BMV-14 VIKASH KHANNA-“if you want to become a slave for anyone, be only for your mother”
এ হোলো এক মা বিন্দু আর তাঁর ছেলের কাহিনী। জন্মস্থান অমৃতসর,1971 সালে, 14th November। জন্মের পরে যেই ছেলের নাম রাখেন বিকাশ। ঈশ্বর ছেলে তো দিলেন কিন্তু কিছুটা অসম্পূর্ণ সন্তান। দুটো পা তার উল্টো জন্মের থেকেই। অপারেশন হোলো দিল্লীতে শর্ত একটাই হাঁটতে পারবে কিন্তু কোনো দিনও দৌড়োতে পারবে না।
তখন মা বিন্দু একটাই কথা বলেছিলেন “আমার সন্তান দৌড়োনোর জন্য জন্মগ্রহণ করেনি, সে ওড়ার জন্য জন্মেছে,এতটাই সে প্রভাবশালী হবে একদিন”। স্কুলে বন্ধুরা তাঁকে একটু উপহাসের চোখে দেখতো কারণ তাঁর জুতো ছিল কাঠের। প্রতিবছর বিকাশ খুবই আনন্দিত হতো দেওয়ালি আসলেই ।
How far derogatory life during childhood days
বন্ধুরা যে লম্বা পটকা ফাটাতো আঙ্গুল দিয়ে ঘষে বিকাশ সেটা কাঠের জুতোয় ঘষে ফাটাতো, কখনো বা পায়ে হেঁটে এতেই তাঁর আনন্দ।বাবা দেবেন্দার,পেশায় একজন ক্যাসেট বিক্রেতা,অমৃতসরে, দোকানের নাম “দিল লগি”।আর বিকাশ ছিল বাবার দোকানের একমাত্র কর্মচারী।
বাবার ব্যবসায় মন্দা বিকাশকে ও তাঁর পরিবারকে দমাতে পারেনি। ঠাকুমা ভালো সোয়েটার বুনতে পারতেন। বিকাশ স্থানীয় সমস্ত স্কুলে গিয়ে গিয়ে অর্ডার নিতেন। একটা সময় এক বড় অর্ডার পেলেন স্থানীয় এক স্কুল থেকে ও সেটা সময়মত স্কুলে দিতে হবে।বাধ্য করলো তাঁকেও সে কাজ শিখতে সংসারের হাল ধরার জন্য । এমনকি ঠাকুমার থেকে কাঁথা সেলাই করা শিখে সে নিজেও বাড়িতে বাড়িতে দিয়ে আসতো।
Cooking as a passion, preparing good food could be destination……
ছোটো থেকেই বিকাশের খাবারের তালিম ঠাকুমার থেকে। যখন নয় বছর বয়স সে কাবাব বানাতে সিদ্ধহস্ত ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কুলচা, ছোলা বাটুরা সমস্তটাই বানাতে পারতো সে। বাড়িতে যেকোনো অনুষ্ঠানে খাবারের দায়িত্ব সে একাই সামলে নিত অকপটে। বয়স যখন তেরো কি চোদ্দ ঠাকুরদাদার সাথে প্রথম সে দিল্লির মৌর্য হোটেলে যায় , ঠাকুরদাদা তাঁকে দেখান খাবার কত সুন্দর ভাবে বানানো ও পরিবেশন করা সম্ভব।
নাবালক বিকাশ সেদিন সেই খাবার দেখে চোখের জল আটকাতে পারেননি খুশিতে আর এক কঠিন সংকল্প নেন আমাকে এই ধরণের খাওয়ার তৈরী করতে হবে একদিন। তালিম নেওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন সে ব্যাপারে বাড়িতে রীতিমতো যুদ্ধ করে চলে যান মণিপালে হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিখতে।
Oath taking, what Vikash exactly intend for ,during interview at Manipal
ইন্টারভিউ দেন,কর্তৃপক্ষ ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন শিশু বিকাশ উত্তর দেন পাঞ্জাবী ভাষায়। তাঁরা তাঁকে কি কি খাবার বানাতে পারে সে সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অকপটে বলতে থাকে। তাঁর সেই প্রাদেশিক পাঞ্জাবী ভাষাতে কথা বলাতে কর্তৃপক্ষ সকলে হাসতে থাকেন।
বিকাশ জানতে চান আদৌ কি তাঁরা তাঁকে স্বীকার করেছেন, সে কি পাশ করেছে? তাতে কর্তৃপক্ষ বলেন দেখো তুমি একটা শব্দও ইংরাজি জানো না, এখানে তাঁদেরই প্রথমে আমার নেই যারা ইংরেজিতে পটু। তুমি বরং পরের বছর এসো ইংরাজি শিখে ততদিনে তুমি আরো কুলচা, ছোলাবাটুরা বানাও। এটা তোমার ঠিক যথোপযুক্ত জায়গা নয় ।
বিকাশ খুবই দুঃখিত হয় তাঁদের কথায় সে কর্তৃপক্ষকে বলেই ফেলে “আমি জানতাম আপনারা আমাকে নিয়ে বিদ্রুপ করছেন, আমি জীবনে যা যা শিখেছি রান্নাবান্না সংক্রান্ত সে কথায় তো বলেছি।এখানে কটা ছেলেমেয়ে পারে আমার মত রান্না করতে, আর আপনারা তো এই একই জিনিসেরই প্রশিক্ষন দেন এখানে, হয়তো আরো একটু সুন্দর উপায়ে,আমি সেটাই শিখতে এসেছিলাম।
Feeling Insulted, for lack of knowledge in English
একদিন আসবে আপনার এই প্রতিষ্ঠানের ছেলে মেয়েরা এখান থেকে পাশ করে আমার বানানো পাঁচ তাঁরা হোটেলে কাজ করবে, প্রয়োজনে আপনারাও খেয়ে যাবেন”।
একটা অপমানের জ্বালা নিয়ে সেই কলেজের সিঁড়িতে বসে ভাবছে কি করা যায়। এমন সময় প্রিন্সিপাল তাঁকে দেখে এগিয়ে আসেন। সে অকপটে বলেই ফেলে “বাড়ি কি করে যাবো আমি তো রীতিমত ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে এসেছি, এই কলেজেই পড়বো বলে”।
শুনে প্রিন্সিপাল অবাক হয়ে তাঁকে বলেন ” বাবা তুমি যে সরলতার শিক্ষা পেয়েছো এই শিক্ষা তো আমরা তোমায় দিতে পারবো না, এখানে সবই শেখানো হয় একমাত্র সৎ কি করে হতে হয় ওটা বাদে, সেটার বড় অভাব আজকের দিনে”। তিনি তাঁকে এডমিশনের সুযোগ দেন।
“Demolition of Restaurant , failure made History”
নিজের তিন বছরের পড়াশুনো শেষ করে পাড়ি দেন মুম্বাইতে । সেখানে দীর্ঘদিন কাজ করে আবারও ফিরে আসেন নিজের বাড়িতে অমৃতসরে।নিজের বাড়িতে একটা ব্যবসা তো ছিলই সেটা বিকেলের দিকে খুলতেন মা ও বাবা, বিকাশ আসার পরে সেখানে যোগ দেন তাঁদের সাথে।
একদিন বাড়িতে বেশ কিছু পুলিশ আসেন তাঁর বাড়ির ছাদ illegal construction ছিল বলে, চোখের সামনে ভেঙেও দেন। বিকাশ এতটাই ভেঙে পড়ে সে মনস্থির করে এ দেশে আর থাকবে না,আমেরিকা যাবে আর সেখানে গিয়ে হোটেল খুলবেন।
সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে বিকাশ আমেরিকা পৌঁছন, নিউইয়র্ক শহরে।ভাবা এক, আর বাস্তবের সাথে যুঝে নিজেকে প্রমান করা আরেক। হোটেল খোলার স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন এরই মধ্যে মুম্বাইতে এক পাঁচতারা হোটেলের শেফের অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। খোলা তো দুরস্ত ঘটলো এক মজার কাহিনী।
এক মহিলার সাথে পরিচয়, চুক্তি প্রতিদিন একঘন্টার কাজ, সাথে বারো ডলার ও টিপস। কাজ হোলো বাড়ির বিড়ালের দেখাশোনা করতে হবে কারণ একটাই বিড়ালটি বেশ অবসাদগ্রস্ত কিছুই খায় না, তাই তাকে সময় দিতে হবে।
বিকাশ বিড়ালটি দেখে অবাক হয়ে যান এতই মোটা, সে চীৎকার করে বলে এত মোটা বিড়াল সে জীবনে দেখে নি। মহিলা রেগে গেলেন আর বললেন,এভাবে বোলো না সে আরো অবসাদে ভুগবে।বিকাশ সেই বিড়ালের সাথে কথা বলতো পাঞ্জাবী ভাষায়, আর তাকে দেখভাল করতো। কিছুদিন সেই কাজ করার পর কিছু অর্থ রোজগার হলে উনি ছেড়ে দেন সেই কাজ।জীবনে চুরি ছাড়া সব ধরণের কাজ করেছেন।
Turning moment of career in life
নিউইয়র্ককে একটা হোটেলে প্রথম ধোকলা বানানোর সুযোগ পান। আর সেখান থেকেই যাত্রা পথ শুরু। বহু প্রশংসিত এই ধোকলা খেয়ে সেখানের এক শেফ তাঁকে নিয়ে যায় এক পাঁচতারা হোটেলে ইন্ডিয়ান ডিশ বানাতে। তাঁর রান্না খেয়ে বিশিষ্ট জনেরা এতটাই খুশি ছিলেন, প্রত্যেকে তাঁকে সম্বর্ধনা দেন করতালি দিয়ে।
একটা ইন্টারভিউ তে উনি বলেন যে কোনো শেফের বা বয়ের হোটেলে কোনো লোক আসলে দুটো জিনিস তাঁকে বার বার শুনতে হয়,এক রান্না যিনি করেছেন তাঁর নাম কি আর দ্বিতীয়টা শেফ বা বয়ের সাথে দেখা হলে বাথরুম টা কোন দিকে। এছাড়া যেন তাঁদের আর কোনো কথা থাকে না। সেটা স্বদেশে হোক কিংবা বিদেশে।
জীবনে বিকাশকে আর কোনোদিন ঘুরে তাকাতে হয়নি এই শেফের পরিষেবার থেকে উন্নতির পথে। একটা সময় হোয়াটহাউস থেকে ডাক আসে বারাক ওবামার পছন্দের শেফ হিসেবে। দেশে বিদেশে যে কোনো ধরণের নামীদামী লোকের অভ্যর্থনায় আজ উনার নাম চারিদিক থেকে আসে। তবে উনি রান্নার আসল শ্রেয় দেন অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরের লঙ্গরখানার থেকে শেখা আসল রান্না ও তার সুস্বাদকে ।
Achievement in life, contribution for charity, and indian film industry
“Cook for a smile” এ এমন এক charitable cooking contest যেখানে কর্পোরেট জগতের CEO রা একসাথে বিকাশ খান্নার সাথে রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। গতবছর অর্থাৎ 2020 সালে CORONA কালে নিশুল্ক 5 কোটি মানুষকে খাওয়াদাওয়া করিয়েছেন। যা এখনো পর্যন্ত সমসাময়িক বাকি যে সমস্ত FOOD CAMPAIGN হয়েছে বিশ্বজুড়ে তার মধ্যে অন্যতম ।একজন শেফের পক্ষে একটা সম্মানীয় উপাধি Michelin star Chef সেটাও উনি অর্জন করেন।
এক বই THE LAST COLOR লিখে জাতীয় সর্বোচ্চ বিক্রীত বই এর লেখক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এখানেই থেমে থাকেনি তাঁর এই বই, রীতিমত সারা ফেলেছে সিনেমা জগতে। THE LAST COLOR nominated in Oscar Consideration for best picture in 2020।
তাঁকে নিয়ে লেখা এক বই “BURRIED SEEDS” একজন শেফের বেড়ে ওঠা জীবন কাহিনী যা পরবর্তী সময়ে সিনেমায় স্থান পায় । জীবনে প্রতিটা মুহূর্তে এই মানুষটি ভাবতেন যা করবো দেশের জন্য করবো, বিদেশে গিয়ে রন্ধন শিল্পে শিক্ষা নিয়েছেন ঠিকই কিন্ত মন পড়ে রয়েছে দেশের মাটির গন্ধে। যখন স্বীকৃতি পেয়েছেন সে দেশে তখনও বলেছেন “মেরা ভারত মহান”।