র ও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন। যখন যিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন,ডাক এসেছে উনার কোনো না কোনো পুরস্কার পাওয়ার। তবে একটাই কথা বলেন “পেটের রেশন চলে আজকাল আমার ভাষণ দিয়ে”।উনি আরো বলেন সরকার থেকে হয়তো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, সম্মান পেয়েছেন, কিন্ত আর্থিক অনুদানেরও প্রয়োজন,তবেই এই অনাথ আশ্রম চালানো সম্ভব।
Piplantri
“বিবিধের মাঝে দেখো মিলনও মহান” ।রাজস্থানের রাজ্সামান্ড জেলার অন্তর্গত এক গ্রাম pipalantri। এখানে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে প্রথা আছে সেই সন্তানের আগামী জীবন যেন উজ্জ্বল হয় তাই সেই সন্তানের উদ্দেশ্যে একশো এগারোটা গাছ লাগানো হয়। সন্তান বড় হলে অন্তত পক্ষে এই গাছ বিক্রি করে হলেও তাঁর জীবন আরো সুন্দর করা সম্ভব হয়।
Biopic film in Marathi about Sindhu Tai
2010 সালে তাঁকে নিয়ে সৃষ্টি হয় তাঁরই biopic ফিল্ম Mee Sindhutai Sapkal, by Ananta Mahadevan। যা 54তম london Film Festival এ world premiere হিসেবে বিবেচিত হয়।
মানুষ তাঁর সারা জীবনের ভালো কর্মফল আর নিরন্তন প্রয়াস একদিন ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলে,আর আমরা আজীবন সাক্ষী রয়ে যাই এই ধরণের পথপ্রদর্শক সিন্ধু তায়ের মত মানুষদের দেখে।