BMV-7/3 রুটি কলা থেকে বেড়ে ওঠা লালন- তৃতীয় ভাগ
ছোটো থেকে শুনেছি মানুষের জীবনে নানা টানাপোড়েন, চড়াই উৎরাই লেগে থাকে তবেই জীবনে সাফল্য আসে। এটা স্কুলে পড়াকালীন বহু মানুষের জীবন কাহিনী বাংলায় পাঠ্য হিসেবে পড়তাম আর নিজের সাথে তুলনা করতাম।আমার সাথে বাকি বন্ধুদের একটু তফাৎ ছিল তাঁরা এটাকে পাঠ্য হিসেবে দেখতো কারণ তাঁরা তো সংগ্রামের সাথে যুঝে নি, আর আমি আমার সাথে তুলনা করতাম জীবন কাহিনী গুলোকে।
কিন্ত বেশির ভাগটা দেখতাম এই সংগ্রাম টা একটু বড় বেলায় আসতো অনেক সংগ্রামী মানুষের ক্ষেত্রে। তাহলে আল্লাহ রহমত আমারে দিয়া এত ছোটবেলা থেকে কেন এই পরীক্ষা নিচ্ছেন, এই প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘুরপাক করতো সর্বক্ষণ।একদিন এই উত্তর পেলাম এক পুরান পেপার পড়তে পড়তে, মন মানলো।
আমি এমন এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব যাকে দিয়ে আল্লাহ রহমত ছোটোর থেকে সংগ্রাম করা শেখাচ্ছেন গোচরে, অনেক বড় কিছু করাবার উদ্দেশে। সেটাই যদি ঠিক হয় তাহলে আগামী সমস্ত পথটা কষ্টের মধ্যে কাটাতে রাজি, শেষ পরিণতি খুবই ভালোই হবে এই আশায়।
ক্লাস টেনে ভর্তি হলাম, কিন্ত যথারীতি আমার ক্লাসে ফাঁকি পড়লো,আর ক্লাসে উপস্থিতির হার এতই কম যে টেস্ট পরীক্ষা দিতে বাধা এলো। এবারে কিন্ত হেডমাস্টার, স্যার কাউকেই অনুনয় বিনয়ে আমার কাজ হোলো না।এমনকি একদিন স্যারের বাসায় গিয়ে উনার পায়ের নিচে বসে কেঁদেই চলেছি, বলছি স্যার আপনি পারেন যদি আমায় সাহায্য করতে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন।
স্যার কোন কথায় শুনলেন না ” আমার পেটের চিড়া ভেজে কিন্তু অনুনয়ের চিড়া ভিজলো না”। আমি এও বললাম স্যার নিয়ম তো মানুষই তৈরী করে সেখানে কি ব্যতিক্রম হইতে পারে না। আমি তো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত পুরোপুরি এও তো হতে পারে আমার পরীক্ষার ফল বাংলাদেশে একটা নজির সৃষ্টি করতে পারে। তাতেও কাজ হোলো না অবশেষে আমার পরীক্ষা দেওয়া হোলো না।
আবার পরের বছরের জন্য প্রস্তুতি,মনকে বললাম এই স্কুলেই পরীক্ষা দেবো আমি। আল্লাহ রহমত আমার আরেক পরীক্ষা নিচ্ছেন ঐ যে পেপারে পড়েছিলাম ছোটবেলায় সেটা গুছিয়ে আমার ব্যাগে রেখেছিলাম, সেটা আবারও পড়ি। মনে বিশ্বাস আবার ভিতরে কোথাও সংশয় একটা টানাপোড়েন।
মাঝে মধ্যে বিশ্বাস হয় আবারও মনকে বলি ওটা লেখা পড়তে ভালো লাগে কিন্তু ওটা আসল সত্য নাকি? লিখতে হয় তাই কেউ লিখেছে। আমার জ্ঞানই বা কত এই পৃথিবী সম্বন্ধে। মন যেন বলে ওটাই সত্যি ওটাই তোমাকে জীবনের পথ দেখাবে যিনি লিখেছেন উনি তাঁর জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। পরের বছর আরো কষ্ট এসে ধরা দিল, কিন্তু টেস্টে বসার সুযোগ এলো, পরীক্ষায় পাশ ও করলাম ভালোভাবে।
নিজের উপর বিশ্বাস এতটাই ছিল যে যা পরীক্ষা দেবো যতটুকু দেবো আমার পরীক্ষা যথেষ্টই ভালো হবে।এই নিজের উপর এত বিশ্বাস যেন বুঝিয়ে দিল কেউ একজন আছে আমার মনের ভিতর সে আমার ইস্টদেবতাই হোক বা আল্লাহ তালাই হোক আমাকে কিছু বলেন করতে,যেটা থেকে নিজের উপর এত বিশ্বাস দিন কে দিন বেড়েই চললো।
টেস্টে পাশ করলাম ভালো নম্বর পেয়ে স্যারেরাও দেখলাম আমার প্রতি কিছুটা হলেও সদয়। মনে মনে ভাবলাম এতদূর যখন পৌঁছে গেছি সামনেই বোর্ড দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম ভরতে হবে। তার আগে যেটা করতে হবে অন্তত সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস করতে হবে তা না হলে আবারও যদি পরীক্ষায় উপস্থিতির হার কম থাকে বোর্ডের পরীক্ষায় বসতে দেবে না।
আবার নতুন করে সমস্যা এসে হাজির হোলো। ওটা জানতাম “সমস্যাটা হোলো আমার গয়না, আর উদ্দেশ্যটা হোলো আমার মনের আয়না”।রেজিস্ট্রেশনের জন্য আনুমানিক সতেরোশো টাকা লাগবে সে টাকাটা আমার আছে অল্পবিস্তর। কিন্তু সেটা শেষ হলে পরবর্তী সময়ের জন্য এখন থেকে টাকা মজুদ রাখতে হবে তাই একটা চায়ের দোকানে কাজ নিলাম বাসনপত্র ধোওয়ার বৈকাল চারটা থেকে আটটা পর্যন্ত।
যেদিন স্কুলে যাই ফিরতি পথে চায়ের দোকানে কাজ করে হোটেলে ঢুকি।কিছু টাকার খামতি ছিল হোটেলে গিয়ে মালিককে অগ্রিম ছয়শো টাকা চাওয়াতে উনি রেগে গেলেন।
বাকবিতন্ডা এতই বেড়ে গেলো “উনি বললেন পড়াশুনা করে কি হবে বড় হয়ে ডাক্তার ব্যারিস্টার হবা, কিন্ত আমার হোটেল তো তুমার জন্য লাটে উঠতে চলেছে”, এই পর্যন্ত ঠিক ছিল ও আমার অভ্যেস আছে। হঠাৎ দেখি কিছু বোঝার আগেই আমার গায়ে হাত দিয়ে দিলেন ও গালাগাল করলেন।
আমি কিছু বলিনি চোখ দিয়ে আমার অঝোরে পানি পড়ছে আর ভয়ে ভয়ে আছি যদি উনি আরো রেগে যান তাহলে আমার চাকরিটাও চলে যাবে তাই চুপ করে শুনছি আর আল্লাহ রে ডাকছি মনে মনে। আমাদের আবাসিক হোটেলে একজন গেস্ট প্রায় সময়ে ঢাকা থেকে আসতেন তাঁর কাজে,নাম বাবুল শাহ, উনি দূরে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনেছেন।
সব কিছু থেমে গেলে সামনে আসেন মালিককে বলেন এই ছেলেটির গায়ে আর কোনোদিন হাত দেবেন না, তা না হলে আমি আর কখনোই আপনার হোটেলে আসবো না, ছেলেটি পড়তে চাইছে ওকে পড়ার সুযোগ দিন। আমাকে আলাদা করে ডেকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন আর আমার হাতে সাতশো টাকা দিলেন, বললেন পড়াশুনা ছেড়ো না ওটা করো সবাই এর মর্ম বুঝবে না।
আমার আব্বার ক্ষমতা ছিল কিন্ত আমি করি নাই একদিন দেখবে তোমার সম্মান আমার থেকেও অনেক বেশি হবে। আর হ্যাঁ ভবিষ্যতে কখনো ঢাকাই আসলে আমার বাড়িতে এসো ওখানেই থেকো। আমি উনাকে মামা বলতাম। তাতেই উনি বললেন মামা যখন বলেছো ভাগ্নার জন্য তো কিছু করতে হয় নিশ্চয় করবো।দেখতে দেখতে বোর্ডের পরীক্ষার দিন চলে এলো মনে খুশি কিন্তু প্রকাশ করার বা শোনার কোনো লোক নাই ।
আমি মাধ্যমিক দিচ্ছি আর কিছুদিনের মধ্যেই আমি ক্লাস টেন পাশ করে স্কুলের গন্ডি থেকে কলেজের গন্ডিতে পা রাখবো। কিন্তু যেদিনই পরীক্ষা দিতে যেতাম সেদিনই মালিক ও আমার হোটেলের বাকি কর্মচারীরা আমায় দেখে টিটকিরি করতো রাগ তো হতোই না বরং তাঁদের দেখে কষ্ট হতো, শিক্ষার অভাব আছে তাই ওরা শিক্ষার মূল্য বোঝে না।
শিক্ষার মূল্য পর পর কয়েকদিন অভুক্ত থাকা কষ্টের চেয়েও অনেক গুণ বেশি। আমি বহুদিন অভুক্ত থেকেছি কিন্তু পড়তে বসলেই সেই পেটের খুদাও চলে যেত।মাধ্যমিক দিলাম যথাসময়ে পাশ ও করলাম সে খবর পেয়েছি মাত্র, স্কুলে গিয়ে খবর নিলাম বললেন মার্কশিট আসতে দিন পনেরো সময় লাগবে। এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি শহরে যাবো অর্থাৎ ঢাকাই কিন্তু যাবো কি ভাবে ঐ শহর সম্বন্ধে আমার পূর্ব কোনো ধারণা তো নেই।
আমারই এক বন্ধু মোয়াজ্জিন তাকে গিয়ে বলি বন্ধু আমি হোটেলের কাজ ছেড়ে ঢাকাই চলে যাচ্ছি তোমার বাসায় যদি দিন পনেরো থাকার ব্যবস্থা হয় তুমি যদি আমাকে থাকতে দাও । আমার স্কুলের মার্কশিট পেলেই পরের দিন আমি চলে যাবো, সে আমার কথায় রাজি হোলো।
অবশেষে স্কুলের সব কিছু মিটিয়ে মার্কশিট নিয়ে ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্তের দিনক্ষণ ঠিক করলাম ।আমি যেখানে থাকি তার পাশেই চাউরঙা রেল স্টেশন প্লাটফর্মে গিয়ে ঢাকার একখান টিকিট কাটি কিন্তু যাবো কেমনে ঢাকা উত্তরে না দক্ষিণে সেটাই জানি না। দাঁড়িয়ে আছি,লোকজন দেখি কে কোথায় যায়।
তখন দেখি এক ভদ্রলোক আরেকজন কে বলছে “চলি দেরি হয়ে যাচ্ছে বাকি কথা পরে হবে ঢাকা থেকে ফিরলে”।এমন সময় প্লাটফর্মে একটা এনাউন্সমেন্ট হোলো ঢাকা যাওয়ার ইন্টারসিটি ট্রেন অমুক প্লাটফর্মে আসছে। আমি ঐ লোকটার পিছন নেই,উনি যেদিকে যান আমিও উনাকে অনুসরণ করতে থাকি।
অবশেষে ট্রেন আসাতে আমি উনার সাথে একই কোম্পার্টমেন্টে উঠি ও তারই পাশে গিয়ে বসি। কারণ একটাই লোকটাকে আমার সজ্জন মনে হয়েছিল। এমন সময় টিকিট পরীক্ষক আসেন দেখি আমার পাশের ভদ্রলোকের সাথে আলাপ করেন কেমন আছেন, কোথায় চললেন, বহুদিন পরে দেখা ইত্যাদি বুঝলাম ইনি নিজেও রেলের কর্মচারী।
আমার কিছুটা হলেও স্বস্তি হোলো, টিকিট পরীক্ষক আমার থেকে টিকিট চাননি, উনি ভেবেছেন আমি পাশেরই ভদ্রলোকের পরিচিত লোক , যাক ঢাকা যেতে আমার বেগ পেতে হোলো না।আমি সকাল ছয়টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছলাম।আগে সিনেমাতে দেখেছি এই কমলাপুর স্টেশন বহু সিনেমার শুটিং এখানে হয়, তাই আমিও দুচোখ ভরে সেই জায়গা টাকে উপলব্ধি করছিলাম।
আমার সাথে ছিল একটা লম্বা ব্যাগ সেখানে আমার কিছু কাগজপত্র ও জামাকাপড়। ব্যাগটা মাটিতে থুয়ে আমি অল্প সামনে গিয়ে বাথরুম করতে যায় অমনি ফিরে এসে দেখি ব্যাগটা নেই।মনটা খারাপ খুবই, সঙ্গে আছে মাত্র তেত্রিশ টাকা বাকি যা ছিল সবই ব্যাগে।
আগেও বলেছি ঢাকা থেকে এক লোক আসতো আমাদের আবাসিক হোটেলে নাম বাবুল শাহ উনি বলেছিলো ঢাকাই আসলে আমার বাসায় এসো আমি থাকি সাভারে। কমলাপুর স্টেশন থেকে বেড়িয়ে আমি রিকশায়ালাদের বলি তোমরা সাভারে যাবে নাকি, দেখি কোনো রিকশা যাই না, কয়েকজন তো হেসেই গড়াগড়ি ওরাও বুঝেছে আমি গ্রাম থেকে আসা এক বেকুব।
কারণ সাভার কমলাপুর থেকে বাসেই প্রায় আধঘন্টা লাগে। যেই বাসে উঠি সেই বাস আমাকে নামিয়ে দেই কারণ বুঝি না। আমি বেকুব সেটা বুঝি কিন্তু অতটাও তো নই আমার কথা বার্তা বা পোশাকে।আরেক বাসে উঠতেই আমাকে নামিয়ে দেয়, মনে রাগ হোলো কন্ডাক্টর কে রেগে বলেই ফেললাম “আমারে নামায়ে দেন কেন আমার পোশাক পরিচ্ছদ কি এতই খারাপ বাসে ওঠার মত নয় , নাকি আমারে দেখলে মনে হয় ভাড়া দিমু না”।
কন্ডাক্টর আমার প্রতি সদয় হোলো সে বলে ভায়া আপনে ভুল বাসে উঠসেন, যেই বাসের সামনে সাভার লেখা আছে সেটাতেই উঠলে আপনে পৌঁছে যাইবেন।উনি এও বলে দিলেন মতিঝিলের পাশে শাপলা চত্তর বলে যেই জায়গাটা আছে সেখান থেকে সাভারের বাস পাবেন।শহরের লোক আর গ্রামের লোকের মধ্যে অনেকটা পার্থক্য আছে। শহরের লোকে অনেকেই পড়াশুনা না করলেও তাদের কথা বলার আদব কায়দা এমন বোঝার উপায় নাই।
আর গ্রামের লোকে শিক্ষিত হইলেও চালচলনের ধরনেই কিছুটা হইলেও প্রকাশ পাই মানুষ গুলা বেকুব।শেষমেশ বাস পেলাম সাভারের। আমার এখনো মনে আছে আমাকে সাভারের “রাজ্জাক প্লাজার” সামনে নামিয়ে দিল।
আমি ওখানে অনেক মানুষকে জিজ্ঞাসা করি ভাই এখানে স্মৃতিশোধ কোথায়? যাকেই শুধাই সেই বলে সেটা নবীনগর। মন মানে না আমি বলি না আমাকে বলেছে সাভারেও স্মৃতিশোধ আছে।একটা সময় বিরক্ত হয়ে যাই,এক চায়ের দোকানে গিয়ে বলি আমি খুবই বিপদে পড়েছি আমাকে একটু স্মৃতিশোধের ঠিকানা টা বলেন কারণ আমার এক মামা বাবুল শাহ ঐ স্মৃতিশোদের পাশেই থাকেন।
তিনি ব্যাপারটা বুঝলেন তিনি বলেন দেখো কেউ যদি বাইরে যাই ঢাকা শহর থেকে তাহলে একটা জায়গা আছে সেখানে ওঠে সেই জায়গাটা আমাদের স্থানীয় প্রচলিত কথা স্মৃতিশোধ, আসলটা কিন্ত নবীনগরে।
একটা বাস ধরে পৌঁছলাম সেখানে,স্মৃতিশোধ তো পেলাম কিন্তু আশেপাশে কোনো বাড়িঘর দোর নাই, যাকেই জিজ্ঞাসা করি কেউ তাঁরে চেনে না অথচ উনি বলেছিলেন ওখানে গিয়ে আমার নাম বাবুল শাহ বললেই লোকে চিনবে। আমরা গ্রামের লোক শহরের লোকের কথার মারপ্যাঁচ এত বুঝি না তাঁরই ভরসা করে এসেছি এই শহরে অন্তত দুই একদিন থাকার জন্যে কিন্তু এতটা বেকুব বানাবে কেমনে বুঝি।
এদিকে সন্ধ্যে নেমে আসতেই আমাকে স্মৃতিশোধ থেকে বার করে দিল। গতকাল রাতে ট্রেনে ওঠার আগে ঐ রুটি কলা খেয়ে উঠেছি, বাকিটা ব্যাগে ছিল সেই ব্যাগ ও খোয়া গেছে, টাকা পয়সাও কিছু নাই, এদিকে ক্ষুদাও পেয়েছে। বিদেশে বিপাকে এসে নিজের উপর রাগ আর ঘেন্নায় ভেঙে পড়েছি।
সেদিন প্রকৃতি ও আমার সাথ দিল না অসম্ভব বৃষ্টি সেই অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে আমি আবার “রাজ্জাক প্লাজার” সামনে এসে পৌঁছয় তখন প্রায় রাত বারোটা।একটা বেঞ্চিতে এসে বসতেই একজন দারোয়ান আমার খেদিয়ে দিল। আমি আবার উঠে তারই পাশে “মেহতাব প্লাজার”পাশে একটা গলিতে অনেক লোকজন দেখলাম সেখানে গিয়ে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম।
বসতেই আরেক দারোয়ান আমায় উঠিয়ে দিল। একজন দিদি আমার প্রতি সদয় হোলো সে দারোয়ান কে বকাবকি করলো। বললো এত রাতে একটা বাচ্চা ছেলে কোথায় যাবে বাইরে বৃষ্টিও পড়ছে। আমি তাকে আমার পুরা ঘটনাটা বলি, দিদি বললো তুমি বসো এখানে আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছি।
আমাকে অনেক খাওয়ার সেই দিদিটা কিনে দিল আমি তো মনের সুখে এত ভালো ভালো খাবার কোনোদিন ও পাইনি, তাই খাচ্ছি আর আল্লাহ রহমত কে আর্জি জানাচ্ছি আমার প্রতি এতটা কৃপা করার জন্য। রাত প্রায় দুইটা বাজে ঐ দিদিটা আমাকে উনার বাসায় নিয়ে গেলো আমি ও কিছু না ভেবে চলে গেলাম দিদির সাথে।
মামা পেলাম না দিদিরে তো পাইলাম, তারেও কোনোদিন পেয়ে যাবো এই ভাবলাম।তবে যাঁর আশায় আমার এই ঢাকা শহরে আসা সেই বাবুল শাহের নাম বলতে দিদি মনে হয় চিনলো উনারে কিন্ত কিছু বলে নি শুধু বললো লোকটা ভালো নয় তাঁর খোঁজ কোরো না। দেখা মেলেনি ভালোই হয়েছে।
তুমি যতদিন ইচ্ছে আমার বাসায় থাকো ।তোমার কলেজে ভর্তি তারপর এই ঢাকা শহরে কোনো একটা কাজ জোটাতে পারলেই তখন না হয় চলে যেও। আমিও রাজি হলাম পরের দিন বেলা দশটায় ঘুম ভাঙে। দিদির সাথে নানান কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে গেলো। দেখি দিদি বলে তুমি থাকো আমি বের হবো,আসতে আসতে বেশ রাত হবে,আমার জন্য অপেক্ষা না করে রাতে খেয়ে শুয়ে পোড়ো।
আমিও দিদির কথায় রাজি হলাম, দিদি বেরিয়ে পড়লো কাজে,সন্ধ্যে নেমে এসেছে এমন সময় দেখি কয়েকজন লোক সঙ্গে পুলিশ আমাকে ঘর থেকে বার করে দিল বললো শিগগির ঘর খালি করো, তোমার দিদি পুলিশের হেফাজতে,সে ধরা পড়েছে, দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত,দেখি আমার পরিচিত মামা বাবুল শাহ সেও।
এই মামাকে ঢাকায় এসে কত খুঁজেছি এখন সে আমার সামনে বন্দী অবস্থায় সে নিজেও চলেছে মামার বাড়ির ভাত খেতে। জীবন সত্যিই নাটকের চেয়েও নাটকীয় মামার সেই কথাটা মনে পড়ে উনি বলেছিলেন “দেখবে তোমার এই পড়াশুনা তোমায় আমার থেকেও অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে”।বুঝলাম দিদি কেন বলেছিলো লোকটা ভালো নয় ।
কিন্তু এই মামার প্রতি আমার সুপ্ত একটা শ্রদ্ধা এখনো আছে,সেই সময় উনি আমায় অর্থ সাহায্য না করলে আমার মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন হতো না, আমি হয়তো একই জায়গায় থাকতাম ।
আল্লাহ রহমত উনি চাননি মামার সাথে দেখা হোক। সে সত্যিই নবীনগরে থাকে একজন কুখ্যাত মানুষ হিসেবে লোকে তারে জানে, আমাকে বলে নাই, ভয়ে কারণ হয়তো আমাকে তারাও আরেকজন কুখ্যাত লোক নবীনগরে আসুক চাইতো না।
তাই হয়তো আল্লাহ রহমত বৃষ্টির জলে আমায় স্নান করিয়েছিলেন,আমার কোনো পাপ থাকলে ধুয়ে যাক ।পোড়া কপাল আবার করে পুড়লো। পরবর্তী জীবন সেই একই পথে, দিন শুরু হোলো।আসছি পরের অধ্যায়ে লালনের কলেজ জীবন সঙ্গে ব্যবসায় ঘাত প্রতিঘাত…….
ক্রমশঃ